
ছবি সংগৃহীত
নবি-নন্দিনী হজরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রা.) : জান্নাতি নারীদের সর্দার, সমগ্র নারী জাতির আদর্শ-তীর্থ
আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪, ০৬:১০
[শুক্রবার ৩ জমাদিউস সানি মোতাবেক ৪ এপ্রিল ২০১৪ । ১১ হিজরি সনের এই দিনে নবি-নন্দিনী হজরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রা.)-এর ইনতিকাল ঘটে। এই দিনটি হজরত ফাতেমার (রা.) ওফাত দিবস। বাংলা ভাষাভাষি মুসলিমদের জন্য এই দিবস উপলক্ষ্যে হজরত ফাতেমার (রা.) জীবনী ভিত্তিক এই রচনা-আয়োজন] ''নবি নন্দিনী ফাতেমা মোদের সতী নারীদের রাণী, যাঁর ত্যাগ সেবা স্নেহ ছিল মরূভূমে কওসর পানি, যাঁর গূণ-গাথা ঘরে ঘরে প্রতি নর-নারী আজো গায় '' -কাজী নজরুল ইসলাম রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর ঔরসে বিবি খাদিজার গর্ভে ষষ্ঠ ও সর্ব কনিষ্ঠা সন্তান হজরত ফাতেমা জোহরা (রা.) নবুয়তের পাঁচ বছর পূর্বে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর ৩৫ বছর বয়সে ৬০৫ সালে মক্কায় মা খাদিজার গর্ভে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফাতেমা জোহরাকে আবু তালেবের পুত্র হজরত আলী (রা.) এর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় হজরত আলীর বয়স ছিল ২১ বছর ৫ মাস এবং হজরত ফাতেমার বয়স ছিল ১৫ বছর ৫ মাস। একমাত্র ইবরাহিম ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর সব কয়জন সন্তানই নবুয়ত লাভের পূর্বে জন্মগ্রহণ হজরত আলী (রা.) একদিন জনৈক ব্যক্তিকে বললেন, আমি তোমাদেরকে রাসূল (সা.) এর সবচেয়ে স্নেহের কন্যা ফাতেমা (রা.) এরর জীবন বৃত্তান্ত বলব- তিনি নিজে আটা পিষতেন যার দরুন তাঁর হাতে দাগ পড়ে গিয়েছিল এবং নিজে নিজেই মশক ভরে পানি আনতেন তাই তার বুকে মশকের রশির দাগ সুস্পষ্ট বিদ্যমান ছিল। আবার নিজেই ঘর ঝাড় দিতেন যে কারণে পরিধেয় কাপড় ময়লাযুক্ত থাকত। রাসূল (সা.) এর কাছে একবার কিছু গোলাম ও বাঁদী আসলে আমি ফাতেমা (রা.) -কে বললাম, তুমি গিয়ে রাসূল (সা.)-এর কাছ থেকে একজন খাদেম নিয়ে আস। তোমার কাজ কর্মে তাহলে কিছুটা সাহায্য হবে। হজরত ফাতেমা (রা.) রাসূল (সা.) -এর খিদমতে হাজির হলেন, তখন সেখানে অনেক লোকজন ছিল (তিনি অতি মাত্রায় লাজুক ছিলেন বিধায়) লোক সম্মুখে কিছু না বলেই ফিরে আসলেন। দ্বিতীয় দিন রাসূল (সা.) স্বয়ং আমাদের ঘরে এসে ইরশাদ করলেন, ফাতেমা তুমি গতকাল কি জন্য আমার কাছে এসেছিলে? তিনি লজ্জায় চুপ রইলে আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাতেমার অবস্থা এমন যে, নিজ হাতে চাক্কী চালানোর কারণে হাতে দাগ পড়ে গেছে। সে নিজেই মশক ভরে পানি আনে, যার দরুন বুকে রশির দাগ পড়ে গেছে। তদুপরি ঘর দুয়ারে ঝাড় দেয়ার কারণে কাপড়-চোপড় ময়লা থাকে। তাই গতকাল বলেছিলাম আপনার খিদমতে গিয়ে একজন খাদেম আনার জন্য। অন্য বর্ণনায় রয়েছে - ফাতেমা (রা.) বলেছিলেন, আব্বাজান আমার আর আলীর জন্য মেষের চামড়ার একটি মাত্র বিছানা, আমরা রাত্রি বেলায় এটা বিছিয়ে শয়ন করি আর দিনের বেলায় এরই মধ্যেউটের বকরীকে খাওয়াতে হয়। একথা শুনে রাসূল (সা.) বলেলেন- ফাতেমা! ধৈর্য্য ধারণ কর। হজরত মূসা (আ.) ও তাঁর স্ত্রীর কাছে দশ বছর যাবত্ একটি মাত্র বিছানা ছিল। মূলতঃ তা হজরত মূসা (আ.) এর জুব্বা ছিল। রাত্রি বেলায় এরই মধ্যে শয়ন