কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

নয়া অর্থমন্ত্রীর সামনে যে চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে

বণিক বার্তা ড. আর এম দেবনাথ প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫১

নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে শুভেচ্ছা, স্বাগত, অভিনন্দন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন ঐতিহাসিক ‘‌নয় ছয়’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছ থেকে। এখন এমন একটা সময় যখন আমাদের অর্থনীতি নানা জটিল সমস্যায় ভুগছে। কার্পেট তলায় শুধু ধুলা আর ধুলা। কোনটা রেখে কোনটায় তিনি হাত দেবেন তা তাকে অবিলম্বে ঠিক করতে হবে। থাকতে হবে তার নিজের ‘‌রোডম্যাপ’, যা তিনি নিজে তৈরি করবেন। দৃশ্যত যা বোঝা যাচ্ছে তার কর্মযজ্ঞের তালিকা অনেক বড়। রিজার্ভ সংকট, ডলার সংকট, ডলারের মূল্যনির্ধারণ, ব্যাংকের সুদহার নির্ধারণ ইত্যাদি বড় প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এর বাইরের সমস্যাগুলোও কম প্রকট নয়। তবে এর মধ্যে বহুল আলোচিত একটি সমস্যা আছে, যা নিয়ে সরকারকে ভীষণ বিব্রত হতে হচ্ছে অনেক দিন ধরে। সমস্যাটি ব্যাংক খাত সম্পর্কিত। ব্যাংকগুলোর সুদাসলে প্রচুর ঘাটতি। আমানতের অভাবের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে অতিরিক্ত ঋণবৃদ্ধির চাপ। ব্যাংকগুলোর মূলধন, ঘাটতি, খেলাপি ঋণ, খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন-স্বল্পতা, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট ইত্যাদির কথা খবরের কাগজ খুললেই কোনো না কোনো স্টোরি পাওয়া যায়। এসব পাঠ করে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। সরকার সমালোচিত হয় কারণে অকারণে। যে কারণে সরকার সবচেয়ে বেশি সমালোচিত তা হচ্ছে খেলাপি ঋণ (ক্ল্যাসিফায়েড লোন)। অর্থাৎ ঋণ নিয়ে যারা চুক্তি মোতাবেক অর্থ পরিশোধ করছে না বা করতে পারছে না—তাদের সমস্যা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কত, কারা এসব খেলাপি ঋণগ্রহীতা,


খেলাপি ঋণ আদায়ের অবস্থা কী? এসবই আলোচনার বিষয়। আমি এ বিষয়ে অনেকদিন ধরে লিখছি। দেখা যাচ্ছে, যতই লেখালেখি হচ্ছে, সমস্যা ততই তীব্র হচ্ছে। এসব অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাঙালির পুরনো প্রবাদ বাক্যই সঠিক। আমরা ছোটবেলায় গ্রামের বাজারে দোকানে দোকানে একটা বিজ্ঞপ্তি দেখতাম। তাতে লেখা থাকত ‘‌বাকির নাম ফাঁকি’, ‘‌আজ নগদ কাল বাকি’। বাকি মানে ক্রেডিট বা ঋণ অথবা ধার। ধারে মাল বিক্রি বাঙালি ব্যবসায়ীরা পছন্দ করত না। এ বিশ্বাসের মধ্যেই আমাদের দেশের ব্যাংকাররা ‘‌বাকির’ ব্যবসাটা করতে শুরু করে। এখন তা বিশাল বড় একটা ব্যবসা। ব্যাংকের সংখ্যাই ৬০-৬৫। অধিকন্তু রয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান ৫০-৫২ বছরে ‘‌বাকির’ ব্যবসা করে ক্রেডিট বা লোনের ব্যবসা করে পড়েছে গাড্ডায়। তাদের আজ দায়ী করা হচ্ছে খেলাপি ঋণের জন্য। অথচ এরই মধ্যে কিন্তু তাদের লোনের ব্যবসার ফল হিসেবে দাঁড়িয়েছে বিশাল এক বেসরকারি খাত, যা আজ সর্বগ্রাসী চরিত্র ধারণ করেছে। বেসরকারি খাতে ভালো কোম্পানি বা ঋণগ্রহীতা যেমন আছে, তেমনি আছে বজ্জাত ঋণগ্রহীতা। এরাই খেলাপি ঋণগ্রহীতা। এদের মধ্যে কাউকে কাউকে বলা হচ্ছে ইচ্ছাকৃত খেলাপি। কেউ এ সংজ্ঞার বাইরে। মুশকিল হচ্ছে, কে যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি, কে যে নয় তা চিহ্নিত করা বড়ই মুশকিল। ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে ব্যাংকের ঋণের টাকা ফেরত দিতে হবে না। মারাত্মক এক ধারণা, যা বাজার অর্থনীতিবিরোধী বিশ্বাস, কল্যাণমুখী বাজার অর্থনীতি তো বটেই। এ সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কী? খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা কী? আমি এ ব্যাপারে এখন আর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই। কেউ পছন্দ করুক বা না-ই করুক বর্তমান অবস্থা দেখে আমি ধরে নিয়েছি যে খেলাপি ঋণের টাকাকে শেষ পর্যন্ত ‘কস্ট অব ইন্ডাস্ট্রি লাইজেশন’ হিসেবে গণ্য করতে হবে। খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের ডজন ডজন মামলা, সারা দেশের মামলা, হলমার্কের ফলাফল দেখে আমাকে ধরতেই হচ্ছে খেলাপি ঋণের টাকা একমাত্র ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝড়’ ছাড়া সম্ভব নয়।


