ছবি সংগৃহীত

টিউটোরিয়াল: প্রক্সি- কেন এবং কিভাবে !

oritro.ahmed
লেখক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১২, ০৪:২১
আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১২, ০৪:২১

(প্রিয় টেক) প্রক্সির নাম বা ব্যবহার আমরা অনেকেই জানি। অনেক কাজেই প্রক্সির ব্যবহার করতে হয় আমাদের। আসুন প্রক্সি নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যাক আগে। মজার একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। স্কুল বা কলেজে অনেক সময় দেখা যায়, কেউ একজন ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে, রোল কল এর সময় তার বন্ধু বান্ধবদের কেউ একজন তার রোলের সময় প্রেজেন্ট দেয়, মানে সে উপস্থিত না থেকেও উপস্থিত! এটাকে ক্লাস প্রক্সি বলা হয়। ইন্টারনেট প্রক্সিটার ধারনাটাও অনেকটা এরকম। আপনি যখন একটা লিঙ্ক ভিজিট করছেন, মানে আপনার ব্রাউজার যখন সার্ভারে হেডার রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে, তখন আপনার আইপি, সার্ভার এর অ্যাক্সেস লগে লিপিবদ্ধ হয়। ফলে আপনি যে আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে সেই সাইট বা লিংক ভিজিট করছেন, সেটা সেই সাইটের ডেভেলপার/ওয়েবমাষ্টার জানতে পারছে। এখন আপনি যদি এই ব্রাউজার থেকে সার্ভার কানেকশন এর মাঝে একটা নতুন মাধ্যম ঢুকিয়ে দেন, তাহলে সার্ভারের লগে আপনার আইপির বদলে থাকবে সেই নতুন মাধ্যমের আইপি। আর এই মাধ্যমটাই হলো প্রক্সি! সহজে বোঝানোর জন্য নিচের এই ছবিটার দিকে নজর দিন: প্রক্সির কাজের ধারা প্রক্সি নানা ধরনের হয়। ফরোয়ার্ড, ডায়নামিক, ওপেন, রিসার্ভ। তবে আমরা মূলত আলোচনা করবো প্রক্সির ব্যবহার নিয়ে। ব্যবহারের ভিত্তিতে প্রক্সি সাধারণত চার ধরনের হয়। অন্তত এই চার ধরন মানুষ বেশি ব্যবহার করে।

  1. স্ক্রিপ্ট প্রক্সি বা ওয়েব প্রক্সি
  2. আইপি প্রক্সি
  3. টানেল প্রক্সি বা ভিপিএন নামে অনেকেই চেনেন এটাকে
  4. অনিয়ন নেটওয়ার্ক - এটা আইপি প্রক্সির একটা নতুন ধারা

স্ক্রিপ্ট প্রক্সি বা ওয়েব প্রক্সি:

এর ব্যাবহারটা এরকম, আপনি স্ক্রিপ্ট প্রক্সির একটা পেজ থেকে একটা ওয়েবসাইটে ঢুকলেন, প্রথমে সেই স্ক্রিপ্ট সাইটের সব ফাইল ডাউনলোড করবে তার টেম্পোরারি ফোল্ডারে, এরপর আপনার কাছে পাঠাবে। এই ধরনের প্রক্সি তুলনামূলক ভাবে কিছুটা স্লো, দুইবার ডাটা ট্রান্সফার এর কারণে স্লো হয়। তাছাড়া ডাটা মিসিং এর সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের প্রক্সির নিরাপত্তা অনেক কম হয়। যে কোন ধরনের সিকিওর অ্যাকাউন্ট ব্যবহার এর জন্য একদমই অনুপযোগী এবং ক্ষতিকর। তবে সাধারণ কাজে এটা ব্যবহার করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ নিচে কয়েকটা দিলাম, দেখতে পারেন: -> http://proxy.my-addr.com/ -> http://www.hidemyass.com/ -> http://www.freewebproxy.net/ এমনকি চাইলে আপনি নিজেও একটা বানিয়ে ফেলতে পারেন, খুব কঠিন কিছু না। গ্লিপ ( Glype ) নামের একটা ওপেন সোর্স ওয়েব প্রক্সি স্ক্রিপ্ট আছে, যা ব্যবহার করে আপনিও হতে পারেন একটা প্রক্সি সাইটের গর্বিত মালিক Dance [ নেভার মাইন্ড ]

আইপি প্রক্সি:

এটার কাজ মূলত আপনি একটা আইপি এবং পোর্ট দেওয়া হবে। সেটা ব্যবহার করে আপনার কানেকশন কাজ করবে। টেকনিক্যাল ডিটেইলসে যাবো না, কিভাবে এটা ব্যবহার করতে হবে দেখা যাক। প্রথমে আমাদের লাগবে, একটা আইপি এবং পোর্ট। সেটার জন্য আপনি এই লিস্টটা ভিজিট করতে পারেন। নানা দেশের নানা টাইপের, নানা স্পিডের, নানা নিরাপত্তার আইপি প্রক্সির লিস্ট আছে এখানে। আইপি প্রক্সি লিস্ট এখান থেকে আপনার পছন্দের ভিত্তিতে একটা আইপি এবং পোর্ট বেছে নিন। তবে স্পিড এবং কানেকশান টাইমের দিকে খেয়াল রাখবেন। এখন আসুন এটাকে কিভাবে সেটআপ করা যায় সেই পদ্ধতিতে। প্রথমেই আমার প্রিয় মজিলা ফায়ারফক্সের জন্য। প্রথমেই মেনু থেকে Options> Options > Advanced এ যান এবং সেখানে Network ট্যাবে যান। এবার কানেকশান সেটিংসে ক্লিক করুন। Firefox Connection Settings একটা উইন্ডো পাবেন, সেখানে আপনি Manual Proxy Configuration সিলেক্ট করুন। এরপর নিচের ছবির দিকে খেয়াল করুন। Configuration এখানে প্রথম বক্সে আইপি, পরেরটাতে পোর্ট দিন। যেহেতু প্রাথমিক অবস্থায় আছেন, এস এস এল, এফ টি পি এবং শকস নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই যদি না আপনি অনলাইনে কেনাকাটা করেন ( এস এস এল ), আর বেশিরভাগ এফ টি পি সফটওয়্যার এ আলাদা ভাবে প্রক্সি কনফিগার করার সুবিধা দেয়। তাই Use this proxy server for All Protocol সিলেক্ট করে ওকে করুন। পরের মেনুতেও তাই। যদি সবকিছু ঠিক ঠাক থাকে তাহলে আপনি এরই মধ্যে মজিলা ফায়ারফক্সের কানেকশনকে প্রক্সির মধ্যে দিয়ে চালনা করছেন। টেস্ট করার জন্য http://ip-address.org থেকে চট করে ঘুরে আসুন। দেখুন আপনার আইপি কি দেখাচ্ছে। যদি নতুন সে প্রক্সি আইপি সেটআপ দিলেন, সেটা দেখায়, তাহলে কংগ্রাচুলেশনস। আপনি সফল ভাবে প্রক্সি সেটআপ দিয়েছেন মজিলা ফায়ারফক্সে। এবার আসুন গুগল ক্রোমের জন্য দিকে। Options > Under the hood > Network > Change proxy settings এ চলে যান। আগেই বলে রাখি, ক্রোম আলাদা কোন প্রক্সি সেটিং ব্যবহার করেনা। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর প্রক্সিসেটিংস ব্যবহার করে। তাই ক্রোম আর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর সেটিংস আলাদা ভাবে করতে হবে না। আর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার থেকে Tools > Internet options > Connections এ যান। এরপর বাকি সেটিং এর জন্য নিচের ছবি গুলো ফলো করুন। IE Connection কানেকশন ট্যাব থেকে নিচে লাল মার্ক করা ল্যান সেটিং এ যান। IE Proxy এখানে লাল মার্ক করা চেকবক্সটা অ্যাক্টিভ করে অ্যাডভানস এ ক্লিক করুন। Setup Proxy বাকিটা নিয়ে আর সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এবার নজর দেই অপেরার দিকে। Opera Menu > Appearances > Preferences এ যান। এরপর অ্যাডভান্সড ট্যাব এ যান। সেখানে বাম পাশের মেনু থেকে নেটওয়ার্ক সিলেক্ট করুন। Opera এরপর সেখান থেকে Proxy Servers এ ক্লিক করুন। Opera Proxy Settings এরপর বাকিটা বুঝতেই পারছেন। এমন আরো কিছু আইপি প্রক্সির লিস্ট- http://www.ipspider.com/proxy-and-socks-list/ http://spys.ru/en/ http://www.freeproxylists.net/ http://www.proxynova.com/proxy-server-list/

যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে:

  • সব আইপির স্পিড সমান নয়, তাই কানেকশন স্লো হতে পারে।
  • ফ্রি প্রক্সি হওয়ার কারণে একটা আইপি অনেকেই ব্যবহার করে, সে কারণেও স্লো হতে পারে।
  • সব আইপির সিকিউরিটি সমান নয়। তাই খুব গোপন কিছুর ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।
  • ভুলেও কোন ধরনের সোশ্যাল নেটওয়ার্কে লগইন করবেন না এই আইপি গুলো ব্যবহার করে, অথবা ইমেইল চেক করবেন না।
এসবের পরে সাফিক্স প্রক্সিটা ক্রমাগত অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেছে। আর এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে http://anonymouse.org. এটার স্পিড তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি ভালো, সিকিউরিটি খুব একটা খারাপ না। তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং মেইলিং এর জন্য সিকিউরিটি যথেষ্ট নয়। আরো কিছু ব্যাপার জানা দরকার। অনেক ওয়েব প্রক্সি ফ্ল্যাশ কন্টেন্ট ব্লক করে রাখে। এটার পেছনে সিকিউরিটি রিজন আছে। ফ্লাশ ভিডিও কিংবা একটা ফ্ল্যাশ ফাইল আপনার পরিচয় ফাঁস করে দিতে পারে, মানে প্রক্সির সুবিধা আপনি পাবেন না ফ্ল্যাশ কনটেন্ট এ ক্ষেত্রে অনেকসময়। সেক্ষেত্রে ফ্ল্যাশ ফাইলের জন্য কি করবেন? সেটারও সমাধান আছে। আছে টর। পরের পর্বে টর নিয়ে আলোচনা করবো।