করতেন। অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন, ফাতেমা আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর হুকুম আহকাম পালন কর, আর ঘরের কাজ নিজ হাতেই সম্পন্ন করতে থাক আর রাতে যখন শোয়ার জন্য বিছানায় যাবে তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ , ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়ে শয়ন করবে। মনে রাখবে এরুপ করা খাদেম হতে অধিক উত্তম। হজরত ফাতেমা (রা.) আরজ করলেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর রাজী আছি। (আবু দাউদ) হজরত ফাতেমা (রা.) এর একথাটির অর্থ হল আমার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা ব্যবস্থা করেছেন আমি তাতেই সন্তুষ্ট। এটাই ছিল শেষ নবি (সা.) এর স্নেহের কন্যার সংসার জীবন। আর আজকাল আমরা একটু স্বচ্ছল হয়ে গেলেই সংসারের কাজ কর্মতো দূরের কথা, ব্যক্তিগত কাজ কর্মও আমাদের দ্বারা করা সম্ভব হয়না। মহানবি (সা.) একদিন সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আল্লাহর আদেশে আমি ফাতেমার সাথে আলীর বিয়ে দিচ্ছি এবং তাদের বিয়ের মোহরানা বাবত ধার্য করেছি চারশ মিসকাল রৌপ্য। হজরত আলীর তরফ হতে বিবাহের প্রস্তাব আসার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ডেকে জিজ্ঞস করলেন- মোহরানা আদায় করার মতো কোন কিছু তার আছে কি? হজরত আলী উত্তর করলেন- একটি মাত্র ঘোড়া ও একটি বর্ম (যুদ্ধের জন্য ব্যবহূত লোহার পোশাক) রয়েছে। তুমি বর্মটি বিক্রয় করে মোহরানার খরচ সংগ্রহ কর। হজরত আলী বর্মটি ৪৮০ দিরহামের বিনিময়ে হজরত উসমানের নিকট বিক্রয় করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) অর্থ দিয়ে হজরত বেলালকে বাজারে পাঠালেন যেন কিছু সুগন্ধি কিনে আনা হয়। বেলাল সুগন্ধি নিয়ে আসলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আলীর সাথে ফাতেমাকে অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে বিয়ে দিলেন। কন্যা বিদায়ের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি খাটিয়া, বিছানা, একটি আটা পিষার চাক্কি এবং পানি তোলার একটি মশক উপঢৌকন দিয়েছিলেন। শেষোক্ত জিনিস দুটি মা ফাতেমার মৃতু্য পর্যন্ত তাঁর সাথে ছিল।বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত হজরত আলীর কোন বাড়ি-ঘর ছিল না। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সংসারেই থাকতেন। বিবাহের পর মা ফাতেমাকে নিয়ে বাস করার জন্য যখন বাড়ির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল, তখন হারেস বিন নো'মান আনসারী তাদের বাস করার মতো একটি বাড়ি দিলেন। হজরত ফাতেমাকে নিয়ে হজরত আলী সেই বাড়িতে উঠে আসলেন এবং বসবাস করতে লাগলেন।হজরত আলীর ঔরসে মা ফাতেমার পাঁচজন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে যেসকল দুঃখ-কষ্ট নবিজি ভোগ করেছেন সে সময়ে তাঁর সাথী ছিলেন হজরত ফাতেমা।ইন্তেকালের সময় মা খাদিজা (রা.) প্রচুর ধন সম্পদ রেখে যান। সে সম্পদের কোন প্রভাব বালিকা ফাতেমার উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে নি। মহীয়সী মায়ের মতো তিনিও সকল ধন সম্পদ ইসলাম প্রচারের জন্যে পিতার হাতে তুলে দেন।