কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হারুন রশিদ। ছবি: শামছুল হক রিপন। প্রিয়.কম

খণ্ডকালীন নয় চলচ্চিত্রের পুরোদস্তুর অভিনেতা হতে চান হারুন

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:০৫
আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:০৫

(প্রিয়.কম) সাত বছরের ক্যারিয়ারে অভিনেতা হারুন রশিদ অভিনয় করেছেন নাটক-বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে। ‘মুসাফির’ চলচ্চিত্রে বান্টি ভাই চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। এখন নিজের নাম ছাপিয়ে ‘বান্টি ভাই’ নামেই বেশি পরিচিত এ অভিনেতা। নিজেকে এখন চলচ্চিত্রের পুরোদস্তুর অভিনেতা হিসেবে দেখতে চান তিনি।

১৪ অক্টোবর বিকেলে প্রিয়.কমে এসেছিলেন এ অভিনেতা। সে সময় এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের আলাপে তিনি তার চাকরিজীবনের শুরু, ব্যবসা ও পরে অভিনয়ে যুক্ত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।

হারুন রশিদ জানান, তার জন্ম রাজধানীর কমলাপুরে। শৈশব, কৈশোরসহ জীবনের বড় একটা সময় সেখানেই কেটেছে। মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পর তিনি আর পড়াশোনা করেননি। কারণ পড়াশোনার চেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরিতেই বেশি আনন্দ পেতেন।

এরপর তার বাবা ভাবতে লাগলেন, ‘আমার পোলা যেহেতু এ রকম করতাছে, ও নষ্ট হইয়া যাইব। তাই ওরে একটা কাজে লাগাইয়া দিই।’ যেই কথা সেই কাজ।

তরুণ হারুনকে তখন তার বাবা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেটের একটা ক্যাসেটের দোকানে চাকরি নিয়ে দেন। সেটা নব্বইয়ের প্রথম দিককার কথা। ক্যাসেটের দোকানে চাকরি করেই শুরু তার পেশাজীবন। আর সেখান থেকেই গানের প্রতি তার একটা ভালো লাগা তৈরি হয়ে যায়। এরপর টানা ১০ বছর ওই দোকানে চাকরি করেন তিনি।

জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবসা শুরু করেন হারুন। তিনি বলেন, ‘এরমধ্যে আমি প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা শুরু করি। আর এ কাজ করতে গিয়েই ফাহিম মিউজিকের কর্ণধার মনির হোসেন হাওলাদারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপরই এ প্রতিষ্ঠানে প্রথমে খণ্ডকালীন পরে পূর্ণকালীন কাজ শুরু করি। সেই থেকে এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেই আছি।’

অভিনয়ে আসার বিষয়ে হারুন রশিদ বলেন, ‘আমাদের দোকানে সে সময় বাংলাদেশের নাটক কিংবা সিনেমার অনেক ডিরেক্টরই আসত। সে সুবাদে তাদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। কেউ কেউ তাদের নাটকে আমাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেয়, ছোট ছোট চরিত্রের, ভালো লাগত।’

‘মনের টানে কাজ করতাম। শুরুটা কিন্তু ২০১১ সালে। এরপর দীর্ঘ একটা সময় যাওয়ার পর এ ইন্ডাস্ট্রিটার প্রতি আমার ভালো লাগা তৈরি হয়। আমিও জবের পাশাপাশি অভিনয়টাকে পেশা হিসেবে নিই।’

নিজেকে এখন চলচ্চিত্রের পুরোদস্তুর অভিনেতা হিসেবে দেখতে চান হারুন রশিদ। ছবি: প্রিয়.কম

এ অভিনেতা জানান, অভিনয়ের প্রতি ভালো লাগাটা যখন আরও বাড়তে থাকে, তখন তার চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। এর এক পর্যায়ে ২০১৬ সাল থেকে চলচ্চিত্র নিয়মিত কাজ করার চেষ্টা করছেন তিনি।

২০১১ সালে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান হারুন। অতীত হয়ে যাওয়া সময়গুলো নিয়ে হারুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে টিভি নাটকে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করছি। কিন্তু এখন টেলিভিশনেও খরা যাচ্ছে। এখন টিভিতে যে কাজগুলো হচ্ছে, সেখানে বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, দুটোই ক্যারেকটার। অন্য কোনো ক্যারেকটার রাখে না।’

‘যার কারণে চরিত্রাভিনেতাদের ক্যারেকটারও ডেভলপ হয় না। ক্যারেকটার আর্টিস্ট যারা আছেন, তাদের টাকাটা দিতে নির্মাতাদের বেশ কষ্ট হয়। বিষয়টা অনেকটাই এমন, ফ্রিতে করা গেলে ভালো। অনেকেই ভুক্তভোগী। তবে বেশির ভাগ কথা বলতে চায় না।’

আলাপকালে এ অভিনেতা জানান, ঈদের পর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত তার হিসাব মতে, তিনি বেশ কয়েকজন নির্মাতার কাছে ৬৫ হাজার টাকা পাবেন। এ বিষয়ে তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘অথচ স্টার কাস্টিং যারা, তারা কিন্তু ডিউতে (বাকি) কাজ করে না। আমার ধারণা, তাদের মনে হয়, ‘‘তোদের যে ডাকছি, এটাই বেশি’’।’

‘এখন আমি চাই না, কেউ আমাকে দিয়ে ফ্রি কাজ করাক। আমার তো বাজার মূল্য আছে। তবে কেউ যদি টাকা দিতে না চায়, সমস্যা নাই। আমাকে বলতে হবে, ‘‘হারুন ভাই এ কাজটা আমায় ফ্রি করে দিতে হবে। আমি আপনাকে টাকা দিব না।’’ আমার কাছে যদি সবকিছু পারফেক্ট মনে হয়, আমি টাকা ছাড়াই করব।’

হারুনের এখন ধ্যান-জ্ঞান শুধু চলচ্চিত্রে অভিনয়। তিনি বলেন,‘ফিল্মের প্রতি আকর্ষণটা অনেকটাই বেশি। টিভি নাটকে কাজ করি কিছুটা পেটের দায়ে আর স্ক্রিনে থাকার জন্য।’

‘একজন অ্যাকটর শুধু কথা আর ঘোরাফেরা, দেখার বাইরেও একটা বিষয় থাকে। এই লোকটা স্ক্রিনে নাই, তার মানে অনেকে ভাবে উনি স্ক্রিনে নাই। উনি হারাইয়া গেছে। এ কারণে টেলিভিশনের কাজটা করি। কিন্তু মনটা শুধু ফিল্মের দিকে পড়ে থাকে।’

চলচ্চিত্রের বর্তমান সময়কার চিত্র নিয়ে এ অভিনেতার ভাষ্য, ‘ফিল্মের তো এখন ভাঙাচোরা অবস্থা। আর আমি হয়তো ওভাবে বেশি ফিল্মে কাজ করতে পারছি না কারণ ফিল্মি ঘরানার লোকজন যারা আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের ওভাবে পরিচয় নাই। আমার চারটি ছবি রিলিজ পাইছে। আর দুটি ছবি কমপ্লিট। একটি ‘‘বন্ধন’’, আরেকটি ‘‘দহন’’।’

‘ফিল্মের ডিরেক্টরদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের একটা সার্কেল থাকে। যখন তাদের গল্প তৈরি হয়ে যায়, তখন তারা ভাবে, চেষ্টা করে, ওইসব লোকের দ্বারাই কাজটা করাতে। আমার দুই বছরের জার্নিতে আমি ফিল্মের হইয়া উঠতে পারি নাই, এটা ফিল্মের লোকদের ভাষ্য। তবে আমি মনে করি, আমি ফিল্মের একজন লোক।’

সাত বছরের ক্যারিয়ারে অভিনেতা হারুন রশিদ অভিনয় করেছেন নাটক-বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে। ছবি: প্রিয়.কম

হারুন কমেডি টাইপের ক্যারেকটারগুলোতে অভিনয় করতে চান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যে ক্যারেকটারটা প্লে করব, মানুষকে যেন একটু আনন্দ দেয়। সেটা কমেডি কইরা হোক আর ফাইজলামি, শয়তানি কইরা হোক। আর ভিলেন ক্যারেকটার কইরা হোক।’

‘আমি যে কয়েকটা ছবি করেছি সবগুলো এক রকম না, ভ্যারিয়েশন ছিল। ‘‘মুসাফির’’ ছবিতে আমি কমেডি বেইজ ক্যারেকটার করছি। ওই ক্যারেকটারটা ক্লিক করছে। মানুষজন আমাকে এখন ‘‘বান্টি’’ নামে চেনে। এরপর অনেকেই আমাকে বান্টি বইলাই ডাকে।’

হারুনের মূল কথা, তিনি চান তার অভিনয় দেখে মানুষ হাসবে। তবে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করাটাই তার মূল লক্ষ্য।

