ইসলাম সম্পর্কে যাদের জানাশোনা আছে, তারা অবশ্যই জানেন যে, ইসলামি শরিয়তে প্রাণীর ছবি আঁকা ও রাখা হারাম । এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে, প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম হলো কেনো? এর জবাবে বলতে হয়, প্রথমতঃ প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার অন্যতম ও প্রধান কারণ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল [স] প্রাণীর ছবি আঁকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন । যেমন এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আমাশ [রা] মুসলিম [রা] থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুকের [রা] সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি তার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, তিনি বললেন, আমি হজরত আব্দুল্লাহর নিকট শুনেছি রাসুল [স] বলেছেন, ‘নিশ্চয় মানুষের মধ্যে সে ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তায়ালা কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তৈরি করে ।’ (বুখারি, মুসলিম) হজরত আয়েশা [রা] বর্ণনা করেন যে, রাসুল [স] ঘরে থাকা প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস ধ্বংস করে ফেলতেন । (মিশকাত) আর রাসুল [স] যেহেতু আল্লাহর অহি ছাড়া কখনো কোনো কথা বলেন নি, সুতরাং রাসুলের [স] নিষেধ করা মানে প্রকারন্তরে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া । যেমন কোরআনে বর্ণিত আছে, ‘তিনি নিজের প্রবৃত্তি থেকে কেনো কথা বলেন না, যতক্ষণ না তার প্রতি অহি অবতীর্ণ হয় ।’ (সুরা নাজম, আয়াত ৩) প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে- ‘স্রষ্টার সঙ্গে সাদৃশ্যতা ।’ কারণ ছবি ও মূর্তি তৈরি করার অর্থই হলো নিজেকে স্রষ্টা হিসেবে প্রকাশ করা । যেহেতু হাদিসেও বর্ণিত রয়েছে যে, কেয়ামতের দিন ছবিতে প্রাণ দিতে বলা হবে । (মুসলিম) নির্ভরযোগ্য সকল কিতাবেই এই কারণটির উল্লেখ রয়েছে । আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি [রহ] লিখেছেন, ‘প্রাণীর ছবি তৈরি করা হারাম ও কবিরা গুনাহ । সম্মানের জন্য তৈরি করুক অথবা অন্য কারণে । কেননা, ছবি তৈরির মধ্যে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে ।’ (উমদাতুল কারি) আল্লামা ইমাম নববি [রহ] তার মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে লিখেছেন, ‘প্রাণীর ছবি তৈরি করা হারাম । কেননা এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা প্রকাশ পায় ।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘ছবির মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে।’ (শরহে নববি) মূলকথা হলো প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে যত কারণই বর্ণনা করা হোক না কেনো সব কারণের মূল ও প্রধান কারণ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল [স] প্রাণীর ছবি আঁকতে ও রাখতে নিষেধ করেছেন । মাওলানা মনযূরুল হক [লেখক পরিচিতি : মাওলানা মনযূরুল হক- বর্তমানে তিনি দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে লেখক ও সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি একজন হাফেজ, আলেম এবং লেখক-সাংবাদিক। পড়াশুনা করেছেন ঢাকার শীর্ষস্থানীয় কওমি মাদরাসা দারুল উলুম মাদানি নগর, কাকরাইল মাদরাসা ও জামেয়া কুরআনিয়া লালবাগে। বেশ কয়েকটি মৌলিক ও অনুবাদিত গ্রন্থ রয়েছে তার। আহলে হাদিস সমস্যার সমাধান তার লেখা আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি বই। এছাড়াও প্রকাশের অপেক্ষায় আছে, ফিলিস্তিনের গল্প সংঙ্কলন আশিক মিন ফিলিস্তিন, শিশুতোষ গল্প এই পৃথিবীর পাতায়, নবিয়ে রহমত, সিরাজাম মুনীরা, খোদার আজব বান্দা এরা সহ আরো বেশ কিছু গ্রন্থ।]