ফাতেমা মহানবি (সা.) -এর কন্যা হয়েও স্নেহময়ী মায়ের মতো মহানবিকে ভালোবাসতেন বলেই তাঁর উপাধি হয়েছিল উম্মে আবিহা। হজরত ফাতেমা পৃথিবী ও পরকালের নারী কুলের নেত্রী এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে তিনিই সর্বাগ্রে জান্নাতে প্রবেশ করবেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। “চারজন নারী বিশ্বের নারীদের সর্দার, ইমরানের কন্যা মারইয়াম (আ.) [হজরত ঈসা (আ.) এর মাতা], মুযাহিমের কন্যা আসিয়া (আ.) [ফেরাউনের স্ত্রী], খোওয়ালাদের কন্যা খাদিজা (রা.) [মহানবি ( সা.) এর স্ত্রী] এবং মুহাম্মাদ (সা.)-এর কন্যা ফাতেমা (রা.), যিনি হচ্ছেন হচ্ছেন এদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট। মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনের অন্তিম মুহূর্তে হজরত ফাতেমা (আ.) প্রচন্ড ক্রন্দন করছিলেন। মহানবি (সা.) তাঁকে নিজের কাছে ডেকে কিছু বললেন। ঐ কথা শোনার পর হজরত জোহরা (আ.) এর ক্রন্দন আরো তীব্রতা পেল। অতঃপর তিনি (সা.) তাকে পূনরায় কিছু বললেন, এতে ফাতেমা (রা.) মুচকি হাসলেন। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রথমে আমাকে বললেন, ‘এ ব্যাথাতেই আমার মৃত্যু হবে’। তার মুচকি হাসির কারণ জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, তিনি (সা.) বলেছিলেন, ‘আমার আহলে বাইতের মধ্য হতে তুমিই হচ্ছো প্রথম ব্যক্তি যে আমার সাথে মিলিত হবে’। হজরত ফাতেমা (রা.) ছিলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাধিক প্রিয়তমা, গভীর স্নেহের পাত্রী এবং তার মনের শান্তি। তার মনের চাহিদার প্রতি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক লক্ষ্য রাখতেন এবং তার প্রয়োজন মিটাতে এগিয়ে আসতেন। বুখারী এবং মুসলিম শরীফের হাদিসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত ফাতেমাকে বলেন, ‘হে ফাতেমা! তুমি সন্তুষ্ট থাক, কেননা তুমি সব মুমিন নারীদের নয় বরং সব নারীর সর্দার।’ফাতেমা আমার দেহের অংশ। যারা তাকে রাগান্বিত করবে (প্রকৃতপক্ষে) তারা আমাকে রাগান্বিত করেছে। হজরত ফাতেমা (সা.) ‘র মাধ্যমে রাসূলে পাক (সা.)’র বংশধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে নির্মূল হয়ে গেছে আবু লাহাব ও আবু জাহেলদের বংশধর। একজন পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ হিসেবে হজরত ফাতেমা (রা.) এটা প্রমাণ করেছেন যে, পরিপূর্ণতার শিখরে ওঠার জন্য নারী হওয়া বা পুরুষ হওয়া জরুরী কোনো শর্ত নয়। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন এমন এক যুগে যখন আরবরা নারীকে মনে করতো কেবল ভোগের সামগ্রী এবং জাত্যাভিমানী আরবদের ঘরে কণ্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে তারা অমর্যাদার ভয়ে কণ্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত বা গোপনে মেরে ফেলতো। কিন্তু মহান আল্লাহ তার সর্বশেষ রাসূল ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের ঘরে একজন কন্যা সন্তান পাঠিয়ে নারী জাতির জন্য অশেষ সম্মান ও মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরীব-দূঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হজরত ফাতেমা (রা.)’র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। নবি-নন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূল (সা.)