ছবি সংগৃহীত

যে কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন শমসের মবিন চৌধুরী

খোরশেদ আলম
সহ-সম্পাদক, নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৫, ১১:৫২
আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৫, ১১:৫২

ছবি: বিবিসি বাংলা

(প্রিয়.কম) রাজনৈতিক বা অন্য কোনও চাপে নয়, একান্ত শারীরিক অসুস্থতার কারণেই দল ও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন শমসের মবিন চৌধুরী। দল ও রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণার পর গণমাধ্যমকে এসব কথা জানিয়েছেন বিএনপির এই ভাইস-চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী রাজধানীর বনানীতে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ফিরে আসা দরকার।’

বুধবার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি লিখে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই ব্যাপক আলোচনায় আসে তার পদত্যাগের বিষয়টি। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও তার নেই।’

চিঠিতে তিনি লিখেছেন,

মাননীয় চেয়ারপার্সন,

আমার সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করিবেন।

আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলাম। সে কারণে আমাকে বিভিন্ন সময় দেশে বিদেশে নানাবিধ চিকিৎসা নিতে হয়েছে। বর্তমানে আমার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে।

আমার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে আমি অনতি বিলম্বে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

অবসর গ্রহণের প্রেক্ষিতে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সকল পদ থেকেও পদত্যাগ করলাম।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার স্বাস্থ্যগত সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সামনে রেখে দেশ ও জাতীয় কল্যাণে কাজ করার প্রয়াস আমার চিরকাল থাকবে।

আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

ধন্যবাদান্তে,

সমশের এম চৌধুরী, বীর বিক্রম

ঢাকা, বাংলাদেশ।’  

fsgsgs

তবে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে একসঙ্গে দেখতে চান সমশের মবীন। আর সুযোগ পেলে দেশের সেবা করতে চান। এ সময় উঠে আসে বিএনপি-জামায়ত জোট ইস্যু। 

একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ রাজনীতি করতে সমস্যা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলে তো আরো আগেই রাজনীতি ছেড়ে দিতাম।’ দেশে রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা ফিরে আসা দরকার বলেও মনে করেন বিএনপির এই নেতা।

আর ফখরুলকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘মাননীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মহোদয়, আপনি আমার সালাম গ্রহণ করিবেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর প্রেরিত আমার স্বাক্ষরিত একটি পত্র এই পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করিলাম। সংযুক্ত পত্রের বিষয়বস্তু স্ব-ব্যাখ্যায়িত। সংযুক্ত পত্রটি মাননীয় চেয়ারপার্সন এর নিকট প্রেরণ করার জন্য আপনাকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত শমসের মবিন চৌধুরী পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন । যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর চাকরি মেয়াদ শেষে করে ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন শমসের মবিন চৌধুরী। সে সময় চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান তিনি। 

এছাড়া, ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিল হলে শমসের মবিনকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে বিএনপি ও শরিকদের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। পরে আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেয়।

তার পদত্যাগের ঘোষণায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা একে একে বিএনপি ছেড়ে বেরিয়ে আসবে।’ খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শও দেন তিনি।