কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বরেণ্য অভিনেতা ফারুক। ছবি: শামছুল হক রিপন প্রিয়.কম

সিনেমা আমার প্রাণ আর রাজনীতি হৃদয় : ফারুক

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৫১
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৫১

(প্রিয়.কম) সত্তর বছর বয়সে এসে রাজনীতিতে পুরোপুরি থিতু হয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেতা ফারুক। যদিও রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি স্কুলজীবন থেকেই। পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্য। অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। সেই ফারুক পরবর্তী সময়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এ জয়ের মধ্য দিয়ে তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে জানান তিনি। ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ২ এ অবস্থিত ইস্তাম্বুল রেস্টুরেন্টে চলচ্চিত্রের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান সদ্য সংসদ সদস্য হওয়া অভিনেতা ফারুক।

যারা চিত্রনায়ক ফারুককে কাছ থেকে চিনেন ও জানেন তারা জানেন ফারুক প্রায়ই মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে একটি কথা বলেন, তা হলো, ‘আমি তো ভালোবাসার দুনিয়ার মানুষ, ভালোবাসা ছাড়া পৃথিবী নেই, ভালোবাসতে হবে, ভালোবাসা থাকতেই হবে।’

মতবিনিময় সভায় তার এই উক্তির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এবং নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তার কাছে চলচ্চিত্রের মানুষের প্রত্যাশা কয়েক গুণ যে বেড়েছে, তাও জানানো হয়। এই প্রত্যাশার চাপকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাওয়া হলে ফারুক বলেন, ‘রাজধানীর যে কোনো আসনের এমপিকে অনেক সাবধানে পা বাড়াতে হয়। অনেক সাবধানে কথা বলতে হয়। তাদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।’

‘আমি পার্লামেন্টেই গেলাম না এখনো। পার্লামেন্টে যা হয় তার কিছু অংশ আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখি। যেটা সিনেমা দেখার মতো। কিন্তু ভেতরে যারা কাজ করেন, তারা জানেন কতটা কঠিন। সেখানে যাওয়ার পর বিষয়টা বুঝতে পারব। তবে যদি আমি সুযোগ পাই, অবশ্যই বলব।’

তিনি বলতে থাকেন, ‘একটা কথা কি জানো, সন্তানদের অনেক প্রত্যাশা থাকে তার বাবার ওপর। কিন্তু সন্তানদেরও বোঝার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে, বাবার রোজগার কতটুকু আছে। আমি যে এলাকার সংসদ, সেখানকার নাগরিকদের জন্য তো সবার আগে কাজ করতে হবে।’

‘সেজন্যই কিন্তু তারা আমাকে ভোট দিয়েছেন। আমি প্রচারের সময় বলেছিলাম, এই যে নৌকা, সেটা আমার। সেটা তো দাবি থেকেই বলেছি। আর সে দাবির ওপর তাদেরও কিন্তু দাবি আছে। আর আমি কথা দিয়ে কথা রাখিনি এমনটা কখনো হয়নি।’

দেশের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেরও সেবক হতে চান ফারুক। ছবি: শামছুল হক রিপন

এরই ফাঁকে পাঠকদের জানিয়ে রাখি, ১৯৬৬ সালে ফারুক ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং সে সময় করা মামলায় আসামিও হয়েছিলেন তিনি। আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণও করেছেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ২৩ বছর বয়সে ‘জলছবি’ সিনেমা দিয়ে তার অভিনয় জীবনের শুরু। সেই যে পথ চলা, আর থামেননি। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে পেয়েছেন মিয়া ভাই খেতাব।

যদিও নায়ক ফারুক ও রাজনীতিবিদ ফারুকের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। জনপ্রতিনিধি মানেই যে আপামর মানুষের সুখে দুঃখে পাশে থাকা তা যেন তার রাজনৈতিক দর্শনেই লুকিয়ে ছিল। কারণ তিনি দেশের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেরও সেবক হতে চান।