-এর চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কোরান তেলাওয়াত। হাদিসে বর্ণিত আছে- নবি করিম ( সা.) কোথাও যাবার সময় কন্যা ফাতেমার কাছ থেকে সকলের শেষে বিদায় নিতেন এবং ফিরে এসে প্রথমেই ফাতেমার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। ফাতেমা (রা.) -এর প্রতি নবিজির হৃদয় এত স্নেহসিক্ত ছিল; কন্যার অদর্শনে তিনি একটি দিনও সহ্য করতে পারতেননা । তাই তিনি জামাতা হজরত আলীর (রা.) বাড়ীতে গমন করতেন।কিন্ত তাহার মনে খুবই আশা ছিল যদি জামাতার বাড়ীখানা তাহার গৃহের পাশে হতো! কিন্ত তাহার গৃহের কাছে কোন গৃহ অবশিষ্ট ছিলনা। তবুও বাড়ী ওয়ালা 'হারেজ' যখন নবিজির (সা.) মনের কথা জানতে পারলেন তখন তিনি পুরাতন এক ঘরের ভাড়াটিয়াকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে হজরত আলী ও ফাতেমাকে ( রা.) ভাড়া দিলেন । এই গৃহখানা নবিজির গৃহের কাছেই ছিল। অভাব অনটনকে নিত্য সঙ্গী করেই হজরত আলী ও ফাতেমার (রা.) সংসার চলত। হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত আলী (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে একই পরিবারভুক্ত ছিলেন। হিজরতের পর তার মা'কে নিয়ে আলী (রা.) সামান্য যাহা উপার্জন করতেন তাতে মা-ছেলের কোন রকম দিন চলে যেতো । কিন্ত বিয়ের পর সংসারে বড়ই অভাব দেখা দিল। সারা দিন পরিশ্রমের পর যা কিছু জোগাড় করতেন তা দিয়েই সকলের খোরপোষের ব্যবস্থা করতেন।একদিন এমনও হয়ে ছিল যে সারা দিন ঘুরে ঘুড়েও কোথাও কাজের সন্ধান পেলেননা।অথচ ঘরে অল্প পরিমাণ খাবারও মজুদ নেই।অবশেষে রাত্রবেলা একটি কাজ জোটালেন। গভীর রাতে কিছু জিনিস-পত্র নিয়ে বাড়ী ফিরলেন। ফাতেমা (রা.) অধির অপেক্ষায় স্বামীর জন্য দরজার সামনে বসে আছেন। তিনি নিকটে এসে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত স্বামীর কপালের ঘাম মুছে দিয়ে শোবার ব্যবস্থা করে দিলেন।পরে খাওয়া-দাওয়া তৈরী করে স্বামীকে খাওয়ালেন, নিজেও খেলেন। এমতবস্থায় ভোরের আলো দরজা ভেদ করে গৃহে প্রবেশ করল। হজরত আলী (রা.) দুঃখ করে বলতেন '' হে আল্লাহ আমাকে কষ্ট দাও অসুবিদা নেই কিন্ত নবি দুলালী ফাতেমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছো ''? একবার হজরত ফাতেমার অসুস্থতার খবর শোনে নবিজি (সা.) দেখতে আসলেন । ঘরের ভিতর থেকে ফাতেমা বললেন '' বাবা ! আমার দেহে একখানা চাদর ছাড়া অন্য কোন বস্ত্র নেই '' । কন্যার কথা শোনে নবিজি তাহার মাথার পাগড়ীখানা গৃহের ভিতর ছুঁড়ে মারলেন এবং বললেন ''মা ! চাদরখানা পরিধান করে পাগড়ী দিয়ে মাথা ও দেহ আবৃত কর । অতঃপর নবিজি (সা.) গৃহে প্রবেশ করলেন। একবার ঈদের সময় মদীনার ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দের ধুম পড়ে গেল । কিন্ত আলী ও ফাতেমার (রা.) গৃহে ঈদের কোন আনন্দ দেখা গেলনা । হজরত আলী (রা.) সকালেই কাজে চলে গেছেন এবং ফাতেমা (রা.) গৃহের কাজে ব্যাস্ত । হঠাৎ তাঁহার শিশূ পুত্রদয় ইমাম হাসান-হোসাইন (রা.) বাহির থেকে এসে নতুন জামা-কাপড়ের আবদার করতে লাগলেন । মা ফাতেমার মুখ থেকে ফসকে বেড়িয়ে গেল ''বাবারা তোমাদের জামা এখনও তৈরী হয়নি, তৈরী হয়ে গেলে লোক এসে দিয়ে যাবে- এখন খেলা করতে যাও '' । এর পর পর ফাতেমা চিন্তায় পড়ে গেলে যে , ছেলেরা যখন ফিরে আসবে তখন তাঁদের কাছে মিত্যাবাদি হিসাবে চিহ্নিত হবেন । তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলেন , ''হে আল্লাহ তুমি তাদের অন্তর থেকে জামার কথা ভুলিয়ে দাও '' । এদিকে হাসান-হোসাইন মহা খুশী হয়ে একটা কাপড়ের বেগ হাতে নিয়ে মা'য়ের কাছে এসে বলতে