২২ বছর বয়সী রহিমল মোস্তফা। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের প্রতি রোহিঙ্গা রহিমলের বার্তা
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:০৯
(প্রিয়.কম) চলমান সহিংসতার হাত থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ফইরা গ্রাম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন রহিমল মোস্তফা। কয়েক সপ্তাহ আগে আত্মরক্ষার্থেই পালিয়ে আসেন তিনি। মিয়ানমার সরকারের এমন আচরণ তাকে দুঃখে ভারাক্রান্ত করে রেখেছে। এ সমস্যার সমাধান এবং পুনরায় শান্তিতে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়ে বিশ্ববাসীর প্রতি একটি বার্তা দিয়েছেন তিনি। যা প্রিয়.কম এর পাঠকবৃন্দের জন্য তুলে ধরা হলো-
আমার নাম রহিমল মোস্তফা। আমার বয়স ২২ বছর। আমি এখানে আসার আগে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতাম। আমি খুব উপভোগ করতাম এ ধর্মীয় শিক্ষা। মাঝে মাঝে আমি শিশুদের শেখাতে চেষ্টা করতাম। আমি যেখানে বসবাস করতাম সেখানের অধিকাংশ লোকজনই ছিল অশিক্ষিত।
আমার লক্ষ্য ছিল একজন শিক্ষক হওয়া। আমি আমার গ্রাম ফইরাতে সুখেই দিনাতিপাত করছিলাম সেনাবাহিনীর আক্রমণের পূর্বে পর্যন্ত।
তখন ছিল রাত তিনটা। আমাদের ঘরবাড়িতে সেনাবাহিনী আগুন ধরিয়ে দিলো। একই সঙ্গে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে লাগল। আমরা বাড়ি ছেড়ে বের হতে পারছিলাম না, যদি আমাদের তারা দেখে ফেলে তবে গুলি ছুড়তে বিন্দুমাত্র দেরি করবে না। সুতরাং আমরা বাড়ির মধ্যেই লুকিয়ে ছিলাম।
অবশেষে তারা আমাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেল, আগুন ধরিয়ে দিলো। জানালা দিয়ে গুলি ছুড়তে লাগল। এর মধ্যে একটি গুলি আমার হাঁটুতে এসে আঘাত করল। আমাদের গ্রামের বহু লোক সে রাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আমি নিজের চোখেই তিন প্রতিবেশীর মরদেহ দেখেছি।
আমার পিতা এবং ভাই আমাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন চিকিৎসার জন্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহিংসতার মধ্যে আমাকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য ভর্তি করতে রাজি হলো না। এমতাবস্থায় আমার আত্মীয়রা আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন। তারা পাহাড় ডিঙিয়ে, সেনাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়েই তবে আসতে পেরেছেন।
এটা খুবই দীর্ঘ এবং অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক ভ্রমণ ছিল। এসময় আমার ক্ষতস্থানটিতে ইনফেশন হয়ে যায়। আমরা মিয়ানমারে সবকিছু ফেলে চলে এসেছি তা চিন্তা করে আমি খুবই দুঃখিত বোধ করতে থাকি।
নিরাপদভাবে বাংলাদেশে পৌঁছতে পেরে এবং আসার পর আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা মেডিসিনস স্যানস ফ্রনটিয়ার্স (এমএসএফ) এর পক্ষ থেকে সামান্য পরিমাণে চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার কারণে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ বোধ করছি। কিন্তু আমাদের কোনো আশ্রয় নেই, নেই কোনো ভবিষ্যৎ।
আমাদের ভবিষ্যৎ আছে বলে তখনই মনে করতে পারব যখন দেখব বাড়িতে শান্তি আছে। কিন্তু যা বর্তমানে আমাদের সামনে ঘটছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সূত্র: আল জাজিরা
প্রিয় সংবাদ