ছবি: প্রিয়.কম

‘ডেটিং স্পটে’ পরিণত হয়েছে আগ্রাবাদ শিশু পার্ক

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০১৭, ১৯:০২
আপডেট: ২৩ মে ২০১৭, ১৯:০২

(তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শিশু পার্ক প্রেমিক-প্রেমিকাদের পদচারণায় ডেটিং স্পটে পরিণত হয়েছে। কপোত-কপোতিদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে বিব্রত সাধারণ দর্শনার্থী ও শিশুদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের অনেকেই পার্কটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। 

শিশু পার্কটিতে ঢুকলেই চোখে পড়ে যুগলদের। শিশুদের রাইডের মধ্যেও অন্তরঙ্গ সময় কাটান যুগলরা। এক সময় এই পার্কটির সর্বত্র সুনাম থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অযত্ন আর অবহেলায় পার্কের এমন বেহাল দশা। যে লেক দর্শনাথীদের মন কাড়ত সেটিও সময় মতো পরিষ্কার না করায় নোংরা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। লেকের মধ্যে স্থাপন করা পাথরের সাদা পদ্মফুল ও ব্যাঙের প্রতিকৃতিগুলো ধূলা-বালিতে কালো হয়ে আছে। লেকের একপাশে দু’টি নষ্ট বোট ফেলে রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ রাইডই পরিচর্যার অভাবে অকেজো হয়ে গেছে। যেগুলো সচল আছে, সেগুলোরও রঙ উঠে যাচ্ছে। ফলে ক্রমেই কমে যাচ্ছে আগ্রাবাদ শিশু পার্কের দর্শনার্থী সংখ্যা। 

২০ মে শনিবার পার্কটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের আশপাশে দেয়ালে কারুকাজ করা রঙগুলো উঠে গেছে। আগ্রাবাদ শিশু পার্ক লেখা নামটির পর্যন্ত রঙ মুছে গেছে। বিকল হয়ে আছে বেশ কয়েকটি রাইড। আর এ রাইডগুলোতে খোশ গল্পে মেতে উঠেছে জুটিরা। প্রায় সবগুলো রাইডের ভেতরেই একাধিক জুটিকে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। পার্কের একমাত্র কিডস জোনটি তালা মেরে রাখা হয়েছে। শিশুরা এ জোনের সামনে গিয়ে মা-বাবাকে ঢোকার আবদার করেও তালা বন্ধ রাখার কারণে মন খারাপ করে ফিরতে হচ্ছে তাদের। পার্কের পাশের বিশাল মাঠটি অঘোষিতভাবে জুটিদের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর স্থানে পরিণত হয়েছে। বেশ কয়েকটি জুটিকে এ মাঠের বিভিন্ন গাছের কোনে বসে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়। অথচ যারা মাঠের দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের কোনো নজর নেই। তারা নিজেদের মতো করে ঘুরছে আর গল্প করছে।

ছবি: প্রিয়.কম

শিশুপার্কে যুগলদের এমন ‘অশালীন’ মেলামেশার বিষয়ে পার্কে আসা দর্শনার্থী চুন্নু খন্দকার অভিযোগ করেন, ‘বাচ্চা নিয়ে পার্কে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। শিশু পার্কে তরুণ-তরুণীদের এমন মেলামেশায় পার্ক কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা অবাক করেছে আমাকে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার দাবি, আর কোনো অভিভাবক যেন তার শিশুকে নিয়ে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়েন।’

ছেলেকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে আসা অ্যাডভোকেট রোকন আরা হ্যাপি বলেন, ‘বাচ্চাদের অধিকাংশ রাইড অচল হয়ে পড়ে আছে। তা ছাড়া যে কয়টি আছে, তাও বড়দের দখলে। এটা শিশু পার্ক না করে বড়দের পার্ক করলে ভালো হতো।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক দর্শনার্থী পার্ক থেকে বের হয়ে যেতেও দেখা গেছে।

রাইডের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, পার্কের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আগের চাইতে দর্শনার্থী অনেক কমে গেছে। ছুটির দিন কিছু দর্শনার্থী হয়। আর বেশিরভাগ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আসে। তবে এ পার্কে নিয়মের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

পার্কের একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে, ‘এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষেধ’। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ওই সাইনবোর্ডের পাশেই ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। তা ছাড়া গলাকাটা দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে পার্কের ভেতরে অবস্থানরত রেস্টুরেন্টগুলোর বিরুদ্ধে। বাইরের দোকানের চেয়ে দ্বিগুণ দাম নিচ্ছে রেস্টুরেন্টগুলো। দশ টাকার চিপস ১৫ টাকা, পনেরো টাকার পানি ২০ টাকা, ২০ টাকার আইসক্রিম ৩০ টাকা। প্রায় সব পণ্যে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে সাধারণ দর্শনার্থীদের।

পার্কটি সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৪০ টাকা, যার মধ্যে যেকোনো একটি রাইডে চড়া যাবে। 

১৯৯১ সালে আগ্রাবাদের জাম্বুরি মাঠ সংলগ্ন ৮ দশমিক ৮৬ একর জমি সিটি করপোরেশনকে ইজারা দেয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ২০০০ সালে সিসিসির সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তিতে সেখানে শিশু পার্ক বানায় আনন্দমেলা লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যার নামকরণ করা হয় আগ্রাবাদ শিশু পার্ক।

প্রিয় সংবাদ/মেহেদী/শান্ত