কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা গ্রাম। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা প্রত্যাহার

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৭, ২২:০৫
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭, ২২:০৫

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে নৃশংস গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটিকে দেওয়া সব ধরনের সামরিক সহায়তা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি অনলাইন

২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে সামরিক সহায়তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের ভ্রমণের ব্যাপারে দেওয়া আর্থিক সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশটির সাবেক ও বর্তমান সেনাসদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ছবি: ফোকাস বাংলারোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ছবি: ফোকাস বাংলা

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নুয়ের্ট এ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করে বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা এবং রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে চালানো ব্যাপক সহিংসতা ও নির্যাতনের ব্যাপারে আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই নিপীড়ন ও নৃশংস ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ’।

এর আগে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছিল, মিয়ানমার যাতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে রাখাইনে যাওয়ার অনুমতি দেয়, সেজন্য চাপ দিতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে ওয়াশিংটন মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তা ছাড়া মিয়ানমারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের ও আন্তর্জাতিক আইন পর্যালোচনা করছে ওয়াশিংটন।

বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা জনস্রোত। ইউএনএইচসিআর-এর ড্রোন থেকে ১৬ অক্টোবর সোমবার তোলা ছবি।

বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা জনস্রোত। ইউএনএইচসিআর-এর ড্রোন থেকে ১৬ অক্টোবর সোমবার তোলা ছবি। 

এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্ব রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের জন্য দায়ী বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। সেসময় তিনি মিয়ানমারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, বিশ্ব মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার পক্ষে দাঁড়াবে না এবং কেবল দর্শক হয়েও থাকবে না।

এর আগে একই অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আরব সাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা প্রত্যাহারের মধ্যদিয়ে মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ আরও জোরদার হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ৭ লাখেরও বেশি। এদিকে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, ১৫ অক্টোবর থেকে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে কিছু এরিয়াল ফুটেজ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উখিয়ার পালংখালির কাছে নাফ নদী পার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া জনশূন্য রাখাইন রাজ্য। ছবি: সংগৃহীত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া জনশূন্য রাখাইন রাজ্য। ছবি: সংগৃহীত 

পরিস্থিতির ভয়াবহতায় জাতিসংঘ মনে করছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে।  

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।

প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা; যাদের ৬০ ভাগই নারী ও শিশু। ফাইল ছবি

প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা; যাদের ৬০ ভাগই নারী ও শিশু। ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ হাজির করেছে। অ্যামনেস্টি বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি-ভিডিও এবং সব ধরনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, ‘রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।’

পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে নতুন করে গড়ে ওঠা একটি শরনার্থী শিবির। ছবি: ফোকাস বাংলা

পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে নতুন করে গড়ে উঠা একটি শরণার্থী শিবির। ছবি: ফোকাস বাংলা

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম। সংস্থাটি আরও জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। 

প্রিয় সংবাদ/শান্ত