এ নিয়ে অভিনেতা বলেন, ‘‘‘বন্ধন’ ছবির কাজটা করে মজা পাইছি, আরাম পাইছি। ভালো লাগছে। এতে আমি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। আরেক ক্যারেকটার করছি। সেটা ‘‘দহন’’ ছবিতে, যেটা পুরোপুরি বিপরীত ক্যারেকটার। এখানে আমি বস্তির একজন দোকানদার। তবে সবচেয়ে মূল কথা, আমি মানুষকে হাসাইতে চাই। আমি কমেডিটা করতে চাই। আমি আমার মতো কইরা মানুষ হাসাইতে চাই।’

‘আমি যে কয়েকজন নির্মাতাকে চিনি, তাদের দেখা হলে বলি আমি ফিল্মে কাজ করতে চাই। যারা অনেক ছবি করছে, বেশ পরিচিত ডিরেক্টর যারা উনাদের কাছে গেলে তারা প্রথমত চিনে না। পরিচয় দেওয়ার পর যখন বলি টেলিভিশনে অনেকদিন ধরে কাজ করতেছি।’

‘আমি অভিনয়টা করতে পারি, উনারা খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। এই কারণে এখন আর এফডিসিতে গিয়ে ডিরেক্টরদের কিংবা আলাদা করে ডিরেক্টরদের বলা হয় না। নিজেকে খুব গিল্টি ফিল হয়।’

দীর্ঘ সময়ের ক্যারিয়ারে হারুন নিজেকে গড়ার চেষ্টা করেছেন নানাভাবে, দৃষ্টিভঙ্গিতেও এসেছে ভিন্নতা। ছবি: প্রিয়.কম

চলচ্চিত্রে অভিনয় করার আগ্রহের বিষয়ে হারুন বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত আমি সুস্থ থাকব, আমি চেষ্টা করব ফিল্মে কাজ করে যাওয়ার। ফিল্মের প্রতি আমার ভালোবাসা কী লেভেলের, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমি জানি আমি এখানে ভালো কিছু করতে পারব, তবে সময় লাগবে।’

দীর্ঘ সময়ের ক্যারিয়ারে হারুন নিজেকে গড়ার চেষ্টা করেছেন নানাভাবে। দৃষ্টিভঙ্গিতেও এসেছে ভিন্নতা। এ নিয়ে তিনি বলেন,‘ছবিতে কাজের ক্ষেত্রে আমি ক্যারেকটারগুলো ভালো করে বোঝার চেষ্টা করি। পাঁচ বছর আগে সিনেমা দেখে যা যা বোঝতাম, এখন তার চাইতে খুঁটিনাটি দিকগুলো ভালো বুঝি। গান আর সিনেমা ছাড়া আমার লাইফ অচল।’

হারুনের অভিনয়ের বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। ইউটিউব আর টিভিই তার শেখার বড় মাধ্যম। থিয়েটার করার ইচ্ছা থাকলেও সময়ের সংকটের কারণে তিনি আর সেখানে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন না।

এ অভিনেতার ভাষ্য, ‘আমার ইচ্ছে হয় থিয়েটারের কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করি। কিন্তু সমস্যা হলো আমি তো জব করি। তারপর অভিনয়ের জন্য আলাদা সময় দিই। সব মিলিয়ে সময় বের করাটা বেশ কষ্ট হয়। আমি অফিস করি ১২ ঘণ্টা, যার কারণে দেখা যায় শুটিং আর অফিসের বাইরের সময়ে গিয়ে সময় পাই না। যার কারণে থিয়েটার ভাবনায় থাকলেও এ নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাই না।’

কথা হয় হারুনের পারিবারিক জীবন নিয়েও। অভিনয়জীবনকে পরিবারের মানুষজন কীভাবে দেখছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এক যুগ ধরে ফাহিম মিউজিকে জব করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত একদিনও আমার ওয়াইফ আমার অফিসে যায় নাই। সে জানে বনানীতে আমার অফিস।’

‘তার আমার কাজ কিংবা অফিস নিয়া কোনো মাথাব্যথা নাই। সে আমাকে খুব সাপোর্ট দেয়। নাহয় এই পথ চলাটা এতটা আনন্দের হতো না।’

‘আমার ওয়াইফ এখন পর্যন্ত সিনেমা হলে গিয়ে একবারই আমার সিনেমা দেখেছে। সেটা ‘মুসাফির’। সে দেখে বলেছে, আপনার অভিনয় ভালোই হইছে। আমার ছেলে-মেয়েরা যখন আমার কাজ দেখে, তারা তখন আনন্দ পায়। এটা আমি বুঝতে পারি। আমারও ভালো লাগে।’

প্রিয় বিনোদন/গোরা