
ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশে আগামী এপ্রিলে আসছে অ্যামাজন-আলীবাবা
আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:২৯
অ্যামাজন-আলীবাবার লোগো। ছবি: প্রিয়.কম।
(প্রিয়.কম) বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ও আলীবাবা আগামী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এ জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ডাক বিভাগ। আগামী মার্চ মাসের শুরুর দিকে অ্যামাজন ও আলীবাবার সাথে যৌথভাবে কাজ করার জন্য একটি পাইলট প্রোজেক্ট চালু হবে।
এই প্রোজেক্ট সফল হলে আগামী এপ্রিল মাসে অ্যামাজন ও আলীবাবার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করবে বাংলাদেশ সরকার। ডাক বিভাগের পরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে ‘ডাক বিভাগে বাস্তবায়িত ই-কমার্সের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা’ শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, অ্যামাজন ও আলীবাবার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশের ডাক বিভাগ। তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে চাই। এর ফলে ডাক বিভাগের সম্প্রসারণ হবে এবং একই সঙ্গে তাদের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় ২১টি পোস্ট অফিস থেকে ই-কমার্স পণ্য সরবরাহের অর্ডার নেওয়া এবং সেগুলো থেকে বিতরণের সেবা শুরু করে ডাক বিভাগ। এই উদ্যোগের ফলে এখন থেকে অনলাইনে ক্রেতারা তাদের পণ্য ই-কমার্স সাইট থেকে সহজেই গ্রহণ করতে পারবেন। ডাক বিভাগের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দিতে পারব।
এদিকে গত বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আলীবাবার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউসি ওয়েবের আন্তর্জাতিক ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওকেনিইয়ে বলেন, বাংলাদেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়ার হার দেখে এ দেশে ই-কমার্স ব্যবসা প্রসারে আগ্রহী চীনের আলীবাবা গ্রুপ। বর্তমানে এ বিষয়টি আলীবাবা গবেষণা চালাচ্ছে। ওই অনুষ্ঠানে ইউসি ওয়েবের ইমার্জিং মার্কেট বিষয়ক বিপণন ব্যবস্থাপক ক্যাথরিন হং বলেন, বাংলাদেশের বাজারে ইউসি ব্রাউজারকে সূচনা হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশে বাজার সম্ভাবনা যাচাইয়ের পর শিগগিরই আলীবাবা গ্রুপের বিভিন্ন সেবা চালু করা হতে পারে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে কাযর্ক্রম শুরু করেছে আলিবাবা’র ইউসি ব্রাউজার। ওই বছর আগস্টে ইউসি ব্রাউজার ব্যবহারকারীদের নিয়ে দেশে প্রথমবারের মত ইউসার্স মিট-আপ নামে একটি সম্মেলনও করে তারা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ শতাধিক ই-কমার্স সাইট রয়েছে এবং এক হাজারের বেশি উদ্যোক্তা ফেসবুকের মাধ্যমে এই সেবা দিচ্ছেন। বাংলাদেশে অ্যামাজন ও আলীবাবার আগমনকে এ দেশের ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীরা কোন দৃষ্টিতে দেখছেন। উত্তরে দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের একটি আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাসরুর বলছেন, আমাজন বা আলীবাবার মতো কোম্পানিগুলোকে যদি আমরা আমাদের ই-কমার্স মার্কেটে রাজত্ব করতে দেই, তাহলে হয়তো অনেক কাস্টমারই খুশি হবে, কিন্তু ই-কমার্স (বা এফ-কমার্স) শিল্পে নতুন আসা হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তার ব্যবসা নিশ্চিত ভাবেই নিশ্চিন্ন হয়ে পড়বে। এই তরুণ উদ্যোক্তাদের কোমর শক্ত করে দাঁড় হওয়ার আগেই এই জায়ান্টদের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত কতটুকু সুবিবেচনাপ্রসূত তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে।
ফাহিম মাসরুর বলেন, আমাজন বা আলীবাবা এখনো বাংলাদেশে রেজিস্টার হয়নি। তাহলে কীভাবে তারা বাংলাদেশি কাস্টমার থেকে বৈধভাবে টাকা নিতে পারবে? বাংলাদেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ আইন বিদেশে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে অনেক 'স্ট্রিক্ট'। কোনোভাবেই ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়া কোনো বিদেশি কোম্পানিকে টাকা পাঠানোর সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আমাজন বা আলীবাবাকে পেমেন্ট করে, তারপরেও দেশে কোনো পণ্য আনার জন্য কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দরকার পরে। এক্ষেত্রে ডাক বিভাগ কীভাবে সেই কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স করবে? একেক পণ্যের ‘ইম্পোর্ট ডিউটি’ একেক রেট। এই ডিউটি কে দিবে, কিভাবে দিবে? আমার জানা মতে এখনো অনেকেই দেশ থেকে আলী এক্সপ্রেস-এ অর্ডার দেয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড বা পেপাল ব্যবহার করে। পোস্ট অফিস তা ডেলিভারিও দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ইম্পোর্ট ডিউটি চার্জ করে না। ব্যাপারটা পুরোটাই ‘ট্যাক্স ফাঁকি’!
সম্পাদনা: ফকির কামরুল