আল্লাহর নাম লেখা আরবি ক্যালিগ্রাফি। ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহর পরিচয়

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০১৭, ১৪:২৮
আপডেট: ১৫ মে ২০১৭, ১৪:২৮

(প্রিয়.কম) ‘আল্লাহ’ শব্দটি আরবি। মহান সৃষ্টিকর্তার ‘ইসমে জাত’ বা সত্তাবাচক নাম এটি। আল্লামা তাফতাজানীর বর্ণনা মতে, বিশুদ্ধতর মতানুসারে ‘আল্লাহ’ শব্দটি ঐ চিরন্তন সত্তার সত্তাবাচক নাম যার অস্বিত্ব অব্যশম্ভাবী এবং যিনি সমস্ত প্রশংসনীয় ও উত্তম গুণাবলীর অধিকারী। [শরহে তাহজিব, আল্লামা তাফতাজানী রহ., ২য় খন্ড]

আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাই এ নামের দ্বিবচন বা বহুবচন হয় না। অধিকাংশ আলিমের মতে ‘আল্লাহ’ শব্দটি কোনো বিশেষ ধাতু থেকেও উদ্ভূত নয়। আরবি ভাষায় এমন হুবহু অর্থজ্ঞাপক কোনো প্রতিশব্দ নেই। অন্য কোনো ভাষায় ‘আল্লাহ’ শব্দের যথার্থ কোনো অনুবাদও হয় না। সুতারং খোদা বা ঈশ্বর কোনোটাই আল্লাহর শব্দের সমর্থক পরিচয় বহন করতে পারে না।

মুসলিম আকিদার বিখ্যাত গ্রন্থ অশারহুল আকাইদিন্ নাসাফিয়্যা, আল-আকীদাতুত্ তাহাভিয়্যা ইত্যাদি গ্রন্থসমূহে আল্লাহর পরিচয় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ মহাবিশ্বের অবশ্যই একজন কাদিম তথা অনাদী-অনন্ত সৃষ্টিকর্তা রয়েছে। তিনি সব সময় আছেন এবং থাকবেন। তার অস্তিত্ব সন্দেহাতীত ও অবশ্যম্ভাবী। প্রশংসনীয় সকল গুণাবলী দ্বারা তিনি গুণান্বিত। সব ধরনের দোষত্রুটি হতে তিনি মুক্ত ও পবিত্র। সকল কিছুই তার জ্ঞানের আওতাভুক্ত। সকল সম্ভাব্য বস্তুর উপর তিনি  ক্ষমতাশালী। সকল সৃষ্টি তার ইচ্ছায় আবর্তিত। তিনি সর্বশ্রোত ও সম্যক দ্রষ্টা। তার কোনো উদাহরণ নেই। তার কোনো সমকক্ষ নেই এবং নেই কোনো সহযোগী। তার  অধিকারে এবং বিশ্ব জাহানের শৃঙ্খলা বিধানে কেউ তার শরিক নেই। তিনিই অসুস্থকে সুস্থ করেন, সকল সৃষ্ট বস্তুর রিজিক দেন এবং সব ধরনের অসুবিধা ও কষ্ট দূর করেন একমাত্র তিনিই।

আল্লাহ তাআলা অন্য কোনো সত্তার প্রবিষ্ট ও একীভূত হওয়া থেকে পবিত্র। তিনি দেহ বিশিষ্ট নন এবং কোনো দিক বা স্থানের গন্ডিতে আবন্ধ নন। মুমিনগণ আখিরাতে তার দীদার-সাক্ষাৎ লাভ করবেন। তার কাজ সম্বন্ধে তাকে জবাবদিহি করতে হয় না। তার প্রতিটি কাজই হিকমতপূর্ণ এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন। তিনি ব্যতীত যথার্থ কোনো নির্দেশদাতা নেই এবং নেই কোনো হাকিম বা বিচারকও।

আরশ, কুরসি, লাওহ-কলম, আসমান-জমিন, গাছ-পালা, বৃক্ষলতা- এক কথায় দৃশ্যমান ও অদৃশ্য যতকিছু রয়েছে সবকিছুই তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তিনি চিরঞ্জীব। তিনি স্বঅস্তিত্বে সর্বদা বিরাজমান। এ বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না। স্বভাবগতভাবেই আমরা একথা বুঝতে পরি যে, এ বিশ্ব কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনায় সৃষ্টি হয়নি। বরং এর পিছনের রয়েছে এক মহাজ্ঞানীর সুনিপুণ পরিকল্পনা। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুর অস্বিত্ব দান করেন। এ সত্ত্বেও অজ্ঞতা ও অহমিকার কারণে যুগে যুগে একদল লোক আল্লাহর অস্বিত্বকে অস্বীকার করেছে এবং সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলার ইরশাদ করেন, (তাদেরকে রাসূলগণ বলেছিলেন) আল্লাহ সম্পর্কে কি কোনো সন্দেহ আছে; যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা? (সূরা ইরবাহিম,১৪ : ১০)

সুপরিকল্পিতভাবেই আল্লাহ তাআলা মানবজাতিসহ সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,  পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি আলাকে, তারপর আলাককে পরিণত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপিঞ্জরে, তারপর অস্থিপিঞ্জরকে ঢেকেই দেই গোশত দ্বারা, তারপর একে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে। অতত্রব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতো মহান। (সূরা মুমিনুন, ২৩ : ১৪) এতে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে যে, সর্বশক্তিমান স্রষ্টার ইঙ্গিতেই আমাদের অস্তিত্ব নির্মিত।

এ বিশ্ব আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনার ফসল নয়। এদিকে ইঙ্গিত করে আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তারা কি স্রষ্টা ব্যতীতই সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? নাকি তারা নিজেরা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? (সূরা তূর, ৫২ : ৩৫-৩৬) 

সারকথা হলো, এ মহাবিশ্বের অবশ্যই একজন স্রষ্টা আছেন। তিনিই হলেন আল্লাহ। তার অস্তিত্ব প্রশ্নাতীত। বিশ্ববিখ্যাত কবি আল্লামা শেখ সাদি বলেছিলেন, প্রত্যেক বস্তুর মধ্যেই আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ বিদ্যমান। আর তা এ কথাই প্রমাণ করে যে, তিন এক অদ্বিতীয়।

সম্পাদনা: ফারজানা রিংকী