ছবি সংগৃহীত
'সাকা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালে করাচিতে চলে যান'
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৩, ১৩:৪৯
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানে চলে যান এবং ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের করাচিতে সালমান এফ রহমানের বাসায় যান বলে দাবি করেছেন এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য কাইয়ুম রেজা চৌধুরী। একাত্তরের ২৯ মার্চ নিজে গাড়িতে করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ধানমণ্ডি থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিয়ে যান বলেও জানান তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দানকালে এসব দাবি করেন তিনি। সাবেক প্রধান বিচারপতি মাঈনুর রেজা চৌধুরীর ভাই কাইয়ুম রেজা চৌধুরী সাকা চৌধুরীর পক্ষে তৃতীয় সাফাই সাক্ষী। মঙ্গলবার তিনি সাক্ষ্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা শুরু করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। সাকা চৌধুরী তার খালাতো ভাই উল্লেখ করে সাক্ষী আরও জানান, তিনি, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও এই মামলার দ্বিতীয় সাফাই সাক্ষী নিজাম আহমেদ একসঙ্গে নটরডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তারা ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলন এবং উনসত্তরের গণআন্দোলনে অংশ নেন। তারা একাত্তরের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনতে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে ধানমণ্ডিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের বাসায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা আসতেন বলেও দাবি করেন তিনি। কাইয়ুম রেজা চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করলে আমরা তার মুক্তির আন্দোলনে শরিক হই এবং সেই আন্দোলনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ আমরা সকলেই অংশগ্রহণ করি। উনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় মিছিলে আমরা শহীদ আসাদের সঙ্গে ছিলাম। শহীদ আসাদকে যখন গুলি করা হয় তখন আমি, সালমান এফ রহমান ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একটি গাছের পেছনে ছিলাম। নিজাম আহমেদ শহীদ আসাদের দুই ফিট দূরে এবং খায়রুল বাশার রায়ট ভ্যানের ওপরে ছিলেন। ওই আন্দোলনের সময় একদিন যেহেতু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমাদের চেয়ে লম্বা ছিলেন সম্ভবত সেই কারণেই ইপিআর তার পেছনের দিকে লাথি মেরেছিল। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সময় রেসকোর্সে আমাদের সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন বলেও দাবি করেন সাক্ষী। সাক্ষী বলেন, একাত্তরের ২৮ মার্চ দুপুরের পরে আমি হেঁটে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর রোডের বাসায় যাই। আমাকে দেখে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বললো, আমি আগামীকাল করাচি যেতে চাই, আমাকে পরের দিন এয়ারপোর্টে পৌছে দিতে হবে। পরদিন আমি ৩২ নম্বর রোডস্থ আমার বোন ফারাদি খানের বাসা থেকে আমার দুলাভাইয়ের টয়োটা করোনা গাড়ি করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসায় যাই এবং তাকে গাড়িতে তুলে দুপুরে তেঁজগাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দিই। ৮ এপ্রিল সালমান এফ রহমান, নিজাম আহমেদ এবং আমি করাচি যাই এবং সেখানে গিয়ে সালমান এফ রহমানের বাসায় উঠি। আমি করাচি পৌঁছাবার দুইদিন পরে যখন আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য একটি বাড়ি খুঁজতে বেরিয়েছিলাম, তখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সালমান এফ রহমানের বাসায় এসেছিলেন। অবশ্য সে সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে আমার দেখা হয় নাই। ১৯৫৬ সালে কোলকাতায় নিজেদের বাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আতাউর রহমান খানের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয় জানিয়ে সাক্ষ্যে কাইয়ুম রেজা চৌধুরী বলেন, ১৯৫৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর তারা ঢাকায় ফিরে আসেন। ১৯৪৭ দেশ ভাগের আগে কোলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ফজলুল কাদের চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলেও জানান তিনি। জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী কাইয়ুম রেজা চৌধুরী বলেন, আমি জমিদার বংশের ছেলে। আমি সুস্থ শরীরে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমার আপন খালাতো ভাই। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী কখনো বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাকে সমর্থন করেছিলেন কি না তা আমার জানা নাই। এর আগে সাকা চৌধুরী ও তার বন্ধু নিজাম আহমেদ সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন। সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নির্ধারিত ৫ জনের মধ্যে বাকি ২ জন সাক্ষীর তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সালমান এফ রহমান (আহমেদ সালমান ফজলুর রহমান) ও বিচারপতি শামীম হাসনাইন। তবে হাইকোর্টের বিচারপতি হওয়ায় বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে সমন জারি করেননি ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ নূরুল ইসলাম ঘটনা ও জব্দ তালিকার সাক্ষী মিলিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ৪১ জন সাক্ষী। আর ৪ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যুষে গ্রেফতার করা হয় গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানোর মামলায় সাকা চৌধুরীকে। পরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। গত বছরের ৪ এপ্রিল সাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ করা হয়।
- ট্যাগ:
- রাজনীতি