লাগলেন মা ! একজন সুদর্শন লোক এই কাপড় গুলো দিয়ে গেছেন । ফাতেমা (রা.) এই মূল্যবান কাপড় দেখে বুঝতে পারলেন যে, আল্লাহ তায়ালা হজরত জিব্রঈল (আ.) -এর মারফতে এই গুলো পাঠিয়েছেন। আল্লাহর এই পবিত্র দান তিনি খুশী মনে পুত্রদয়কে পরিয়ে দিলেন । হজরত আলী ও ফাতেমা (রা.) এর সংসারে পার্থিক সুখ সমপদ ঐশ্চর্য এবং ভোগ বিলাসের অভাব থাকলেও পারসপরিক প্রেম -ভালবাসার অভাব ছিলনা । স্বামী-স্ত্রীর মাঝে গভীর ভালবাসার জন্য তাহাদের সংসারটি স্বর্গ সুখে পরিণত হয়ে ছিল । তাহাদের মধ্যে কখনও যে মান অভিমান বা মনোমালিন্য হয়নি তা নয় । কেননা তাহারাও তো মানুষ । মানুষের মাঝেও ভুল ভ্রান্তি ইত্যাদি হতে পারে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার । ফাতেমা (রা.)ও আমাদের মতো মানুষ ছিলেন। তারও স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্যজীবনে মান-অভিমান হত। আবু হাজিম (রহ.) বলেন, এক ব্যক্তি সাহল ইবনে সাদ (রা.) এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, মদিনার অমুক আমির মিম্বরের কাছে বসে আলী (রা.) সম্পর্কে অপ্রিয় কথা বলেছে। তিনি বললেন, সে কী বলেছে? সে বলল, সে তাকে আবু তুরাব (রা.) বলে উল্লেখ করেছে। সাহল (রা.) (একথা শুনে) হেসে ফেলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, তাঁর এ নাম রাসূলুল্লাহ (সা.)ই রেখেছিলেন। এ নাম অপেক্ষা তাঁর কাছে অধিক প্রিয় আর কোনো নাম ছিল না। আমি (নাম রাখার) ঘটনাটি জানার জন্য সাহল (রা.) এর কাছে আগ্রহ প্রকাশ করলাম। (বোখারি : ৩৭০৩) । হজরত আলী (রা.) হজরত ফাতেমার (রা.) মতের বিরূদ্ধে একটা কাজ করে ফেলেছিলেন । তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে হজরত ফাতেমা ( রা.) বাবার বাড়ী চলে গেলেন । কিছুক্ষন পর হজরত আলীও এসে উপস্থিৎ। দুইজনই নবিজির কাছে নিজেদের অভিযোগ পেশ করলেন । নবিজি দুইজনের কথা শোনে ফাতেমাকে (রা.) বললেন ,'' মা' ! তোমার আরও ধৈর্য অবলম্বন করা উচিত, আলীকে তোমার সকল কথা মানতে হবে এটা কেমন কথা ''? ফাতেমা (রা.) পিতার কথা শোনে ভীষন লজ্জিত হয়ে ঘরে ফিরে আসলেন । হজরত আলী (রা.) স্ত্রীকে তাঁর পিতার সামনে এরকম লজ্জিত হতে দেখে অনুতপ্ত হয়ে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, আর কোন দিন তাহার মতের বিরূদ্ধে কোন কাজ করবেননা । হজরত ফাতেমার জোহরার জীবনজুড়ে ছিলো সত্যের পথে দৃঢ়তা ও সংগ্রাম। এজন্য ওবীজীর ওফাতের পর ফাতেমা (সা.) ইসলামের শিক্ষাগুলো রক্ষা করা এবং ইসলামী সমাজের বিচ্যুতির বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন। এই সতর্ক করার পেছনে তাঁর কোনো খ্যাতি, মর্যাদা আর সম্পদের লোভ ছিল না, বরং ইসলামকে বিদয়াত আর বিচ্যুতি থেকে বিশেষ করে কোরানের আয়াত বা ঐশী বিধি-বিধানগুলোকে বিকৃতি থেকে রক্ষা করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। দৈহিক কষ্ট, মানসিক চাপ ইত্যাদি সত্ত্বেও তিনি ধাপে ধাপে তাঁর লক্ষ্য বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি বর্তমান বিশ্বের নারীদের জন্যে আদর্শস্থানীয় তাহলো সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তো বটেই এমনকি মূল্যবোধ রক্ষার্থে সংগ্রাম করার ক্ষেত্রেও তৎপর ভূমিকা রাখা নারীর দায়িত্ব। আজও যদি আমরা হজরত ফাতেমার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নারী মুক্তির জন্য চেষ্টা করি তাহলে অনেকাংশে সফলতা দেখতে পাব। আজকাল যারা পশ্চিমা নারীদের অনুসরণকেই নারীর মুক্তি ও প্রগতির পথ বলে মনে করছেন তারাও যদি নিজ জীবনে হজরত ফাতেমা ( সা.'