কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ইয়াসিন কবির জয়

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘে পাঁচ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

হাসান আদিল
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:১৪
আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:১৪

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যার কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘে পাঁচটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে সংস্থাটির সদর দপ্তরে তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাঁচটি প্রস্তাব হলো-

* অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা। 

* অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা। 

* জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা।

* রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। 

* কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় দেওয়া ভাষণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্প ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার হৃদয় আজ দুঃখে ভারাক্রান্ত। কেননা আমার চোখে বারবার ভেসে উঠছে ক্ষুধার্ত, ভীত-সন্ত্রস্ত এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি। আমি মাত্র কয়েক দিন আগেই আমার দেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। যারা ‘জাতিগত নিধনে’র শিকার হয়ে নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত। অথচ তারা হাজার বছরেরও অধিক সময় মিয়ানমারে বাস করে আসছেন। এদের দুঃখ-দুর্দশা আমি গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর আমার ছোট বোনকে নিয়ে ছয় বছর উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়েছি।

রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে নিজ ভূখণ্ড হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত আট লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। আপনারা সকলেই জানেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান নৃশংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থার ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এ নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে, গত তিন সপ্তাহে চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া ঠেকানোর জন্য মিয়ানমার দেশটির অভ্যন্তরে সীমানা বরাবর স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। এতে আমরা ভীষণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এ সব মানুষ যাতে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন এখনই তার ব্যবস্থা করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সম্প্রতি ২৫শে মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। মূলত ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এই গণহত্যার সূচনা করেছিল। এ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত মূল অভিযুক্তদের আমরা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করেছি। বিশ্বের কোথাও যাতে কখনই আর এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সংঘটিত না হয় সে জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।  

সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। প্রস্তাবগুলো হলো-

* সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। 

* সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।

* শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিবাদ মীমাংসা করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম, বর্ণ বা গোত্র নেই। নিজে বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি।

ধর্মের নামে সহিংস জঙ্গিবাদ গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, সহিংস জঙ্গিবাদ বিস্তার রোধে তৃণমূল পর্যায়ে আমরা পরিবার, নারী, যুবসমাজ, গণমাধ্যম এবং ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করেছি। বৈশ্বিকভাবে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কার্যকর পদক্ষেপ তুলে ধরতে গিয়ে বন্যা এবং অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ভাষণে।

প্রিয় সংবাদ/মিজান