কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের গেইটের সামনে ছাত্রাবাসের ব্যানারে অর্থসংগ্রহ করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গাদের সাহায্যের নামে টাকা উত্তোলনের হিড়িক!

ইয়াহ্ইয়া মারুফ
কন্ট্রিবিউটর, সিলেট
প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:২০
আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:২০

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্টির ওপর দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যার কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে চট্টগ্রামের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার নামে সিলেটজুড়ে চলছে টাকা উত্তোলনের হিড়িক। প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে নগরীর মসজিদগুলোয় নামাজের পরপর, রাস্তায়-রাস্তায়, বিভিন্ন গাড়ির যাত্রী, পয়েন্টে পয়েন্টে লোকজনের কাছ থেকে এসব টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।

এভাবে লাগামহীনভাবে অর্থসংগ্রহকে ‘চাঁদাবাজি’ উল্লেখ করে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার প্রিয়.কম-কে বলেন, এই চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগিতা চেয়েছি। জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য এভাবে অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজন নেই।

নগরী ঘুরে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ট্রাকযোগে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর ইমাম সমিতি ও ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে এসব অর্থসংগ্রহ করা হচ্ছে। ট্রাকে মাইক লাগিয়ে ‘মজলুম রোহিঙ্গা মুসলিমদের’ জন্য অর্থ প্রদানের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এসব আহ্বানে সাড়া দিয়ে টাকাও দিচ্ছেন অনেকে।

সিলেট মহানগর ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব প্রিয়.কম-কে বলেন, ২০০টি তাবু, ৩০টি টিউবওয়েল, ৫০টি স্যানেটারি ল্যাক্টিন ও কিছু নামাজের স্থান করে দেয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলনের টার্গেটে ১৫ দিনব্যাপী কর্মসুচি হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে ৯ দিনে ট্রাকযোগে সাড়ে ৫ লাখ ও বিভিন্ন মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমেসহ সব মিলিয়ে ২০-২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি। আজ (শুক্রবার) রাত ১০টায় সাতদিনের জন্য আমাদের ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার যাচ্ছে।

এ ছাড়া সোবাহানীঘাট মাদ্রাসা ও এতিমখানার উদ্যোগেও সোবহানীঘাট পয়েন্টে মাদ্রাসা ছাত্রদের অর্থ সংগ্রহ করতে দেখা যায়। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন মসজিদে জুম্মার নামাজের পরপর লিফলেট বিতরণ ও অর্থসংগ্রহ করে জামিয়া মাহমুদিয়া ইসলামিয়া সোবহানীঘাট মাদরাসার ছাত্ররা। এতে মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শায়খ শফীকুল হক আমকুনী সর্বস্তরের জনগনকে নগদ অর্থ, শাড়ি-লুঙ্গি, কম্বল ইত্যাদি দ্বারা তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

মাওলানা শায়খ শফীকুল হক আমকুনী প্রিয়.কম-কে বলেন, এ পর্যন্ত ৭০-৮০ হাজার টাকা উঠছে। আমরা আরও দু-একদিন করে নিয়ে যাব কক্সবাজার। এ ছাড়াও নগরীর পাড়া-মহল্লায় বিভিন্নভাবে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।

‘হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা’ ব্যানারেও সিলেটসহ সাড়া দেশ থেকে অর্থসংগ্রহ করা হয়। সংগঠনটি বৃহস্পতিবার সিলেট থেকে টেকনাফ অভিমুখে রোডমার্চ উদ্দেশ্যে ৬৮টি গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে যাত্রা করলে পুলিশ বাধা দেয়।

পুলিশ জানায়, ৬৮টি গাড়ির মধ্যে মাত্র একটি গাড়িতে ত্রাণ ছিল। বাকিগুলোতে শুধু মানুষ থাকায় যেতে দেওয়া হয়নি।

‘হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী প্রিয়.কম-কে বলেন, আমরা ত্রাণের জন্য কোনো টাকা সংগ্রহ করিনি। রোডমার্চ-এ গাড়ি বেশি দেখাতে গণসংযোগ করেছি। আর গাড়ির খরচের জন্য বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে সহযোগিতা চেয়ে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭ টাকা উত্তোলন করি। খরচ হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ২৫৩ টাকা। ঘাটতি আছে ৩৮ হাজার টাকা।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন বিপণী বিতানে ও এমসি কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কলেজ ক্যাম্পাসে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তিনি জানান, ২০-২৫ লাখ টাকার মাল-ছামানা নিয়ে আগামী রোববার কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। আজাদের ধারণা, এই ভালো কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য কেউ ইন্ধন দিয়ে হয়তো বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর টিলাগড়ে সংঘর্ষের সৃষ্টি করে। প্রিয়.কমর কাছে আজাদ দাবি করেন, ‘এ নিয়ে টিলাগড়ের যারা ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা করছেন তাদের ফেসবুক দেখলেই বুঝা যাবে এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত।’

অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে এমসি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আলী হায়দার বলেন, সংগৃহীত অর্থ কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে সেখানে দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো সহিংস অভিযানে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পোড়ানো, গণহত্যা ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘ বলছে, এর জের ধরে ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ২৬ আগস্ট থেকে সিলেটে শুরু হয় অর্থসংগ্রহ। নগরীতে প্রতিদিনই ট্রাকসহযোগে ও দানবাক্স নিয়ে হেঁটে হেঁটে ত্রান সংগ্রহ করছে বিভিন্ন সংগঠন। বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন ও বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার উদ্যেগেও ত্রাণের পাঠানোর জন্য অর্থসংগ্রহ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার বলেন, এভাবে অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে ফেসবুকে একটি একাউন্ট নাম্বার দিয়ে জানিয়েছেন কেউ রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা করতে চাইলে এই নাম্বারে প্রেরণ করতে পারেন। ফলে এরপর আর ব্যক্তি ও অন্য সংগঠনের উদ্যোগে টাকা উত্তোলনের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে টাকা তোলা হচ্ছে। এভাবে টাকা উত্তোলন বন্ধে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দিয়েছি। আর নগরীতে রোহিঙ্গাদের নামে টাকা উত্তোলন বন্ধে সিলেট মহানগর পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি।

জেলা প্রশাসক মহুদয় পুলিশকে বললে, পুলিশ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা প্রিয়.কমকে বলেন, নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা ভালো কাজ কিন্তু লাগামহীনভাবে অর্থসংগ্রহের নামে চাঁদাবাজি হোক সেটা আমরাও চাচ্ছি না। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর থেকে নগরীতে নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল