ছবি সংগৃহীত

গুনে ভরা বেল

sraboni zaman
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০১৩, ১১:৩৮
আপডেট: ০৩ জুন ২০১৩, ১১:৩৮

বেল আমাদের দেশের একটি দারুন জনপ্রিয় একটি ফল। গরমের দিনে এক গ্লাস বেলের শরবত শরীর ও মনে তৃপ্তি যোগায়। বেল পেটের নানা রকম রোগ সারাতে জাদুর মতো কাজ করে, কাঁচা বেল ডায়রিয়া ও আমাশায় রোগে ধন্বন্তরী ওষুধ হিসাবে বিবেচিত। বেলে আছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়াম। হিন্দু ধর্মে শিব পূজায় বেলের পাতা ব্যবহার করা হয়,তাই তাঁদের কাছে বেল শ্রীফল নামে পরিচিত। তাঁরা বেল কাঠও পবিত্র জ্ঞান করেন বিধায় কখনো বেল কাঠ পুড়িয়ে রান্না করেন না। বেলের জন্ম ভারত বর্ষে,বেল লেবু পরিবারের সদস্য। একে ইংরেজীতে বলা হয় Wood Apple । কারন এর উপরের খোসা কাঠের মতো শক্ত। সংস্কৃত নাম বিল্ব। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Aegle marmelos Correa (syn. Feronia pellucida Roth, Crataeva marmelos L)।

বড় বেল গাছ লম্বায় প্রায় ১০ থেকে ১৬ মিটার পর্যন্ত হয়। বেল গাছ ছোট থাকা কালীন এর গায়ে প্রচুর কাঁটা থাকে, গাছ বড় হলে কাঁটা কমে যায়। বেলের ফুল হালকা সবুজ থেকে সাদা রঙের হয়ে থাকে। ফলের ভিতরের শাঁস ৮-১৫ কোয়া বা খণ্ডে বিভক্ত, প্রতিটি ভাগে চটচটে আঠার সাথে অনেক বীজ লেগে থাকে। বেল কাঁচা অবস্থায় সবুজ বর্ণের থাকে আর পেকে গেলে হলদে রঙ ধারন করে। সব ফলই পাকা খেতে হয়,তবে বেলের ক্ষেত্রে কচি বেল খাওয়াই উত্তম। তবে পাকা বেলও বেশ উপকারি । প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে পাওয়া যায় - পানি - ৫৪.৯৬-৬১.৫ গ্রাম প্রোটিন- ১.৮-২.৬২ গ্রাম স্নেহ পদার্থ- ০.২-০.৩৯ গ্রাম শর্করা- ২৮.১১- ৩১.৮ গ্রাম ক্যারোটিন- ৫৫ মিলি গ্রাম থায়ামিন- ০.১৩ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেবীন- ১.১৯ মিলিগ্রাম এসকরবিক এসিড- ৮-৬০ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ১.১ মিলিগ্রাম টারটারিক এসিড- ২.১১ মিলিগ্রাম

বহুমুখী উপকারিতা -

বেলের হাজার গুন ,এর উপকারিতা বলে শেষ করা মুশকিল। বেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারের কথা তুলে ধরা হল-
  • বেল পেটের নানা অসুখ সারাতে দারুন উপকারি। দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়-ডায়রিয়া রোগে কাঁচা বেল নিয়মিত খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব ।
  • বেল পেট ঠাণ্ডা রাখে। গরমের সময় পরিশ্রম করার পর বেলের সরবত খেলে ক্লান্তি ভাব দূর হয় ।
  • বেলের ভিটামিন "এ" চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর পুষ্টি যোগায়। ফলে চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • বেলের শাঁস পিচ্ছিল ধরনের। এমন হওয়ার কারনে এই ফল পাকস্থলীতে উপকারী পরিবেশ সৃষ্টি করে,খাবার সঠিক ভাবে হজম করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ট কাঠিন্য দূর হয় ।
  • বেলে থাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার বা আঁশ, যা মুখের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। যাদের পাইলস আছে, তাদের জন্য নিয়মিত বেল খাওয়া উপকারী।
  • বেলে আছে ভিটামিন সি । ভিটামিন সি গ্রীষ্মকালীন বহু রোগ বালাইকে দূরে রাখে।
  • জন্ডিসের সময় পাকা বেল গোল মরিচের সাথে শরবত করে খেলে উপকার পাওয়া যায় ।
  • শিশুদের কানের ব্যাথা ও ইনফেকশন সারাতে বেল পাতার জুড়ি নেই। বেল পাতা ও তিলের তেল জ্বাল দিয়ে ওই তেল ড্রপার দিয়ে কানে দিলে ব্যাথা সেরে যায় ।
  • নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় ।
  • সর্দি হলে বেল পাতার রস ১ চামচ খেলে সর্দি আর জ্বর ভাব কেটে যায় ।
  • কচি বেল টুকরা করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিলে তাকে বেলশুট বলে। যাদের আলসার আছে তারা বেলশুটের সাথে পরিমান মতো বার্লি মিশিয়ে রান্না করে নিয়মিত খেলে আলসার দ্রুত সেরে যায়।