ছবি সংগৃহীত

সাদাকাতুল ফিতরার ৬টি মাসআলা, ফিতরা শুদ্ধভাবে আদয় করার জন্য যা জানা একান্ত জরুরি!

priyo.Islam
লেখক
প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০১৫, ০৪:২৫
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫, ০৪:২৫

১. সাদাকাতুল ফিতর কী 'সাদাকাতুল ফিতর'কে আমরা আমাদের ভাষায় ও সংস্কৃতিতে 'ফিতরা' হিসেবেই জানি এবং আদায় করি। পরিভাষায়, রমজান শেষে ঈদুল ফিতরের দিন সকালে সূর্যোদয়ের পূর্বে নিসাব পরিমাণ মালের মালিকের ওপর যে নির্ধারিত মাল বা সম্পদ দেয়া ওয়াজিব হয় তাকে 'সাদাকাতুল ফিতর' বলা হয়। এটা মূলত এক ধরনের জাকাত, যা শুধু ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আদায় করা হয়। ২. কখন কার ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব যার ওপর জাকাত ওয়াজিব তার ওপর সাদাকাতুল ফিতরও ওয়াজিব। কিন্তু দুইটি মৌলিক পার্থক্য এখানে রয়েছে। যথা- ১. সাদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ সম্পদের পূর্ণ এক বছর হওয়া শর্ত নয়, বরং ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পর ওই পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর এটি ওয়াজিব। ২. জাকাত শুধু সম্পদের মালিকের ওপর ওয়াজিব; কিন্তু সাদাকাতুল ফিতর ওই ব্যক্তির অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকেও আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রাপ্তবয়স্কদের পক্ষ থেকেও এটি আদায় করা যায়, তবে ওয়াজিব নয়। ৩. 'ফিতরা'র পরিমাণ গম বা আটা দ্বারা হলে ১৭৫০ গ্রাম (আধা সা) আর খেজুর, যব বা কিশমিশ দিয়ে হলে ৩৪০০ গ্রাম (এক সা)। (হিদায়া, প্রথম খ-)। তবে সরাসরি এগুলো দিয়ে কিংবা বাজারমূল্য হিসাবে সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে আদায় করা যায়। যে কারণে আমাদের দেশে ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ৪. 'ফিতরা' কাকে দেয়া যাবে জাকাতের খাতগুলোই সাদাকাতুল ফিতরার খাত। (সূরা তওবা : ৬০)। তবে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ফকির, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ই অগ্রাধিকার পাবে। 'ফিতরা'র শরয়ি উদ্দেশ্য ৫. 'জাকাত' ও 'ফিতরা'র শরয়ি উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন 'জাকাত' ও 'ফিতরা'র শরয়ি উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। মৌলিকভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পবিত্রতা এবং বরকতের নিয়তে গরিব-মিসকিনদের এ জন্য সাহায্য করা, যাতে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সমাজ গড়া নিশ্চিত হয়। যে সমাজে মানুষ হিসেবে কারও মৌলিক চাহিদার অপূর্ণতা থাকবে না কিংবা ধনী-গরিবের বিস্তর কোনো ব্যবধান থাকবে না। (কারজাভি, ফিকহ আল জাকাত)। তবে সাময়িক বিবেচনায় সাদাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে রোজার অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির ক্ষমা এবং ঈদুল ফিতরের দিনকে সবার জন্য উপভোগ্য, আনন্দ, হাসি-খুশি করে তোলাও শরয়ি উদ্দেশ্য। ৬. প্রচলিত রীতিতে কি শরয়ি উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হচ্ছে সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনায় সাদাকাতুল ফিতরের শরয়ি যেসব উদ্দেশ্য আছে তা বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অর্জিত হচ্ছে না। যার মূল কারণ দুইটি । ১. আদায়ের ত্রুটি এবং ২. বণ্টনের ত্রুটি। আদায়ের ত্রুটির ক্ষেত্রে উদাহরণ দেয়া যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতি বছর যে বিস্তর পার্থক্য রেখে ফিতরার সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করে তা আমরা কীভাবে এবং কয়জন যথাযথভাবে আদায় করি? সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন পরিমাণটা নির্ভর করবে ফিতরা আদায়কারীর অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর, তাই নয় কি? যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের মধ্যে ক'জনকে পাওয়া যাবে যে, তারা সর্বোচ্চ পরিমাণ দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন? অথবা কতজন আছেন যারা সর্বনিম্ন পরিমাণের চেয়ে বেশি দিয়ে আদায় করেন? হ্যাঁ, ফিতরার টাকা দিতে দিতে বেশি দিয়ে ফেলেন অনেক সময়; কিন্তু শরয়ি ভিত্তি হলো, যে ক'জনের ফিতরা আমি আপনি আদায় করছি সে হিসাবে সঠিক পরিমাণ আগেই নির্ধারণ করে নিচ্ছি কিনা? এটা খুবই জরুরি। বেশি দেয়া দোষের নয়। কিন্তু আর্থিক ইবাদতের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া জরুরি। বণ্টনের ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা আদায় করে থাকি। যেটা শরয়ি উদ্দেশ্য অর্জনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এভাবে কারও অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনা দুষ্কর। এসব ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা বেশি। যদি সরকার যথাযথ ভূমিকা পালন না করে, তাহলে সামষ্টিকভাবে পরিকল্পনা মাফিক তা ব্যয় করলে শরয়ি উদ্দেশ্য অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে আমরা আরও একটা ভুল করে থাকি। যেমন, গরিব-মিসকিন বিশেষ করে ভিক্ষুকদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি এবং তারা আমাদের কাছে এলে তাদেরকে দেই। কিন্তু এটা তাদের অধিকার। (সূরা আল জারিয়াত: ১৯)। তাদের কাছে পেঁৗছে দেয়া শরিয়তের নির্দেশ। সে ক্ষেত্রে দাতা নির্ধারণ করবে, কে বেশি হকদার। কাছের আত্মীয় এমন অনেকে আছে যারা কখনও চাইবে না; কিন্তু তারা হকদার। তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিতে হবে।এমনভাবে ফিতরা দেয়া দরকার, যাতে ঈদের দিনের খুশি সবার মাঝে স্থায়ী হয়। ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