কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সালমান খান। ছবি: সংগৃহীত

‘ব্যাডবয়’ সালমানের উদ্ভট সব কীর্তিকলাপ

আশরাফ ইসলাম
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩১
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩১

(প্রিয়.কম) উদ্ভট সব কীর্তিকলাপ করে ‘ব্যাডবয়’ তকমা পেয়েছেন বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী অভিনেতা সালমান খান। গাড়িচাপা দিয়ে মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে বিরল প্রজাতির প্রাণী হত্যা, এমনকি সাবেক প্রেমিকাদের গায়ে হাত তোলাসহ আরও অনেক অঘটনের জন্ম দিয়ে বহুবার মুখরোচক খবরের জোগান দিয়েছেন ৫৩ বছর বয়সী এ তারকা অভিনেতা। বলিউডের এই ‘ভাইজানের’ ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যত আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, আর কোনো তারকাকে নিয়ে হয়েছে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে।

সালমান প্রথম বিতর্কের জন্ম দেন ১৯৯৮ সালে। সে বছরের ১ অক্টোবর গভীর রাতে যোধপুরের কানকানি গ্রামে বিরল প্রজাতির দুটি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেন সালমান। এ জন্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের সময় কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল সালমানকে। যোধপুর কারাগারে অল্প সময়ের জন্য দুবার জেলও খাটতে হয়েছে তাকে। বর্তমানে এই মামলায় জামিনে মুক্ত আছেন তিনি। হরিণ শিকারের পর সালমানের রাইফেল ও রিভলবার জব্দ করা হয়েছিল। হরিণ শিকারের সময় ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর লাইসেন্সের মেয়াদ পার হয়ে গিয়েছিল। পরে অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়। তবে সালমান তার জবানবন্দিতে জানান, তাকে ভুল করে অস্ত্র মামলায় জড়ানো হয়েছে।

সালমান খান। ছবি: প্রতীকী

সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় সালমান খানের জামিন খারিজ হয়ে যেতে পারে এবং এই ব্যাপারে তাকে সতর্ক করেছে জেলা দায়রা আদালত। গত ৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার ছিল মামলার শুনানি। তবে সেদিন জেলা দায়রা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না সালমান। এতেই বিচারক বেশ বিরক্ত হন। বিচারক সাফ জানিয়ে দেন, পরের শুনানির দিনও সালমান উপস্থিত না থাকলে তার জামিন খারিজ হয়ে যেতে পারে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৭ সেপ্টেম্বর।

সালমানের সেই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটি। ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের ভাইজান খ্যাত সালমান খান মদ্যপ অবস্থায় দ্বিতীয় অঘটন ঘটান ২০০২ সালে। সে বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে সালমান তার টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার উঠিয়ে দেন বান্দ্রার ফুটপাতে ঘুমন্ত পাঁচজন মানুষের শরীরের ওপর। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়, এ সময় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলিউডের এই সুপারস্টার। এ সময় নুরুল্লাহ শরীফ নামের এক ব্যক্তি সেখানেই নিহত হন এবং বাকি চারজন গুরুতর আহত হন। এ অভিযোগ সালমান বরাবরই অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তার গাড়ির চালক অশোক সিং।

২০০৫ সালে এই ঘটনায় সালমানের বিচার শুরু হয়। তার প্রতি কিছুটা নমনীয় আচরণ করেছে যেন আদালত। বেপরোয়া ও অসতর্কভাবে গাড়ি চালানোর কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে রায় দেওয়া হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (১) ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা মাত্র দুই বছরের কারাদণ্ড। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে সালমানকে কঠোর সাজা প্রদানের দাবি তোলা হয় মুম্বাই পুলিশের পক্ষ থেকে। পরে মামলাটির বিচার আবারও শুরু হয়। যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (২) ধারায় সালমানের বিচার কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেন মুম্বাই সেশন কোর্টের বিচারক ইউবি হেজিব। এখনো সেই মামলার চূড়ান্ত রায় হয়নি। দোষী সাব্যস্ত হলে ১০ বছরের জেলে হতে পারে সালমান খানের।

এদিকে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার ভয়াবহ হামলায় প্রায় ১৬৪ জন নিহত ও ৩০৮ জন আহত হন। ওই ঘটনার দুই বছর পর ২০১০ সালে পাকিস্তানি একটি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেফাঁস মন্তব্য করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সালমানকে। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষদের লক্ষ্য করে ওই হামলা হওয়ায় তা নিয়ে বেশি মাতামাতি হয়েছে।

সালমান খানের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই তার ভক্তকুলের। একাধিক নারীর সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে বহুবারই খবরের শিরোনাম হয়েছেন বলিউডের প্রভাবশালী এ তারকা অভিনেতা। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ৫৩ বছরে পা রেখেছেন সালমান। জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিলেও এখন পর্যন্ত বলিউডের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর তকমাটা ধরে রেখেছেন তিনি। বারবার বিয়ে করতে চাইলেও ব্যাটে-বলে মেলেনি সালমানের। একের পর এক প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বলিউডে বিরল নজিরই গড়েছেন যেন ভাইজান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া একবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যেখানে বলা হয়েছিল এমন আটজন নারী রয়েছেন যাদের জীবনসঙ্গী করতে চেয়েছিলেন সালমান।

সম্পর্ক থাকা অবস্থায় সালমান ও ঐশ্বরিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন

টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, বলিউডের অভিনেত্রী ও সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ছিল সালমানের তৃতীয় প্রেমিকা। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় ‘হাম দিল দে চুকে সোনম’ ছবিটি। ওই ছবিতেই জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিলেন সালমান-ঐশ্বরিয়া। সঞ্জয় লীলা বানশালী পরিচালিত ছবিটিতে অভিনয় করতে গিয়ে প্রথম দেখাতেই ঐশ্বরিয়ার প্রেমে পড়ে যান সালমান। ‘বিগহার্ট লাভারবয়’ সালমানের প্রেমের ফাঁদে ধরা দিলেও কখনোই জনসমুক্ষে স্বীকার করেননি ঐশ্বরিয়া। কিন্তু ২০০২ সালেই আবার অসংযত আচরণের প্রমাণ দেন সালমান। সে বছর সালমানকে ছেড়ে চলে যান প্রেমিকা ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মাতাল অবস্থায় ঐশ্বরিয়ার গায়ে হাত তুলেছিলেন তিনি।

‘চলতে চলতে’ ছবির সেটে ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করে তাকে চিরদিনের জন্য হারান সালমান। ওই ছবির সেটে ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে অশোভন আচরণ শুরু করলে সালমানকে শান্ত করার চেষ্টা করেন শাহরুখ খান। এতে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে শাহরুখের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু করে দেন সালমান। একসময়ের কাছের বন্ধু সালমানের কাছ থেকে এমন আচরণ পাওয়ার কথা ভাবতেই পারেননি শাহরুখ। মূলত সেদিনই শাহরুখ-সালমান বন্ধুত্বে প্রথম চিড় ধরেছিল। ২০০২ সালের মার্চে সালমানের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন ঐশ্বরিয়া। চলতে চলতে ছবিটির শুরুর দিকে শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া। পরে অবশ্য তার পরিবর্তে অভিনয় করেন রানী মুখার্জি।

সালমানের প্রথম প্রেমিকা সংগীতা। ছবি: সংগৃহীত

সংগীতা বিজলানি

সালমান খানের সর্বপ্রথম প্রেমিকা ছিলেন ১৯৮০ সালের মিস ইন্ডিয়া খেতাব পাওয়া মডেল ও বলিউডের অভিনেত্রী সংগীতা বিজলানি। ওই সময় তাদেরকে সবসময় একসঙ্গেই দেখা যেত। এমনকি সালমান ও সংগীতার বিয়ের দিনক্ষণও চূড়ান্ত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ‘কফি উইথ করণ’ অনুষ্ঠানে সালমান জানিয়েছিলেন, একটা সময়ে সত্যিই বিয়ে করে থিতু হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। বিয়ের সব প্রস্তুতি নেওয়ার পর শেষ মুহূর্তে গিয়ে ভেস্তে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে তার জীবনে।

সালমান ও সোমি। ছবি: সংগৃহীত

সোমি আলী

সংগীতার পর এই ব্যাডবয়ের জীবনে আসেন সোমি আলি। সোমির মা ইরাকি ও বাবা পাকিস্তানি। সোমি থাকতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বলিউডে ক্যারিয়ার গড়তে মুম্বাই পাড়ি জমান সোমি। তার দাবি, মাত্র ১৫ বছর বয়সে সালমানের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। সালমানের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টিকে একদমই মেনে নিতে পারেননি সোমির বাবা। তারপরও সালমানের কাছে নিজেকে সঁপে দেন সোমি। কিন্তু সোমির শিশুসুলভ আচরণে বিরক্ত সালমান তার সঙ্গে প্রেমের ইতি টানেন। কিন্ত খবর রটে, সালমানের অতিরিক্ত মদ্যপান আর বাজে আচরণ সহ্য করতে না পেরেই তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন সোমি।

