কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা স্রোত। ছবি: ফোকাস বাংলা

দিনে ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা মিয়ানমারের

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৪২
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৪২

(প্রিয়.কম) রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে দিনে গড়ে প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী ফেরত নেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সরকার জানিয়েছে, ১৯৯৩ সালে দুই দেশের স্বাক্ষরিত শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তির চারটি প্রধান মূলনীতির অধীনে তাদের ফেরত নেওয়া হবে। মিয়ানমারের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতী-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ মিয়েন্ত কিয়াইং ইরাবতী-কে বলেন, ‘আমরা একটি তল্লাশি চৌকিতে দিনে শুধুমাত্র ১৫০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করতে পারি।’

এর আগে দেশটির সরকার জানিয়েছিল, বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ‘তুংপিও লিতওয়ে’ ও এনগা খু ইয়া’ গ্রামের দুটি তল্লাশি চৌকির মাধ্যমে ফেরত নেওয়া হবে। মিয়ানমারের ওই সচিবের মন্তব্য অনুসারে প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাতে ফেরত নিতে পারবে দেশটি। 

তবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তিতে সংশোধন চায় বাংলাদেশ- যেন বাংলাদেশে থাকা সকল রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরতে পারেন। কিন্তু ইরাবতী'র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শরনার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ে প্রধান চার মূলনীতির পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন ইউ মিয়েন্ত কিয়াইং।

আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি। ছবি: ফোকাস বাংলা

আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি। ছবি: ফোকাস বাংলা

তবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে হলে দেশটির সরকারের চারটি শর্তের কথা জানান ওই কর্মকর্তা। তার উল্লিখিত চারটি শর্ত হচ্ছে, মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে হবে, স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনে ইচ্ছুক, ক্যাম্পে/শিবিরে জন্ম নেওয়া শিশুর বাবা-মাকে মিয়ানমারে বসবাসের প্রমাণ থাকতে হবে এবং যেসব শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার দলিল বাংলাদেশের আদালত থেকে নিতে হবে।

ইউ মিন্ত কিয়াং আরও বলেন, ফিরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে যদি কোনো ‘সন্ত্রাসী’ থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠিক কতসংখ্যক শরণার্থীকে তারা ফিরিয়ে নেবে, সে সম্পর্কে কিছু জানাননি তিনি। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইউ মিন্ত কিয়াং জানান, সংখ্যা নিয়ে তর্কের কিছু নেই। তারা মিয়ানমারের বাসিন্দা, এমন প্রমাণ না দিতে পারলে মিয়ানমার তো তাদের গ্রহণ করছে না।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

তবে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, ১৫ অক্টোবর থেকে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে কিছু এরিয়াল ফুটেজ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআইচসিআর। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উখিয়ার পালংখালির কাছে নাফ নদী পার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় জাতিসংঘ মনে করছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে। 

বালুখালীতে নতুন করে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ছবি: ফোকাস বাংলানতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বালুখালীতে গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাম্প। ছবি: ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ হাজির করেছে। অ্যামনেস্টি বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি-ভিডিও এবং সব ধরনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, ‘রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।’

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ করেছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম। সংস্থাটি আরও জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। 

প্রিয় সংবাদ/শান্ত