ছবি সংগৃহীত

মিশুক প্রাণী ডলফিন

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০১৩, ১৫:৪৩
আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০১৩, ১৫:৪৩

জীবজগতের মাঝে আমাদের খুব প্রিয় একটি প্রাণী হল ডলফিন। এর বুদ্ধি আর মিশুক আচরণের ভক্ত আমরা সবাই। কিন্তু ডলফিনদের ব্যাপারে অনেক চমকপ্রদ তথ্যই আমাদের অজানা। ডলফিন হয়ে উঠছে অনেকের কাছে গৃহপালিত আদরের কুকুর বা বেড়ালের সমতুল্য। এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও এই শান্তিপ্রিয় প্রাণীটিকে ব্যাবহারের সম্ভাবনার ওপর চলছে গবেষণা। অবাক হচ্ছেন? আসুন চট করে জেনে নেই ডলফিন সংক্রান্ত কিছু তথ্য।

  • -ডলফিন একটি বুদ্ধিমান প্রাণী। প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে বানরের মত এরাও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে। এমনকি সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক ডলফিন থেকে বাচ্চা ডলফিন জ্ঞান আহরন করতে পারে, ঠিক যেমনটা মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
  • -একটি ডলফিন সাধারনত ২০ বছর বাঁচে। অবশ্য বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এদেরকে ৪৮ বছর পর্যন্ত বাঁচতে দেখা গেছে। এই বয়সসীমা বিভিন্ন প্রজাতির জন্য আলাদা হয়।
  • -ডলফিন একটি সামাজিক প্রাণী। খাবার শিকার করার জন্য এরা সাধারনত ১২টি ডলফিনের একটি দল তৈরি করে। এই দলের মাঝে দেখা যায় অনন্য ঐক্য। একেকটি ডলফিন এমনভাবে খাবার শিকার করে যাতে দলের অন্য সদস্যদের ভাগে কম না পড়ে যায়। এমন একেকটি দলকে “পড” বলা হয়। অনেক বেশি খাবারের সন্ধান পেলে অবশ্য দলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে কয়েক হাজারে রূপান্তরিত হতে পারে। তখন ডলফিনের এই বিরাট দলটাকে “সুপার পড” বলা হয়। এছাড়াও, ডলফিনের পডকে অনেক সময় “স্কুল” বলেও ডাকা হয়।
  • -ডলফিনদের ১০০টা দাঁত আছে! কিন্তু এরা হিংস্র নয়। এই দাঁত তারা ব্যবহার করে শুধুমাত্র মাছ ধরার জন্য, চিবিয়ে খাওয়ার জন্য নয়।
  • -ডলফিনের প্রধান খাদ্য মাছ এবং স্কুইড।
  • -একটা ডলফিন দিনে ৩০ পাউন্ড মাছ খেতে পারে।
  • -তিমিমাছের মতই ডলফিনরাও স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদেরকে মাছ বললে ভুল হবে।
  • -একটা ডলফিন ১৫ মিনিট পর্যন্ত পানির নিচে থাকতে পারে, কিন্তু নিঃশ্বাস নেবার জন্য এদেরকে পানির উপরে আসতে হয়।
  • -বেশিরভাগ ডলফিন প্রজাতি নোনাপানির বাসিন্দা হলেও কিছু কিছু ডলফিন প্রজাতি আছে যারা স্বাদুপানিতে কাটিয়ে দেয় সারা জীবন। ৩৬ প্রজাতির নোনাপানির ডলফিন এবং ৫ প্রজাতির স্বাদুপানির ডলফিন দেখতে পাওয়া যায়।
  • -“কিলার হোয়েল” বলে যে তিমিমাছটিকে আমরা চিনি তা আসলে সবচাইতে বড় প্রজাতির ডলফিন।
  • -ডলফিনরা নিজেদের মাঝে যোগাযোগ করে পানির নিচে প্রতিধ্বনি তৈরি করার মাধ্যমে।
  • -ডলফিনের দৃষ্টিশক্তি পানির উপরে এবং নিচে দুই জায়গাতেই ভালো।
  • -ডলফিনদের শ্রবণক্ষমতা মানুষের থেকে প্রায় ১০ গুন বেশি ভালো।
  • -ডলফিনদের ঘ্রানশক্তি তেমন উন্নত নয়।
  • -ডলফিনরা নিজেদের নাম ব্যাবহার করে যোগাযোগ করতে সক্ষম! গবেষণায় দেখা গেছে, প্রত্যেক ডলফিন বিশেষ এক ধরণের শিষ দিতে সক্ষম যা অন্য যে কোন ডলফিনের থেকে আলাদা। এটি ব্যাবহারের মাধ্যমে ডলফিনরা একে অপরকে “ডাক” দিতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, কণ্ঠের এমন অনন্য কৌশল জীবজগতে শুধুমাত্র তোতাপাখি ছাড়া আর কোন প্রাণীতে দেখা গেল এই প্রথম।
  • -মানুষ এবং ডলফিনের মাঝে সহযোগিতা দেখা যায় প্রাচীনকাল থেকেই। মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম কিছু ডলফিনকে দেখা গেছে মাছ ধরার ক্ষেত্রে জেলেদের সহযোগিতা করতে। এর উল্টোটাও দেখা যায়। অর্থাৎ কিনা মানুষের কাছে সহযোগিতা পাওয়ার উদ্দেশে অনেক ডলফিন ছুটে আসে জেলে অথবা ডুবুরিদের কাছে। এমনটা প্রায়ই দেখা যায়, যে মাছ ধরার জালে পেঁচিয়ে অথবা বঁড়শিতে আটকানোর পর মুক্ত হবার জন্য অনেক ডলফিন মানুষের কাছে এসে পড়ে সাহায্যের আশায়।
  • -ডলফিনদেরকে ব্যবহার করা হয় মনোচিকিৎসা দেওয়ার কাজে। অত্যন্ত মিশুক এবং চঞ্চল এই প্রাণীটি মানসিক প্রতিবন্ধকতা, “ডাউন সিনড্রম” এবং অটিসমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেরে উঠতে সাহায্য করে।
  • -মিলিটারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ডলফিনদেরকে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই দেখছেন। গত ৫০ বছর ধরে পানিতে ডুবে থাকা মাইন খুঁজে বের করার কাজে US Navy ব্যাবহার করেছে ডলফিন এবং অন্যান্য প্রাণীদেরকে। সম্প্রতি অবশ্য US Navy ডলফিনের বদলে রোবট ব্যাবহার করা শুরু করেছে। কিন্তু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ডলফিনদের বুদ্ধিমত্তা কি করে ব্যাবহার করা যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছেই।
  • -ডলফিনদের প্রাকৃতিক বসবাসের এলাকাগুলোতে মানুষের অনধিকার প্রবেশের কারণে ডলফিনদের অস্তিত্ব হয়ে পরছে বিপন্ন। মানুষের হস্তক্ষেপের ফলে কমে আসছে এদের বাসস্থান এবং খাদ্য সংগ্রহের এলাকা, পানি দূষণের ফলে এরা অসুস্থ হয়ে পরছে এমনকি আহত/নিহত হচ্ছে অনেক ডলফিন মাছ ধরার নৌকার সাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে।