কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

নেপিদোতে ভাষণ দেন পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: সংগৃহীত

পোপের বক্তব্যে অনুপস্থিত ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি

হাসান আদিল
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০১৭, ২১:৩০
আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭, ২১:৩০

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে দেওয়া ভাষণে খ্রিস্টান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের বক্তব্যে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি। সুকৌশলে শব্দটিকে পাশ কাটিয়ে তিনি দ্বন্দ্ব, বিরোধ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির আর্চ বিশপের অনুরোধই মেনে নিলেন পোপ।

২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার ভাষণ দেন বিশ্বের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিরোধ চলছে। ধর্মীয় ভিন্নতাকে বিভেদ ও অবিশ্বাসের উৎস করা উচিত নয়।’ 

এ ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর প্রতি শ্রদ্ধা’ রাখা জরুরি উল্লেখ করে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ন্যায়বিচারের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনোভাবের মাধ্যমে শান্তি ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।’ 

এর আগে পোপ মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং ও ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি’র সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রসঙ্গত, চার দিনের সফরে গতকাল ২৭ নভেম্বর সোমবার মিয়ানমারে পৌঁছান পোপ ফ্রান্সিস। মানবাধিকার সংগঠনগুলো পোপের প্রতি রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।

নির্যাতন থেকে বাঁচতে গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তা ছাড়া এর আগে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা প্রায় ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে।

২৫ আগস্ট থেকে অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ করেছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ হাজির করেছে।

সংস্থাটি বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি-ভিডিও এবং সব ধরনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, ‘রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।’

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

প্রিয় সংবাদ/শান্ত