(প্রিয়.কম) প্রেম ভেঙে গেলেও অনেক প্রেমিকই প্রেমের স্মৃতি সযত্নে আগলে রাখেন। সময়ে অসময়ে সেসব স্মৃতি হাতড়ে ফেলে আসা অতীতে ফিরে যান তারা। তবে এর বিপরীত চরিত্রের মানুষও আছেন, যারা ব্যর্থ প্রেমের সব স্মৃতি বিসর্জন দিতে চান।  ভিয়েতনামে এমন একটি বাজার আছে যেখানে ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকারা তাদের প্রেমের স্মৃতি সম্বলিত বিভিন্ন চিঠি, সুগন্ধি, মোমবাতি, জামাকাপড় বিক্রি করেন। যেন স্মৃতি বিসর্জন দিয়ে বিয়োগাত্মক প্রেমের বেদনা থেকে মুক্তি পেতে চান তারা। 

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের একটি কটেজে ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকারা প্রতি মাসে একবার বিক্রির উদ্দেশ্যে তাদের প্রেমের স্মৃতিগুলো নিয়ে হাজির হন। পুরোনো স্মৃতি পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে চলার যে ইচ্ছা, এটি তারই প্রতিফলন। 

২৯ বছর বয়সী পুক থুই সাবেক প্রেমিকের কাছ থেকে উপহার পাওয়া পোশাক, ব্যাগ এমনকি টুথপেস্টের টিউব বিক্রি করতে এসেছেন এ বাজারে। তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর আমি খাওয়া দাওয়া করতে পারতাম না। কিন্তুু কিছুদিন পর আমি অতীতকে পেছনে ফেলে রেখে নিজেকে আবার চাঙ্গা করে তুলি।’

হ্যানয়ের বাজারে সাবেক প্রেমিকের চিঠি। ছবি: সংগৃহীত

এ বছর ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়ার পর বাজারটির জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত ভিয়েতনামের তরুণ জনগোষ্ঠির কাছে বাজারটি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকের কাছে বাজারটি আবার নতুন নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি করার একটি মাধ্যমেও পরিণত হয়েছে। 

বাজারটির প্রতিষ্ঠাতা ডিন থাং বলেন, ‘তরুণরা বেশ খোলা মনের হয় এবং দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে তারা তাদের অভিজ্ঞতাগুলো খোলাখুলিভাবে সবার সাথে ভাগাভাগি করতে চায়।’

ব্যক্তিগতভাবে কয়েকটি সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর এমন একটি বাজারের কথা প্রথম থাংয়ের মাথায় আসে। সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর পুরাতন প্রেমের কিছু স্মৃতি তার কাছে থেকে যায়। সাবেক ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া হৃদয় নিংড়ানো চিঠি, জন্মদিনের শুভেচ্ছা কার্ডসহ অন্যান্য সামগ্রী তিনি বিক্রির জন্য প্রদর্শন করেন। তিনি ভাবেন, এসব স্মৃতির জমিয়ে রেখে আজীবন কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয় না। 

পরে তিনি অন্য ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্যও বাজারটি উন্মুক্ত করে দেন। এখন ভিয়েতনামের বাণিজ্যিক রাজধানী হো চি মিন সিটিতে এরকম আরেকটি বাজার চালু করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। 

পুরোনো প্রেমের স্মৃতি বিক্রি করতে ভিড় করেছেন ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকারা। ছবি: সংগৃহীত

তার প্রতিষ্ঠিত এ বাজার ভিয়েতনামের ‘ব্রেক আপ ট্যাবু’ ভেঙে দেবে এমন আশা করেন থাং। কয়েক দশক আগেও ভিয়েতনামে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের হার ছিল অনেক বেশি। কিন্তু দেশটির দ্রুত বর্ধনশীল তরুণ জনগোষ্ঠির কাছে প্রতিনিয়তই পশ্চিমা জীবনযাপন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভিয়েতনামের ৫০ শতাংশ মানুষের বয়স ৩০-এর নিচে। তারা পশ্চিমা জীবনযাপন ও পশ্চিমা ধাঁচের প্রেমে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইন্টারনেটে প্রেম। 

ভিয়েতনামের জাতিসংঘ পপুলেশন ফান্ডের ইয়ুথ প্রোগ্রাম অফিসার বুই মান থিয়েন বলেন, ‘অনেক তরুণ অনলাইনেই বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথে পরিচিত হচ্ছে, অনলাইনেই প্রেম করছে, আবার অনলাইনেই সম্পর্ক ছিন্ন করছে।’

ভিয়েতনামের সরকারের তথ্য বলছে, দেশটির তরুণরা এখন বিয়ের জন্য আগের চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে এবং তরুণদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হারও আগের চেয়ে বেড়েছে। 

বুই মান বলেন, ‘অল্প বয়সে বিয়ে করে আমরা কেউ নিজেদের স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে চাই না। তরুণ বয়সে পরিবারের দায়িত্বও নিতে চাই না। বিয়ের আগেই জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই আমরা।’

প্রিয় সংবাদ/মিজান