ছবি সংগৃহীত

আমি একজন শখের লেখক: আবুল হায়াত

mithu haldar
লেখক
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৮:০৬
আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৮:০৬

ছবি: আরিফ আহমেদ ও সংগৃহীত।

(প্রিয়.কম) বাংলাদেশের টিভি নাটকের গুণী ও দর্শকপ্রিয় অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত। শুধু অভিনেতা হিসেবেই নয়, একাধারে নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং প্রকৌশলী হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। বর্ষীয়ান এ অভিনেতা হাজারেরও বেশি টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি মঞ্চ, রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে স্ব-মহিমায় উজ্জল। অভিনয়ের পাশাপাশি লেখক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে এ অভিনেতার। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলামও লিখে থাকেন।

১৯৯১ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় যার নাম ‘আপ্লুত মরু’। এছাড়া তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘নির্ঝর সন্নিকটে’, ‘এসো নীপবনে’ (তিন খন্ড), ‘মধ্যাহ্নভোজ কি হবে ?’, ‘জীবন খাতার ফুটনোট’ (২ পর্ব), ‘অচেনা তারা’, ‘হাঁসুলি বেগমের উপকথা’র মত বেশ কিছু বই। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে প্রকাশিত হবে তার রচিত দুটি বই। এরমধ্যে একটি হল গল্পগ্রন্থ ‘জলডুবা’। অপরটি ‘নির্বাচিত গল্প সংকলন’। বই প্রকাশ, অভিনয়, নাটকের বাজেট স্বল্পতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রিয়.কমের সাথে কথা বলেছেন প্রবীণ এ অভিনেতা।

(প্রিয়.কম) অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে আপনার লেখা দুটি বই প্রকাশিত হবে, বইগুলো নিয়ে একটু বলুন?

আবুল হায়াত: হ্যাঁ, এবারের বই মেলাতে আমার রচিত দুটি বই প্রকাশিত হবে। যার মধ্যে একটি হল-‘জলডুবা’। এটি গল্পের বই। এখানে তিনটি গল্প রয়েছে। সেগুলো হল- ‘জলডুবা’, ‘সোনালি ডানার চিল’, ‘ডায়েরি একাত্তর’। এরমধ্যে ‘জলডোবা’ গল্পের কাহিনি হল একটি গ্রামের। সেখানকার মানুষের জীবনকাহিনী নিয়ে। ‘ডায়েরি একাত্তর’ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের উপরে। ‘সোনালি ডানার চিল’ স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের গল্প। এছাড়া আরেকটি বই বেরুবে ডেইলি স্টার এর প্রকাশনা থেকে। নাম ‘নির্বাচিত গল্প সংকলন’। এখানে আমার লেখা বিভিন্ন সময়ের মোট ১৫টি গল্প রয়েছে। সেগুলো সংকলিত করে একটি গল্পের বই আকারে প্রকাশিত হবে।

(প্রিয়.কম) অভিনেতা আবুল হায়াত হিসেবেই আপনি সর্বাধিক পরিচিত, এছাড়া আপনার লেখালেখির আলাদা একটি পরিচয় রয়েছে, এ বিষয়টি আপনার কাছে কেমন লাগে?
আবুল হায়াত: আসলে আমাকে লেখক বলা হলে অন্যায় হবে। আমি শখের বসে লিখে থাকি। আর হয় না, মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার তো কত মাধ্যমই আছে। আমার কাছে মনে হয় এটি একটি মাধ্যম। অনেক সময় অনেকে অনুরোধ করেন। এরপর একটা সময় গিয়ে গল্প লেখা শুরু করেছি। যদিও এরমধ্যে আমার লেখা ২৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে যে কলাম লেখি এটিও মতিউর রহমানের এক ধরনের অনুপ্রেরণা। এভাবেই লিখতে লিখতে নিজের সাহস বেড়ে গেছে। এরমধ্যে উপন্যাসও লিখে ফেলেছি দু-একটা।

(প্রিয়.কম) এবারের বইমেলাতে কি আপনার যাওয়া হয়েছে?
আবুল হায়াত: শুটিংয়ের ব্যস্ততার কারণে এখন পর্যন্ত বই মেলাতে যাওয়া হয় নি। যখন বই বেরুবে, তখন যেভাবেই হোক মেলাতে যাব। তবে মেলার প্রতি প্রাণ থেকে একটি টান অনুভব করি। তা কি আর বুঝানো যাবে। তবে অভিনয়ের ব্যস্ততা এসব থেকে সব সময়ই দূরে রাখে।

(প্রিয়.কম) বর্তমান সময়ের তরুণদের লেখার মান কিংবা লেখা পড়ে অপনার কি মনে হয়?
আবুল হায়াত: আমি তো সবসময়ই বলি তরুণরাই হল চ্যাম্পিয়ন। তাদের মধ্যে এক ধরনের নতুনত্ব সৃষ্টির চেতনা থাকে। যেটা বয়স্কদের মধ্যে থাকে না। এটির তো প্রশংসা করতেই হবে। এখন যেসব তরুণরা লিখছেন তারা অনেক কিছূ পড়াশোনা করে জেনে লিখছেন। যেটা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। নিজের বুদ্ধিমত্তাটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। এজন্য তাদের প্রতি আমার এক ধরনের ইতিবাচক ধারনা কাজ করে।

(প্রিয়.কম) বর্তমানে অভিনয়ের ব্যস্ততা?
আবুল হায়াত: এখন ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছি। এছাড়া বিশেষ দিবস কেন্দ্রীক নির্মিত নাটকগুলোতে অভিনয় করছি। এরমধ্যে আমার নিজের পরিচালনায় একটি ধারাবাহিক নাটক রয়েছে।

(প্রিয়.কম) বর্তমান সময়ে নাটক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ কিংবা অনুযোগ শোনা যায়। আর সেটি দিনে দিনে বেড়েই চলছে। এরমধ্যে নাটকের মান, দর্শকসই নির্মাণ কিংবা বিজ্ঞাপনের দৌরাত্ব থেকে শুরু করে অনেক অনেক কথা। আপনার কাছে বিষয়টি কি মনে হয়?
আবুল হায়াত: হ্যাঁ বিষয়টি তো অনেক দিন ধরেই শুনছি। আপনি যদি ধরেন পিক আওয়ারে একটি অনুষ্ঠান করবেন। কম দামে অনেকগুলো বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। তাহলে দর্শকতো একটি নাটক দেখবে নাকি সে ভুড়িভুড়ি বিজ্ঞাপন দেখবে? এক ঘণ্টা নাটক দেখতে আরেক ঘণ্টা কে বসে থাকবে। সুতরাং এজন্য নাটকের দর্শক কমে যাচ্ছে। এছাড়া মানসম্পন্ন নাটকের নিয়ন্ত্রণ তো টিভি চ্যানেলগুলোর হাতে। কারণ নাটক যেকোন কেউ বানাতে পারে। কিন্তু একটি টিভি চ্যানেল তো সব ধরনের নাটক প্রচার করতে পারেন না। আমার প্রশ্ন চ্যানেলগুলো কেন পঁচা নাটক চালাচ্ছে? একথাগুলো কেউ বলছে না।

(প্রিয়.কম) তবে এরজন্য আশু কি করণীয় আছে?
আবুল হায়াত: আর ভাল নাটক নির্মাণ করার জন্য তো টাকা দিতে হবে। তাহলে না ভাল মানের শিল্পী তো নেওয়া যাবে না। আর সেখানে যদি পয়সা কম দেন তাহলে ভাল নাটক কিভাবে নির্মাণ সম্ভব হবে না। আর একজন পরিচালক কখনও নিজের ব্যক্তিগত টাকা খরচ করে সে নির্মাণ করবেন না। তবে বিশেষ করে তরুণেরা এখন বেশ ভাল কাজ করছে। তাদেরকে সে সুযোগটা দিতে হবে। বিশেষ করে অর্থ। এক্ষেত্রে ভাল নাটক নির্মাণ করে বিজ্ঞাপনের দাম বাড়িয়ে দেন।

(প্রিয়.কম) আপনাকে তো প্রায়শই বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখা মেলে নতুন কোন বিজ্ঞাপনে কাজ করছেন?
আবুল হায়াত: না, এ মুহূর্তে নতুন কোন বিজ্ঞাপনে অভিনয় করছি না।

(প্রিয়.কম) আপনাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আবুল হায়াত: প্রিয়কেও ধন্যবাদ।