খেলাপি ঋণ তো চিহ্নিতই। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা আছে। এসব ঋণের টাকা দাবি তামাদি হয়নি, কিন্তু তা আদায়ও হচ্ছে না। কিন্তু যেসব ঋণ ‘খেলাপি’ নয়, পুনর্গঠিত ঋণ, তার অবস্থা কী? এসব ঋণ বড় ঋণগ্রহীতাদের। তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করেও কোনো ফল হবে না বিধায় এসব ঋণকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সুদহার কমানো হয়েছে। আগের সুদ মাফ করা হয়েছে, ঋণ পরিশোধে ‘গ্রেস পিরিয়ড’দেয়া হচ্ছে, সুদ হিসেবে ‘মরেটরিয়াম’ নীতি চালু করা হয়েছে। এসব কারণে সেসব ঋণ খেলাপি নয়। এরা ‘ভালো’ ঋণ, ‘খেলাপি ঋণ’ হিসেবে এসব ঋণ গণ্য নয়। অথচ বাস্তবে তার অবস্থা বর্তমানে কী, ভবিষ্যতে কী হবে তা মোটামুটি আমরা সবাই বুঝতে পারছি। অনেকেই মনে করেন এসব পুনঃকাঠামো ঋণও ‘খেলাপি ঋণের’ অংকের সঙ্গে যোগ করা উচিত। তাহলে প্রকৃতপক্ষে কত পরিমাণ খেলাপি ঋণ হবে তা সহজেই অনুমেয়। নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে, সংজ্ঞা পরিবর্তন করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন দেখানো হয় মোটামুটি ১০ শতাংশের মতো। কোনো ব্যাংকের বেশি, কোনো কোনো ব্যাংকের কম। সার্বিকভাবে কারো কারো আশঙ্কা খেলাপি ঋণের পরিমাণ হতে হবে ২৫-৩০ শতাংশ, যা টাকার অংকের ৪-৫ লাখ কোটি টাকা হতে পারে। এসব ঋণ আদায় বর্তমান অবস্থায় মোটামুটি অসম্ভবই ধরে নেয়া যায়। জামানতের স্বল্পতা, জামানতের অনুপস্থিতি, জায়গা-জমির মালিকানায় ত্রুটি, জামানতের মূল্যনির্ধারণে অবাস্তবতা, আদালতে মামলা, উচ্চতর আদালতে মামলা, মামলার দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি কারণে এসব খেলাপি ঋণের টাকার ভবিষ্যৎ কী তা বলা মুশকিল। আমি মোটামুটি হতাশই। তবে যদি বেসরকারি খাত যেভাবে টাকা আদায় করে সেভাবে করা যেত, তাহলে হয়তো কিছু ফল পাওয়া যেত। একটি গল্প বলি। গ্রামের বাজার। এক ব্যক্তিকে কয়েকজন লোক মারধর করে রাস্তায় শুইয়ে দিয়েছে। পথচারীরা দয়াপরবশ হয়ে পিটুনিদাতাদের জিজ্ঞাসা করেন কেন তাকে মারা হচ্ছে। জবাব এলো ওই লোকের কাছে টাকা পাই। দেনার টাকা সে ফেরত দিচ্ছে না। দিই দিই করে আজ দুই বছর। তখন পথচারীরা ঋণ লোকটাকে জিজ্ঞাসা করল টাকা ফেরত দিচ্ছে না কেন? উত্তর: টাকা অনেক আগেই দিয়ে দিতাম। দিইনি কারণ আজকে যেভাবে পিটিয়ে টাকা ফেরত চাইছে সেভাবে কখনো চায়নি। এখন যখন পিটিয়ে পিটিয়ে চাইছে তাই টাকা ফেরত দেব।