র আদর্শ অনুসরণের চেষ্টা করতেন এবং তার সাদা-সিধে ও অনাড়ম্বর জীবন থেকে শিক্ষা নিতেন তাহলে আজকের যুগে তালাক প্রবণতা বৃদ্ধিসহ যেসব জটিল পারিবারিক সমস্যা দেখা যায় সেগুলোর সমাধান সহজ হয়ে যেত। বিশ্বখ্যাত মুসলিম ও অমুসলিম চিন্তাবিদরা হজরত ফাতেমা (রা.) সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন।হজরত ফাতেমা জোহরা (রা.) সম্পর্কে প্রদত্ত সেসব মন্তব্যগুলো এখানে একত্রিত করা হলো- এক. বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ ‘সহিহ আল বুখারি’র রচয়িতা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারী নিজের প্রসিদ্ধ বুখারী গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ১৭তম পৃষ্ঠায় বাবু ফাদ্বায়েলুস সাহাবা’তে (১৩৭৬ ফার্সী/ ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে মক্কায় প্রকাশিত) নিজস্ব সনদে বর্ণনা করেছে যে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘ফাতেমা আমার দেহের অংশ। যারা তাকে রাগান্বিত করবে (প্রকৃতপক্ষে) তারা আমাকে রাগান্বিত করেছে’। ৩য় খণ্ডের ১৪৬ পৃষ্ঠায় ও ৪র্থ খণ্ডের ২০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন যে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ফাতেমা আমার দেহের অংশ, যে তাকে রাগান্বিত করবে (প্রকৃত অর্থে) সে আমাকে রাগান্বিত করেছে। ৫ম খণ্ডের ২০তম পৃষ্ঠায় বলেছেন, ‘ফাতেমা বেহেশতের নারীদের সর্দার’। দুই. বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ ‘সুনানে ইবনে দাউদ’ এর রচয়িতা আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে তিয়ালসী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেছেন,হজরত আলী ইবনে আবি তালিব বলেছেন, তোমরা কি চাও না যে, নিজের ও নবি কন্যা ফাতেমা সম্পর্কে তোমাদেরকে অবগত করি? তিনি মহানবি (সা.)-এর সবচেয়ে নিকটতম হওয়া সত্ত্বেও আমার বাড়ীতে যাতা পিষতে পিষতে তার হাতে ক্ষতের সৃষ্টি হত, পানি বহনের কারণে তার কাঁধে ব্যথা হত,ঝাড়ু দান ও গৃহ পরিচ্ছন্ন করার কারণে তার পোষাক পুরোনো হয়ে যেত। শুনেছি যে, মহানবি (সা.)-এর নিকট কয়েকজন গৃহ পরিচারিকা ছিলেন (দাসী)। ফাতেমা সাহায্য গ্রহণের আশায় বাবার কাছে গেলেন। যাতে ঐ গৃহ পরিচারিকাদের একজনকে বাড়ীর কাজের জন্য তাঁর (সা.) নিকট চাইতে পারেন। কিন্তু তিনি বাবার নিকট উপস্থিত হয়ে সেথায় উপস্থিত যুবকদেরকে দেখে অতিমাত্রায় লজ্জিত হয়ে নিজের আবেদন প্রকাশ করা হতে বিরত থাকলেন এবং মনের কথা না বলেই তিনি ফিরে আসলেন। [সুনানে আবি দাউদ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৪] তিন. বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ ‘সহিহ তিরমিযিতি গ্রন্থের প্রণেতা এ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আয়েশাকে জিজ্ঞেস করা হল, লোকদের মধ্যে কে আল্লাহর রাসূলের সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন, ফাতেমা। জিজ্ঞেস করা হল, পুরুষদের মধ্যে? তিনি বললেন, তার স্বামী আলী। [মাহমুদ শাহাবী রচিত ‘ইসলাম ওয়াশ শিয়া’ গ্রন্থ হতে সংকলিত] চার. বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ ‘সহিহ মুসলিম’ এর রচয়িতা মুসলিম বিন হাজ্জাজ কুশাইরী (মৃত্যুকাল ২৬১ হিজরী) স্বীয় প্রসিদ্ধ সহিহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘ফাতেমা মহানবি (সা.) এর দেহের অংশ। যে তাকে কষ্ট দেয় সে মহানবিকে কষ্ট দিয়েছে এবং যে তাকে খুশী করে সে মহানবিকে খুশী করলো। এবার দেখি হজরত ফাতেমা (রা.) সম্পর্কে অমুসলিম মণীষীরা কে কি লিখেছেন, এক. খ্রিষ্টান চিন্তাবিদ সুলাইমান কাত্তানী’র দৃষ্টিতে নারীকূলের শিরোমনি হজরত ফাতেমা। হজরত ফাতেমা জোহরা (আ.) এর ব্যক্তিত্বের উপর প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় । সুলাইমান কাত্তানী ‘ফাতেমাতুয জোহরা, ভিতরুন ফি গামাদিন’ শীর্ষক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে প্রথমস্থান অধিকার করে প্রথম পুরস্কারটি জিতে নেন। যদিও প্রথম অবস্থায় এ ধারণা করা হচ্ছিল যে, যেহেতু লেখক একজন অমুসলিম তাই তাকে উত্সাহিত করার উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তার লেখা অধ্যয়নের পর স্পষ্ট হল যে, সে এ পুরস্কারের যোগ্য ছিল। কেননা তিনি একজন অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম লেখকদের সাথে একজন ইসলামি ব্যক্তিত্বের জীবনী ও ব্যক্তিত্বের উপর গ্রন্থ রচনা পূর্বক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার ঐ বইসমূহ হতে এও স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্য বিষয়টিতে পৌঁছুতে পেরেছেন। জনাব সুলাইমনা কাত্তানী তার গ্রন্থের শুরুতে লিখেছেন, ‘ফাতেমা জোহরা (আ.) এর মর্যাদা এর উর্দ্ধে যে, ইতিহাসের প্রমাণ এবং রেওয়ায়েত তার ব্যক্তিত্বের প্রতি ইশারা করবে, এতটাই সম্মানিত যে, জীবনী ভিত্তিক লেখা গ্রন্থসমূহ তার পরিচয় তুলে ধরবে। ফাতেমা জোহরা ( রা.) এর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তিনি মুহাম্মাদ ( সা.) এর কন্যা ও আলী (রা.) এর স্ত্রী, হাসান ও হুসাইন (রা.) এর মাতা এবং বিশ্বের নারীদের সর্দার’। (ফাতেমা জোহরা ভিতরুন ফি গামাদিন, ভূমিকা, পৃষ্ঠা ৩) তিনি তার গ্রন্থের শেষাংশে লিখেছেন, ফাতেমা, হে মোস্তফা’র কন্যা! হে সর্বোচ্চ উজ্বল চেহারার অধিকারী যাকে পৃথিবী নিজের কাঁধে স্থান দিয়েছে, তুমি শুধুমাত্র দুইবার মুচকি হেসেছো; একবার নিজের বাবার সম্মুখে যখন তিনি মৃত্যুশয্যায়ে ছিলেন এবং তোমাকে তার সাথে অতি দ্রুত সাক্ষাতের সুসংবাদ দিলেন। আর দ্বিতীয়বার তোমার মুচকি হাসিটি তোমার সমগ্র ঠোঁটে ছড়িয়ে পড়েছিল যখন ছিল জীবনের শেষ মুহূর্তে তুমি তোমার শেষ নিঃশ্বাসটি ছেড়ে দিলে... তুমি সর্বদা ভালাবাসার সাথে জীবন যাপন করেছো, তুমি পবিত্রতার সাথে জীবন-যাপন করেছো...তুমি পৃথিবীকে উপহাসব্যাঞ্জক মুচকি হাসির সাথে পরিত্যাগ করে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে রওনা হয়েছো। হে নবি কন্য! হে আলী’র স্ত্রী! হে হাসান ও হোসাইনের মাতা, হে সকল যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী’।(প্রাগুক্ত গ্রন্থের অনুবাদ, পৃ. ২) দুই. ফরাসী গবেষক লুঈ মাসিনিউনের দৃষ্টিতে নারীকূলের শিরোমনি হজরত ফাতেমা। প্রখ্যাত ফরাসী প্রাচ্যবিদ ও গবেষক লুঈ মাসিনিউন, যিনি নিজের জীবনের বেশ কয়েকটি বছর হজরত ফাতেমা জোহরা (আ.) কে চেনার কাজে ব্যয় করেছেন। তার এক গবেষণা লব্ধ প্রবন্ধে নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে হজরত মুহাম্মাদ ( সা.) এর মোবাহেলা, -যা ১০ম হিজরীতে মদিনায় সংঘটিত হয়েছিল- সম্পর্কে লিখেছেন, যাতে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি তার ঐ প্রবন্ধে বলেন: আওরাদ ও হজরত ইবরাহিম (আ.) এর দোয়াসমূহে ১২টি নূরে সংবাদ দেয়া হয়েছে যারা ফাতেমা কেন্দ্রিক... মুসার তাওরাত গ্রন্থেও মুহাম্মাদ (সা.) ও তার বরকতপূর্ণ কন্যা এবং ইসমাঈল ও ইসহাকের (হাসান ও হুসাইন) ন্যায় তাঁর দু’টি সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। ঈসা (আ.) এর ইঞ্জিলেও আহমাদ ( সা.) এর আগমনের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। আরো সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, তিনি একটি বরকতপূর্ণ কন্যা সন্তানের অধিকারী হবেন, যে দু’টি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে...’ । আব্দুর রাহমান বাদাভী’র ব্যক্তিত্ব (যারা সাথে মোবাহেলার বিষয়টিও এসেছে), লুঈ মাসিনিউন, পৃষ্ঠা ১৭৯, ১৯৪৪ সালে মিলানে প্রকাশিত। নবিকন্যা ফাতেমা (রা.) পাকপাঞ্জাতনের একজন। অন্য চারজন হলেন মুহাম্মদ (সা.), আলী (রা.), হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.)। বস্তুত কোরআন ও সহিহ সুন্নাহের দৃষ্টিতে এ পাঁচজন যে আহলে বায়াত বা পাকপাঞ্জাতন এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাদের বাইরেও রয়েছেন আহলে বায়াতের অনেক সদস্য। (ফাতহুল বারি : ১৬০, ১৭১) হজরত ফাতেমা (রা.)-এর স্বামী আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) । তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফাতুল মুসলিমিন। তিনি প্রিয় নবী (সা.) এর চাচাতো ভাই, আহলে বায়াতের বিশিষ্ট সদস্য। তিনি ৬০০-৬০১ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবু তালেব ও মাতা ফাতেমা বিনতে আসাদ। পিতা-মাতা উভয় দিক থেকে তিনি কোরাইশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাখা হাশিমি বংশোদ্ভূত। তার উপাধি হায়দার (সিংহ) ও আসাদুল্লাহ (আল্লাহর বাঘ)। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গৃহে ও তাঁরই তত্ত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচারকালেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তার বয়স ১০ বছর। খাদিজা (রা.) এর পরে তিনি বা হজরত আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম মুসলিম। তিনি ফাতেমা (রা.) এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দ্বিতীয় হিজরি ৬২৩-২৪ খ্রিস্টাব্দে। হজরত ফাতমো বিনতে মুহাম্মাদ এর জন্ম হয়েছিলে ২০ জমাদিউস সানি তারিখে এবং এই একই মাসের ৩ তারিখেই ইনতেকাল করেন নবিননন্দিণী। হজরত ফাতেমা (সা.) ছিলেন বিশ্বনবি (সা.) ‘র আহলে বাইত বা পবিত্র বংশধারায় জন্ম নেয়া মুসলমানদের ১১ জন ইমামের জননী। বিশ্বনবি (সা.) ও স্বামী আমীরুল মুমিনিন হজরত আলী (আ.)’র পর এই ১১ জনই ইসলামকে সব সংকট ও দূর্যোগের কবল থেকে রক্ষার তরী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। এরই প্রমাণ দেখা যায় কারবালায় তাঁর পুত্র হজরত ইমাম হোসাইন (আ.)ও এর আগে হজরত ইমাম হাসান (আ.)’র নজিরবিহীন আত্মত্যাগে। মুসলমানদের নেতা হিসেবে ও বেহেশতী যুবকদের সর্দার হিসেবে এই দুই মহাপুরুষকে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন হজরত ফাতেমা (সা.)। গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ রহমান ইমেইল : [email protected]