কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ধান কাটার কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। ছবি: সংগৃহীত

সব গোল্লায় যাক, আমি এবং আমার সন্তান যেন বাঁচে দুধে-ভাতে

কাকন রেজা
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক
প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০১৯, ০৯:৫৩
আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯, ০৯:৫৩

কত কাজ করতে চাই। কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারি না। অফিসের ডেস্ক এলোমেলো। দুটো ল্যাপটপের মনিটর অন্ধকার। এসিটাও কাজ করছে না। কিন্তু কই গরম লাগছে না তো। লেখার চাপ আছে। লিখতে পারছি কই। সন্তানহারা পিতার পৃথিবী বোধহয় এমনই অগোছালো হয়ে যায়। মাথায় সব জট বেঁধে থাকে।

কত কিছু ঘটে গেল চারিপার্শ্বে। কত টপিকস হাত ছাড়া হয়ে গেল। বিজেপি আবার ভারতের সিংহাসনে। ভারত ক্রমেই রামরাজ্য হয়ে উঠছে। সুগ্রীব সেনারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চারদিক। হুয়াওয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বিবাদ, এটাকে এক ধরনের মেয়েলি ঝগড়াও বলা যায়। চীনের প্রেসিডেন্টের ক্রমেই ‘আমি’ হয়ে উঠার প্রবণতা। ইরানের হঠাৎ বিপদ। তেলের গ্রাহকরা সব চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে আবার বন্দুকধারীর গুলি।

কত টপিকস। আর দেশেত টপিকসের শেষ নেই। আমি নিজেও একটা টপিকস। কৃষকদের দুরাবস্থাতো টপিকসের উপরের টপিক। যেহেতু দেশটার অর্থনীতি এখনো কৃষি নির্ভর। যাও সরকার ধান কিনছে একটা দাম ধরে, কৃষক সেটা থেকেও বঞ্চিত। লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ফরিয়া শ্রেণি। দু’এক জায়গায় যাও কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কেনার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটাও ফটোসেশন পর্যন্ত। ফটোসেশন শেষ, তারপর ‘যেই লাউ, সেই কদু’।

ফটোসেশনের কথায় আসি। এখনকার সবচেয়ে হট ফটোসেশন হচ্ছে, ধানকাটা। আমলারা কাটছেন, কাটছেন বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, উঠতি সমাজসেবী, আপকামিং টাউট সবাই। কাগজে দেখলাম সবুজ কাঁচা ধানও কেটে সাবার করে দিচ্ছেন তারা। কৃষকের প্রতি দরদ দেখাতে গিয়ে কাঁচা-পাকা কোনো কিছুই গণ্য করা হচ্ছে না। তারা কেটে যাচ্ছেন, একেবারে ইঁদুরের মতন দাঁতে কেটে শেষ।

কাছের একজন জানালেন এক কৃষকের কথা। যার ধান কেটে দিয়েছে কথিত দরদিরা। মাঠে নেমে যতটুকু ধান তারা কেটেছে, তার সবই প্রায় মাড়াই অযোগ্য। ধানকাটারও কৌশল রয়েছে, কিন্তু খ্যাতির মোহে, কাগজে ছবি ছাপানোর আকাঙ্ক্ষায় এসব তাদের মাথায় ছিল না। কাটতে হবে, কেটে সাফ করে দিতে হবে। এই করতে গিয়ে কৃষকের যতটুকু বেঁচেছিল তাও সাফ করে দেওয়া হয়েছে। হায়রে ফটোসেশন, হায়রে খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা।

যাক গে, যা হবার হবে, হচ্ছে, আমার কী। আমি ভালো থাকলেই সব ভালো। কথা রয়েছে না, ‘নিজে ভালোতো জগৎ ভালো’। স্বার্থপরের দেশ বলে কথা। নিজের চিন্তা সবাই করে। নিজের ভালোটাই ভালো, এর বাইরে কিছু নেই। রাস্তায় বৃদ্ধ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে, যাক না। সেতো আমার বাবা নয়। হোন্ডায় লিকলিকে দুই ছিনতাইকারী নারীর ব্যাগ টেনে নিচ্ছে। কী দরকার ভাই, নিজের ব্যাগ সামলে যত দ্রুত কেটে পড়ি। ছেলেটা আহত। রাস্তায় পড়ে আছে। নিজের খেয়ে কে বনের মোষ তাড়ায়। নিয়ে যাবেনি কেউ হাসপাতালে, না হলে মরে যাবে। কপালে আছে, কী আর করা। আহারে, কী স্বার্থপরের দেশে বসবাস আমাদের। নতজানু, কোনোক্রমে নিজে বেঁচেবর্তে থাকা ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই মাথায়।

কৃষকরা গোল্লায় যাক। যে বাবা রাস্তায় পড়ে আছে, সে যাক। যে তরুণ খুন হয়েছে, সে গোল্লায় যাক। বাবা-মা’র আহাজারি গোল্লায় যাক। সড়কে মৃত্যু, ট্রেন-বাসের টিকিট গোল্লায় যাক। যানজট, পরিবেশ দুষণ, খকখক কাশি-সব গোল্লায় যাক। কৃষকের ধানের দাম গোল্লায় যাক। আমিতো খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছি। এটাই কম কী, আর সব, সবকিছু গোল্লায় যাক। শুধু আমি ও আমার সন্তান বেঁচে থাকি দুধে-ভাতে। ধিক, এমন বাঁচাকে। ন্যুব্জ, অথর্ব, মৃতদের মতো বেঁচে থাকা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রিয়.কম লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে প্রিয়.কমের সম্পাদকীয় নীতির মিল না-ও থাকতে পারে।]