
ছবি সংগৃহীত
সুখী দাম্পত্য জীবন নির্মাণে প্রত্যেক স্ত্রীর যে ১১টি দায়িত্ব-কতর্ব্য পালন করা উচিত!
আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০১৫, ০৪:০২
পারিবারিক জীবনের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করতে, একটি সুন্দর পরিপাটি সংসার উপহার দিতে, একটি ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত পরিবার গড়তে, একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে, পারিবারিক, সামজিক ও রাষ্ট্রীয় সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি রক্ষার্থে, স্বীয় সম্ভ্রম, মান-ইজ্জত, মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখতে আল কুরআনের বিধি বিধান ও রাসূলে করীম [সা.] এর সুন্নাত অনুযায়ী জীবন যাপন করে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি হাসিলের জন্য স্বামীকে যেমন কতকগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়, তেমনি স্ত্রীকেও কতগুলো কর্তব্য পালন করতে হয়। এক. ন্বামীকে হাসিমুখে অভ্যর্থণা জানানো : স্বামী যখনই বাহির থেকে ঘরে ফিরে আসেন, তখন স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে হাসিমুখে ও হাস্যবদনে তাকে অভ্যর্থনা করা, স্বাগতম জানানো। স্বামী যত ক্লান্ত শ্রান্ত হয়েই ঘরে ফিরে আসুক না কেন এবং তার হৃদয় যত বড় দুঃখ, কষ্ট ও ব্যর্থতায়ই ভারাক্রান্ত হোক না কেন, স্ত্রীর মুখে অকৃত্রিম ভালোবাসাপূর্ণ হাসি দেখতে পেলে তিনি তাঁর সব কিছুই নিমিষেই ভুলে যেতে পারেন। কাজেই যেসব স্ত্রী স্বামীর সামনে মুখ গোমড়া করে থাকে, উদার হৃদয়ে স্বামীর সাথে প্রাণ খোলে কথা বলে না, তারা নিজেরাই নিজেদের ঘর ও পরিবারকে নিজেদেরই একমাত্র আশ্রয় দাম্পত্য জীবনকে ইচ্ছে করেই জাহান্নামে পরিণত করে। দুই. তাকওয়া ও আমানতদারিতা : রাসূলে করীম [সা.] বলেন, মুসলিমের জন্য তাকওয়ার পর সবচেয়ে উত্তম জিনিস হচ্ছে- নেককার চরিত্রবতী স্ত্রী। এমন স্ত্রী যে স্বামীর আদেশ মেনে চলে, স্বামী তার প্রতি তাকালে সন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং স্বামী কোনো বিষয়ে কসম দিলে, সে তা পূরণ করে। আর স্বামীর অনুপস্থিতে তারা নিজের ও স্বামীর ধন সম্পত্তির ব্যাপারে স্বামীর কল্যাণকামী হয়। [ইবনে মাযাহ] এখানে বুঝা যায় যে, আল্লাহর ভয় ও তাকওয়ার পর সকল মুসলিম পুরুষের জন্যই সর্বোত্তম সৌভাগ্যের সম্পদ হচ্ছে সতী-সাধ্বী, সুদর্শনা ও অনুগতা স্ত্রী। প্রিয়তম স্বামীর সে একান্ত প্রিয়তমা। স্বামীর প্রতিটি কথায় সে উৎসর্গকৃতা, সতীত্ব ও পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারে সে অত্যন্ত সজাগ। আর এরকম স্ত্রী একজন স্বামীর পক্ষে গৌরব ও মাহাত্ম্যের ব্যাপার, তেমনি এ ধরনের স্ত্রী অত্যন্ত ভাগ্যবতীও। তিন. প্রেম-ভালোবাসাময় আচরন-উপস্থাপন : কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী স্বামীর যেমন স্ত্রীর প্রতি কোমল হতে হবে, তেমনি স্ত্রীরও স্বামীর প্রতি অনুগত হতে হবে, তাকে সেভাবে ভালোবাসতে হবে, তার কল্যাণ ও সুখের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য সুখ ও প্রশান্তি অর্জন, সেহেতু স্বামী স্ত্রীর উভয়ে নিজেদেরকে পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তুলবে। বিশেষভাবে স্ত্রী নিজেকে (ইসলামের সীমার মধ্যে) সুন্দরভাবে স্বামীর কাছে পেশ করবে। ইবনে আব্বাস [রা.] বলেছেন- স্বামীকেও স্ত্রীর কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে সৌন্দর্য চর্চার মূল উদ্দেশ্যই স্বামী বা স্ত্রীকে পরস্পরের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করা। এজন্য ইসলাম মেয়েদেরকে ঘরে সাজগোজ করার অনুমতি দিয়েছে। অথচ বর্তমানে পাশ্চাত্যের অনুসরণে মেয়েরা ঘরে অতি সাধারণভাবে থাকে, আর বাইরে যাবার সময় ঠোঁট কপাল রাঙ্গিয়ে বেপর্দাভাবে নিজেদেরকে আকর্ষণীয় করে তুলছে। এটা ইসলামের হুকুমের উল্টো চলন বৈকি। চার. পর্দা মেনে চলা : পর্দা গ্রহণ করা এবং শালীনতা রক্ষা করে চলা সম্ভ্রান্ত বংশের মহিলাদের চিহ্ন। মুসলিম মহিলাদের জন্য তা ফরয। বিশেষ করে বাইরে যেতে হলে আবরু ইজ্জত রক্ষা করে চলা কর্তব্য। নারী জাতির প্রভূত কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: হে নবি! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [সূরা আহযাব: ৫৯] ইসলাম স্বামী স্ত্রীর জীবনকে এক উত্তম প্রেম ভালোবাসার মাধুর্যপূর্ণ ভাবধারায় সজ্জীত দেখতে চায়। কেননা, প্রেম-ভালোবাসা, পারস্পরিক আদর যত্ন ও সোহাগ না থাকলে দাম্পত্য জীবন আর বিয়ের বন্ধন যে দুর্বিষহ হয়ে উঠে এবং সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে যায় একথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। পাচ. স্বামীর বদান্যতা : ইসলামে পরিবার হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে উভয়েরই অবদান মূল্যবান। তবে পরিবারের শান্তি শৃংখলা রক্ষার খাতিরে একজনের নেতৃত্ব মেনে চলা প্রয়োজন। নারীর স্বাভাবিক দুর্বলতা, নানাবিধ দৈহিক অসুবিধা এবং পুরুষের তুলনায় তার দৈহিক ও মানসিক অসম্পূর্ণতার কারণে ইসলামে স্ত্রী পুরুষের পারস্পরিক জীবনে পুরুষের প্রাধান্য ও নেতৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। কেননা, পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে যে কোনো প্রতিকূলতা, অসুবিধা ও বিপদ মুসীবত আসতে পারে, কিংবা সাধারণতঃ এসে থাকে, তার মুকাবিলা করা এবং সমস্যা ও জটিলতা সমাধান করার উপযুক্ত ক্ষমতা যোগ্যতা পুরুষেরই রয়েছে। সাধারণত পুরুষের তুলনায় স্ত্রীলোকদের এসব ক্ষমতা অনেকাংশে কম ও অপ্রতুল। একথা বাস্তব দৃষ্টিতে ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে অনস্বীকার্য। ঠিক এ কারণেই পরিবারে পুরুষের নেতৃত্ব চলবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: পুরুষরা নারীদের অভিভাবক ও ব্যবস্থাপক। কারণ, আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। [সূরা নিসা: ৩৪] ছয়. স্বামীর সন্তুষ্টি লাভে সচেষ্ঠ হওয়া : কোরআন ও হাদীসের আলোকে স্বামীর যেমন কর্তব্য স্ত্রীর সন্তুষ্টি লাভের জন্য চেষ্টা করা, তেমনি স্ত্রীরও তাই কর্তব্য। স্ত্রীর যাবতীয় কাজ কর্মের লক্ষ্য থাকবে প্রথমতঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভ। দ্বিতীয়তঃ স্বামীর সন্তুষ্টি লাভ। স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য। স্বামী সন্তুষ্ট থাকলে আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট থাকেন। আর আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট থাকলে, জান্নাত লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে রাসূল [সা.] ইরশাদ করেন- যে স্ত্রীলোক এ অবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, সে জান্নাত লাভ করবে। [তিরমিযী] তিনি আরও ইরশাদ করেছেন: কোন স্ত্রী যদি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায নিয়মিত আদায় করে, রামযানের একমাস ফরয রোযা রাখে, তার যৌন অঙ্গের পবিত্রতা পূর্ণমাত্রায় বজায় রাখে, পর্দা করে, তবে সে অবশ্যই বেহেশতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করতে পারবে। [মিশকাত] এ হাদীসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, স্ত্রীর ওপর যেমন আল্লাহর হক রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বামীর অধিকার। আল্লাহর হক আদায় না করে যেমন পরকালীন জীবন সুখময় হতে পারে না, তেমনি স্বামীর অধিকার আদায় না করে স্ত্রীর জৈবিক জীবন সাফল্য মন্ডিত হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে নবি করীম [সা.] ইরশাদ করেছেন- সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে, আর সে তা অস্বীকার করে, এ অবস্থায় তার প্রতি তার স্বামী খুশী না হওয়া পর্যন্ত যিনি আসমানে আছেন, তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন অন্যত্র বলেছেন এ অবস্থায় ফেরেশতাগণ সেই স্ত্রীকে সকাল হওয়া পর্যন্ত অভিশাপ করতে থাকে। [বুখারি ও মুসলিম] বস্তুত: স্বামীর হক আদায় করার জন্যে দরকার তার আনুগত্য করা। কিন্তু স্বামীর এ আনুগত্যও অবাধ নয়, অসীম নয়, নয় নিঃশর্ত। এটা আল্লাহর আনুগত্যের অধীন। এজন্যে স্বামীর আনুগত্যের ব্যাপারে শরীয়তে সীমা উল্লেখ করা হয়েছে। নবি করীম [সা.] বলেছেন সঙ্গত ও শরীআত সম্মত কাজে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্র্তব্য। অন্যত্র রাসূল [সা.] বলেছেন- কোন স্ত্রী ঈমানের স্বাদ ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার স্বামীর মতোসঙ্গত অধিকার আদায় করবে। এখানে সঙ্গত ও শরীআত সম্মত বা মতোসঙ্গত শর্তের উল্লেখ আছে। কাজেই স্বামীর শরীআত বিরোধী কাজের কোনো আদেশ পালন করা স্ত্রীর জন্য জায়িজ নয়। তা অমান্য করাই ঈমানদার স্ত্রীর কর্তব্য। নবি [সা.] এর যুগে এক আনসারী মহিলা তার কন্যাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর কন্যার মাথার চুল পড়ে যেতে শুরু করে। তখন মহিলাটির জামাতা তাকে বললেন তার স্ত্রীর মাথায় পরচুলা লাগিয়ে দিতে। তখন মহিলাটি রাসূলে করীম [সা.] এর দরবারে হাজির হয়ে বলল, আমার মেয়ের স্বামী আমাকে আদেশ করে যে, আমি যেন মেয়ের মাথায় পরচুলা জুড়ে দেই। রাসূলে করীম [সা.] তার এ কথা শুনে বললে- না, তা করবে না। কেননা, যেসব মেয়েরা পরচুলা লাগায়, তাদের ওপর লানত করা হয়েছে। অন্যকথায়, পরচুলা লাগানো যেহেতু হারাম, অতএব, এ হারাম কাজের জন্য স্বামীর নির্দেশ মানা যেতে পারে না। [বুখারি] সাত. দায়িত্ব সচেতনতা : মুসলিম পরিবারে স্বামী স্ত্রী একে অন্যের সুখ দুঃখের অকৃত্রিম সাথী। দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করে নিলে বহন করা সহজ হয়। কোনো রকম দৈব দুর্বিপাকে স্বামীর দৈহিক বা আর্থিক সামর্থের হানি ঘটলে, স্ত্রী ধৈর্য্য ধারণ করবে। পূর্বের অবদান ও ভালোবাসার কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞ থাকবে। অক্ষম স্বামীকে মোহরানার ঋণের ভার থেকে মুক্তি দেয়া স্ত্রীর নৈতিক ও মানবিক কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- স্ত্রীগণ সানন্দে স্বেচ্ছায় মোহরের কিছু অংশ দান করে দিলে, তোমরা তা সন্তুষ্ট চিত্তে খেতে পার। [সুরাহ নিসা: ৪] পরিবারে স্বামীর সেবা করা, সন্তুানদের পরিচর্যা করা ও সংসারের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পাদন করার দায়িত্ব থাকে স্ত্রীর ওপর। স্ত্রীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সম্বন্ধে রাসূল [সা.] বলেছেন- স্ত্রী স্বামীর পরিজনবর্গ ও সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী। তাকে এই দায়িত্ব সম্বন্ধে কিয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে। [বুখারি ও মুসলিম] আট. সতীত্ব রক্ষা করা : প্রতিটি স্ত্রীর পবিত্র দায়িত্ব নিজের সতীত্ব রক্ষা করা। সতী সাধ্বী ও উত্তম চরিত্রের রমণীদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেছেন, আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ্ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতি ক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। তারপর যখন তারা বিবাহ বন্ধনে এসে যায়, তখন যদি কোনো অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদেরকে অধীন নারীদের অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্যে, তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে। আর যদি সবর কর, তবে তা তোমাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। [সূরা নিসা:২৫] অনেক সময় নারীদের মিষ্টি কথায় লম্পট, চরিত্রহীন পুরুষেরা প্রলুব্ধ হয়, আকৃষ্ট হয়। এরা স্বামীর অনুপস্থিতিতে কুমতলব হাসিলের সুযোগ খুঁজতে থাকে। তাই এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাবধান করে দিয়ে বলেছেন- হে নবি পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছ্ তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। [সুরা আহযাব: ৩২] শালীনতা রক্ষা করে চলা প্রতিটি স্ত্রীর কর্তব্য। বেপর্দাভাবে, অশালীন পোশাক পরে বাইরে যাওয়া উচিত নয়। এর জন্য আল্লাহ পাক বলেছেন- তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। হে নবি পরিবারের সদস্যবর্গ! আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। [সূরা আহযাব : ৩৩] নয়. গোপনীয়তা রক্ষা : স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনের ইজ্জত রক্ষক ও দুর্গ। তাই স্ত্রীর গোপন বিষয় যেমন স্বামীর জন্য অন্য কারো কাছে প্রকাশ করা কোনো মতেই বৈধ নয়, ঠিক তেমনি স্ত্রীরও স্বামীর কোনো গোপন কথা বা গোপন বিষয় অন্যের কাছে প্রকাশ করবে না। একে অপরের গোপনীয়তা রক্ষা করা পবিত্র আমানত। এ আমানতের খিয়ানত করা সাংঘাতিক গোনাহর ব্যাপার। পারিবারিক জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো ব্যাপারে মতের মিল নাও হতে পারে, কখনও রাগ অভিমানও হতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই স্বামী যেমন স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দিতে পারবে না, স্ত্রীও তেমনি স্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারবে না। কারণ, ঘর থেকে বের হয়ে গেলে, স্বামী স্ত্রীর নিজস্ব ব্যাপারে তৃতীয় পক্ষ জড়িত হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে নবি করীম [সা.] বলেছেন- যে স্ত্রী রাগ করে স্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও রাত যাপন করে, ফেরেশতাগণ সে স্ত্রীর ওপর অভিসম্পাত করতে থাকে যতক্ষণ না সে স্বামী গৃহ ফিরে আসে। দশ. হক আদায় : স্বামীর মর্যাদার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তিনি যদি কখনও কোনো প্রয়োজনে ডাক দেন, স্ত্রী ফরয নামায ব্যতীত যে অবস্থায় থাকুক না কেন, স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া বা স্বামীর শরীআত সম্মত যে কোনো নির্দেশ মেনে চলা স্ত্রীর কর্তব্য। রাসূল [সা.] বলেছেন- স্বামী যখন তার কোনো প্রয়োজনে নিজ স্ত্রীকে আহ্বান করে, তখন তার ডাকে সাড়া দেয়া স্ত্রীর কর্তব্য, যদিও সে চুলায় রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে। [তিরমিযী] শুধুমাত্র স্বামীর সাথে সদ্ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়, স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করাও স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর কাছ থেকে নগণ্য উপহার পেলেও স্ত্রীর উচিত, তা খুশি মনে গ্রহণ করা। স্বামী কোনো ঋণ বা অসম্পূর্ণ কাজ রেখে মৃত্যু বরণ করলে, স্ত্রী সামর্থ্য অনুসারে ঋণ শোধ এবং অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করবে। স্বামীর মৃত্যুর পর ইয়াতীম সন্তানদের লালন পালন ও মানুষ করা স্ত্রীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে রাসূল [সা.] বলেছেন- যে বিধবা সুন্দরী পুনরায় বিবাহ করেনি এবং ইয়াতীমদের প্রতিপালন করতে গিয়ে কষ্ট ও পরিশ্রমে তার চেহারা মলিন হয়ে গেছে, এমনকি ইয়াতীম সন্তানদের সংসার প্রতিষ্ঠা লাভ অথবা মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত পরিশ্রম করতে থাকে, রাসূল [সা.] তাঁর মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলের ইশারা প্রদর্শন করে বলেছেন. আমি এবং এ বিধবা রমণী কিয়ামতের দিন এ রকম পাশপাশি অবস্থান করব। [আবু দাউদ] এগার. দীনী সহযোগিতা : সত্যিকার অর্থে প্রকৃত বুদ্ধিমতী, জ্ঞানবতী তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের [সা.] সন্তুষ্টির জন্য কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করে। আল্লাহ তাআলার দাসত্ব ও আনুগত্য করা এবং তারই সন্তুষ্টি ও মর্জি অনুযায়ী চলার জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই স্বামী স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর দীন পালনের জন্য ইবাদত বন্দেগীর পথে একে অপরকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করা। যে স্বামী স্ত্রী আল্লাহ পাকের ইবাদতে পরস্পরকে সাহায্য সহযোগিতা করে, আল্লাহ পাক তাদের ওপর তার রহমত ও করুণা বর্ষণ করেন। ইসলামের ফরয ওয়াজিব ইবাদতে একজন আরেক জনকে প্রস্তুত ও উদ্বুদ্ধ করবে। এ হচ্ছে প্রত্যেকেরই দীনী কর্তব্য। কিন্তু তা ছাড়াও সুন্নাত এবং নফল ইবাদতের জন্যেও তা করা ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক কল্যাণকামিতা। রাসূলে করীম [সা.] এ প্রসঙ্গে বলেছেন- আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা বর্ষণ করেন, যে রাত জেগে নফল নামায পড়ে আর নিজ সহধর্মিনীকে জাগায় এবং নামায পড়ায়। আর সে যদি উঠতে না চায়, তবে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। তেমনিভাবে ঐ নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমত ও করুণা বর্ষণ করেন, যে রাত জেগে নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকেও সেজন্যে জাগায় আর স্বামী উঠতে না চাইলে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। [আবু দাউদ] বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে যে দাম্পত্য জীবনের সূচনা হয়, তার সুখ ও সফলতা নির্ভর করে কেবলমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক ও শরয়ী বিধি ব্যবস্থা অনুসরণ ও অনুকরণের ওপর। প্রত্যেক স্বামী স্ত্রীর শরয়ী এ অনুশাসন মেনে চলা পার্থিব সুখময় জীবনের জন্য যেমন ফলদায়ক, তেমনি তা পরকালীন অনন্ত জীবনের শান্তির সোপান। মাওলানা মিরাজ রহমান