লাকি সিনেমায় সালমান ও স্নেহা। ছবি: সংগৃহীত

স্নেহা উলাল

ঐশ্বরিয়াকে হারানোর পর সালমান ঠিক ঐশ্বরিয়ার মতোই দেখতে স্নেহা উলালকে বলিউডে নিয়ে আসেন। ২০০৫ সালে মুক্তি পায় ‘লাকি’ ছবিটি। সেই ছবিতে সালমান ও স্নেহা একসঙ্গে অভিনয় করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সী স্নেহার সালমানের সঙ্গে সখ্যের খবর যেমন দ্রুত ছড়িয়েছিল, ঠিক তেমনি দ্রুততার সঙ্গে মিলিয়েও গিয়েছিল।

সালমান ও ক্যাটরিনা। ছবি: সংগৃহীত

ক্যাটরিনা কাইফ

বলিউডে সালমান খান-ক্যাটরিনার প্রেম নিয়ে কম কথা হয়নি। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে মুক্তি পায় সালমান ও ক্যাটরিনা অভিনীত ‘ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া’ ছবিটি। পরের বছর ‘পার্টনার’ ছবিতে সালমান ও গোবিন্দর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান ক্যাটরিনা। এরপর আর ক্যাটরিনাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বলিউডে বহুদিনের গুঞ্জন সুপারস্টার সালমান খানের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছেন ক্যাটরিনা। তবে সালমান-ক্যাটরিনার সেই মধুর সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বিচ্ছেদ হয়ে যায় বলিউডের এই আকাঙ্ক্ষিত জুটির। সালমানকে বাদ দিয়ে রণবীর কাপুরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ক্যাটরিনা। সেই সম্পর্কও টেকেনি। এদিকে সালমান-ক্যাটরিনার বন্ধুত্ব এখনো অটুট রয়েছে। তারা দুজনে প্রায়ই নতুন নতুন সিনেমা জুটিবদ্ধ হয়ে করে যাচ্ছেন।

ক্যাটরিনার পরে সালমানের জীবনে আসে আরও কয়েকজন নারী যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বলিউড অভিনেত্রী জেরিন খান। ২০১০ সালে ‘বীর’ ছবির শুটিং করার সময় তাদের সম্পর্ক হয়। কিন্তু সেটিও বেশি দিন টিকেনি। এরপর সালমানের প্রেমিকার তালিকায় যুক্ত হয় রোমানীয় টিভি তারকা ইলুলিয়া ভেঞ্চুরের নাম। পরে সুইডিশ অভিনেত্রী এলি আব্রামের সঙ্গেও সালমানের সম্পর্কের খবর চারিদিকে শোনা যায়।

এদিকে বলিপাড়ার নতুন খবর হচ্ছে- ক্যাটরিনা সালমানের প্রতি মুখ ফিরে তাকিয়েছেন। এই দুজনের সম্পর্ক আবারও জোড়া লাগার পথে। যদিও এ বিষয়ে এখনো এই দুজনের কেউ প্রকাশ্যে কিছু স্বীকার করেননি। তবে তাদের মধ্যে যে এখন গভীর বন্ধুত্ব সেটি স্পষ্ট।

বিচিত্র রোগে আক্রান্ত সালমান খান

হঠাৎ করে মুখের একদিকে কানের পাশে বৈদ্যুতিক শকের মতো তীব্র ব্যথা হয়, আবার চলেও যায়। আর এই বিচিত্র রোগের নাম ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া। আর এই সমস্যায় ভুগছেন ভাইজান।

২০১৭ সালে ‘টিউবলাইট’-এর নতুন গান রিলিজের অনুষ্ঠানে দুবাই গিয়েছিলেন এই অভিনেতা। সেখানেই এক অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছিলেন নিজের মারাত্মক অসুখের কথা। সালমান জানান, বহু দিন ধরেই ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া নামের এক ধরনের ফেসিয়াল নার্ভ ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। এ রোগের কারণে মুখের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক যন্ত্রণা হয়। এ জন্য দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসাও করিয়েছেন ভাইজান। তবে রোগের জন্য কখনো নিজের অভিনয় জীবনকে অবহেলা করেননি বলেও মন্তব্য করেন।

সালমান খানের সর্বশেষ সিনেমা ‘ভারত’ চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। ‘ভারত’ সিনেমাটি দুই সপ্তাহের মধ্যেই ২০০ কোটির ক্লাবে প্রবেশ করে। ঈদ উপলক্ষে গত ৫ জুন সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। এই সিনেমাতেও তার বিপরীতে ছিলেন ক্যাটরিনা ও দিশা পাটানি।

প্রিয় বিনোদন/রুহুল