তাই তো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি আদর্শ রাজনীতিবিদের মতো শুনালেন গণমানুষের প্রতি তার দায়িত্বের কথা। কর্তব্যের কথা। আবার এমনও না যে চলচ্চিত্রের মানুষদের তিনি ভুলে যাবেন।

এই ব্যাপারে চলচ্চিত্রের বরেণ্য এ নায়ক বলেন, ‘সিনেমার মানুষ আমার কাছে অনেক আশা করে। কিন্তু আমি সিনেমার মানুষ হিসেবে সংসদে যাইনি। আমি সেখানে গিয়েছি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে। সিনেমাটা আমাকে প্লাস পয়েন্ট দিয়েছে। তা না হলে ২০ দিনের চেষ্টায় এ জায়গাতে আসতে পারে না। তাই বলি সিনেমা আমার কাছে প্রাণ আর রাজনীতি আমার হৃদয়। দুটো নিয়েই আমি বড় ঝামেলায় থাকব।’

‘সিনেমার জন্য আমি কিন্তু পার্লামেন্টে যাইনি, মানে পার্লামেন্ট মেম্বার হইনি। আমাকে দল থেকে মনোনায়ন দিয়েছে, দলের কাজ করার জন্য। আমার প্রথম কাজ হলো দলের কাজ করা। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার পর যদি সময় পাই, তাহলে কিন্তু আমি চলচ্চিত্রের কথা বলবই।’

স্কুলজীবন থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি আর পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্য পাওয়া ফারুক মনে করেন, রাজনীতিবিদের সত্ত্বা এবং অভিনেতার সত্ত্বা কখনো একে অপরকে প্রভাবিত করবে না।

অভিনেতা ফারুক দাবি করেছেন দেশে সুষ্ঠু ও সঠিক ধারার গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। ছবি: শামছুল হক রিপন

সম্প্রতি প্রিয়.কমের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ফারুক বলেছিলেন, ‘বর্তমান রাজনীতি নিয়ে বলতে গেলে বলব সুস্থ রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা উঠে গেছে।’ তার কাছে প্রশ্ন ছিল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তার ভূমিকা কী হবে।

তখন তিনি বলেন, ‘আমি তো এই প্রশ্নটাকেই মানি না। এজন্য মানি না-আমি মনে করি আমাদের দেশে গণতন্ত্র আছে, সুস্থধারার রাজনীতি আছে। আমি জানি দেশে সুষ্ঠু ও সঠিক ধারার গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে।’

একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে ‘বিতর্ক’ সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ে ফেরার প্রসঙ্গেও কথা বলেন চলচ্চিত্রের বরেণ্য এই নায়ক। তিনি জানান, গল্প ও চরিত্র যদি তার মনের মতো হয়, তাহলে ফের অভিনয়ে ফিরতে পারেন।

ফারুক বলেন, ‘আমি যদি ফের স্ক্রিনে ফিরি, তাহলে আমার চাহিদা থাকবে গল্প, ক্যারেকটার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মেশিনারিজের দিকে। আমি কাজ করব, সেটা যদি আমার মনের খোরাক-ই না মেটায়, তা হলে তো আমি সে কাজটা করব না।’

সম্প্রতি তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণের। সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওটার ভবিষ্যত নির্ভর করছে-চলচ্চিত্র পরিবেশনা, প্রদর্শন টাকা ফেরত আমাদের সিস্টেমের ওপর। আমি আমার কষ্টার্জিত পয়সা দিয়ে ছবি বানাব, সে ছবি দর্শক দেখবে না পয়সা দিয়ে, সে ছবি আমি বানাব কেনো?’

‘আমি আমার ছবি যদি সঠিকভাবে দেখাতে না পারি, তাহলে আমি বানাব কেনো? যে ইমেজটা আল্লাহ দিয়েছেন আমি সেখানেই থাকতে চাই। তবে গল্পগুলোর লাইনআপ করা আছে।’

ঢাকা-১৭ আসনে ফারুকের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আন্দালিভ রহমান পার্থ; নির্বাচনের মাঝপথে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিজেপির চেয়ারম্যান পার্থ।

একই আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা থাকলেও নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান তিনি।

প্রিয় বিনোদন/গোরা