এ গল্পের সঙ্গে আমাদের কৃষকের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায়ের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ‘‌সার্টিফিকেট’ মামলা করে কৃষকের কোমরে দড়ি দিয়ে ঋণের টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এসব খবর এখন প্রায়ই কাগজে ছাপা হয়। এ হচ্ছে ‘‌সার্টিফিকেট’ মামলা। আর আমাদের ব্যাংকের ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছে অর্থঋণ আদালত। এতে কোমরে দড়ি দেয়ার বিধান/ব্যবস্থা নেই।ওই আইনের ফাঁকফোকরে কোটি কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ঋণগ্রহীতারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ ৪-১০-২০ হাজার টাকার ঋণের জন্য কোমড়ে দড়িবাঁধা হচ্ছে। এ রকম অবস্থান নেয়া কি নতুন অর্থমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব অথবা সরকারের পক্ষে। আমি নিশ্চিত ‘‌কড়া’ ব্যবস্থা নেয়া শুরু করলে, দু-চারটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারলে বেশকিছু টাকা আদায় করা সম্ভব। কিন্তু চোখ বুজে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে ভোটে নির্বাচিত সরকার এ ব্যবস্থা গ্রহণে যেতে পারবে না, পারবে বলে মনে হয় না। যা বললাম ওপরে তা বলার উদ্দেশ্য আমার নয়। আমার উদ্দেশ্য অন্য একটা সমস্যার কথা বলা। ‘‌নয়-ছয়’ মন্ত্রী একবার ব্যাংকারদের বলেছিলেন, ঋণ দেয়ার আগে একটি বিষয় বিবেচনা করে দেখতে। দেখতে হবে ঋণগ্রহীতার ছেলেমেয়েরা কোথায়? দেশে, না বিদেশে? তারা শিল্প-ব্যবসা চালানোর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা পেয়েছে বা পাচ্ছে কিনা? তিনি তার উপদেশ বা আদেশ কার্যকর করতে পারেননি। কারণ দেখা যাচ্ছে, শিল্প ও বড় ব্যবসায়ীদের অনেকেরই ছেলেমেয়েই বিদেশে অবস্থানরত। পরিবার বিদেশে। সেখানে বাড়িঘর আছে। অনেকেই বিদেশের নাগরিক। ‘লোম বাছতে কম্বলই মিছে’ হয়ে যাবে—এমন একটা অবস্থা কাগজেই দেখেছিলাম দেশের খুবই বড় প্রথম প্রজন্মের একটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক অর্থ সংকটে তার কারখানা বিক্রি করতে চেয়ে ব্যর্থ হন। ক্রেতা পাওয়া যায়নি দেশে বা বিদেশে। একমাত্র মেয়ে বিদেশে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও