কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মংডুর রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। ছবিটি ২১ সেপ্টেম্বর স্যাটেলাইট থেকে তোলা হয়েছে। সংগৃহীত ছবি

রাখাইনে ২৮৮টি রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে: এইচআরডব্লিউ

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৫৭
আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৫৭

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় মদদে দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নিধন অভিযান ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু হওয়ার পর ২৮৮টি গ্রাম আগুনে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নতুন করে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে জাতিগত নিধন অভিযানে ধ্বংসযজ্ঞের এই চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, আগুন দেওয়া প্রতিটি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। 

১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার এইচআরডব্লিউ ওই ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণস্বরূপ ছবি উপস্থাপন করেছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের হাজার হাজার স্থাপনা ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পরই এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এর আগে সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল বর্মী সেনারা অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ২১৪টি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। 

এইচআরডব্লিউ’র ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, মাত্র চার সপ্তাহের ব্যবধানের পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কেন বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে স্যাটেলাইটে তোলা ছবিগুলোই তার প্রমাণ। সেখানে শত শত গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তারা হত্যা, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে।

ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাগ্রাম গুলোর পাশেই অবস্থিত যেসব বার্মিজ বৌদ্ধ গ্রাম ছিল, সেগুলো আগের মতোই অক্ষত আছে। অর্থাৎ বেছে বেছে শুধু রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতেই আগুন দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৮ আগস্ট মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সাং সু চি’র জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘৫ সেপ্টেম্বরের পর নতুন করে কোনো অভিযান চালানো হয়নি’। কিন্তু স্যাটেলাইটের ছবিগুলো সুচির ওই বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছে।

সংস্থাটি জানায়, এমন ৬৬টি গ্রামের ছবি তাদের হাতে রয়েছে, যেসব গ্রামে আগুন দেওয়া হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বরের পর।

এইচআরডব্লিউ জানায়, উত্তর রাখাইনের মংডু, রাথেডং, বুথিডং এবং আশপাশের মোট ৮৬৬টি গ্রামের ওপর নজরদারি করছিল তারা। স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে মংডুতে। ওই এলাকার ৬২ শতাংশ গ্রাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে যার ৯০ শতাংশই হয়েছে ২৫ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এ সময় দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকলেও তা নেভানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৮২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এদিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলার সময় এখনও হয়নি বলে জানান সংস্থাটির মুখপাত্র। জাতিসংঘ আরও জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২১৪টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম। সংস্থাটি জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। 

প্রিয় সংবাদ/শান্ত