কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মিন্নির জামিন মেলেনি

মানবজমিন প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। রোববার সকালে মিন্নির জামিন আবেদন করে আদালতের কার্যতালিকায় তোলা হয় মামলাটি। পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। দুই পক্ষের শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আদালত আদেশ দেন।আদালতে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। সঙ্গে ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবীরা।মিন্নির জামিনের জন্য আদালতে শুনানিতে তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম, গোলাম মোস্তফা কাদের, দীপক চন্দ্র হালদার, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাহিদা বেগম, আবদুর রশীদ ও মো. মিজানুর রহমান। আদালতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ৪ জন প্রতিনিধি, ব্লাস্টের পটুয়াখালী ও বরিশাল প্রতিনিধিসহ বরগুনা আদালতের ৩০ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।মিন্নির জামিনের আবেদন নাকচ হলে তার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে জানতে চান, জামিনের আবেদন কেন নাকচ করা হলো?তখন আদালত বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তাছাড়া এই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া আরো দুই আসামি রাব্বি আকন ও রিফাত ফরাজী বলেছেন, নয়নের সঙ্গে পরিকল্পনা করে আয়েশা সিদ্দিকা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় আজকে আমরা বিস্তারিত শুনানি করেছি। যেহেতু মিন্নি এখনো রিমান্ডে ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন এবং রাব্বি ও রিফাত ফরাজী দাবি করছে যে, মিন্নি এর সঙ্গে জড়িত সে কারণে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন।রাতে এমপি শম্ভুর অফিসে মিন্নির আইনজীবী: বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন রিফাত হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া মিন্নির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সংসদ সদস্য শম্ভুর বিরুদ্ধে মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করছেন শুরু থেকেই। তার সঙ্গেই আইনজীবীর এমন বৈঠকের সমালোচনা করেছেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।গত শনিবার রাতে বরগুনার সদর রোডের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ব্যক্তিগত ল’ চেম্বারের পেছনের একটি কক্ষে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামকে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে বরগুনা বারের সভাপতি আবদুর রহমান নান্টুও ছিলেন। এর একদিন আগে গত শুক্রবার মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর গণমাধ্যমে দেয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন, আমার মেয়ে জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এ সবকিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে রক্ষা করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।তবে শনিবার রাতে সংসদ সদস্যের বরগুনার সদর রোডের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তার সাক্ষাতের জন্য এ প্রতিবেদক অপেক্ষমাণ থাকাকালে ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বরগুনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলামকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। কক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্যের পুত্র সুনাম দেবনাথ ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান বাহাদুর। তারা কক্ষের ভেতরে প্রবেশের পর ভেতর থেকে সুনাম কক্ষের দরজা আটকে দেন। এ সময় কক্ষের বাইরে নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফও অপেক্ষমাণ ছিলেন। পরে ৯টা ৫৩ মিনিটের দিকে সুনাম দেবনাথ কক্ষ থেকে বের হয়ে দুলাল শরীফের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন। এরপর দুলাল শরীফ চেম্বার থেকে দ্রুত বের হয়ে যান। পরে রাত ১০টা ১৫ মিনিটে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম, বারের সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান বাহাদুর সংসদ সদস্যের কার্যালয় ত্যাগ করেন। তারা প্রায় ৩০ মিনিটের মতো সংসদ সদস্যের কার্যালয়ে অবস্থান করেন।সংসদ সদস্যের কার্যালয় ত্যাগ করার সময় তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এরপর তাদের ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্যের কাছে আসতেই পারে। এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।সংসদ সদস্য কী তাদের ডেকেছিলেন, নাকি তারা ইচ্ছা করেই সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপি বারের সভাপতিকে ফোন দিয়েছিলেন, তিনি আমাকে জানানোর পর আমি সভাপতির সঙ্গে এসেছি।এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাদের বুঝতে আর কিছু বাকি আছে? সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মিন্নির আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট আসলাম সংসদ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,  কোনোভাবেই পারেন না।মিন্নির আইনজীবী কেন দেখা করতে এসেছিলেন, জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, তারা চা খেতে এসেছিলেন।মিন্নির বিষয়ে বরগুনার নারী সংগঠনগুলোর ভূমিকা রহস্যজনক: রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও গ্রেপ্তারকৃত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে পুলিশ নির্যাতন করছে এমন অভিযোগ করেছেন তার বাবা। স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের ভয়ে মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন না কোনো আইনজীবী এমন অভিযোগও করা হয়েছে। অন্যদিকে নারী অধিকারের কথা বলে বরগুনার এমন কোনো নারী সংগঠনও মিন্নির জন্য দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি নেয়নি। আইনি সহায়তা প্রদান করে এমন সংগঠনগুলো কেন মিন্নির জন্য কথা বলছে না- এ রহস্যই এখন বরগুনা জেলার সাধারণ মানুষের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে।বরগুনা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন কামাল বলেন, সারা দেশে দেখি নির্যাতিত নারীদের অধিকার নিয়ে নারী সংগঠন বিভিন্ন সময় সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। কিন্তু মিন্নির বিষয়ে বরগুনায় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি দেখিনি।সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মো. শামসউদ্দীন খান বলেন, মিন্নির বিষয়টি স্থানীয় নারী সংগঠনগুলোর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা উচিত ছিল। সামাজিকভাবে জনসচেতনতা তৈরি করে প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে মিন্নির বাবার অভিযোগ খতিয়ে দেখা উচিত ছিল।মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, নারী সংগঠনগুলো শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্যই ফোন দেয় কিন্তু তাদের আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।মিন্নির বিষয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের জন্য প্রেক্ষাপট ভিন্নভাবে তৈরি হয়েছে এমনটি জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির বরগুনা জেলা কমিটির সভানেত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের সকল নারী নিরাপদে থাকবে কিন্তু মিন্নির মানবাধিকার লংঘন হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্থানীয় ভিন্ন একটা প্রেক্ষাপট আছে বলে কিছু করা যায়নি।বিষয়টিতে অনেকটা দায় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এমনটি বলছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরগুনা জেলা কমিটির সভাপতি নাজমা বেগম। তিনি দোষীদের শাস্তি দাবি করেন এবং মামলাটি তদন্তাধীন উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।নিরাপত্তাহীনতায় মিন্নির পরিবার, ভয়ে বিদ্যালয়ে যায় না ভাইবোন: রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর মিন্নির বাবার বাড়ি থেকে পুলিশের ডিউটি পোস্ট উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তার পরিবারের সদস্যরা। প্রভাবশালী মহলের ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মিন্নির ছোট ভাইবোন।জানা যায়, মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের চার ছেলেমেয়ে। বড় মেয়ে ফাতিমা আক্তার মুনাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে বরগুনা পৌর শহরের কাঠপট্টি এলাকায়। এরপরই মিন্নি। ছোট মেয়ে সামিরা মেঘলা বরগুনার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ও ছোট ছেলে আবদুল মুহিত কাফি বরগুনার কলেজ রোড এলাকার ক্যালিক্স একাডেমির কেজি-টু শ্রেণির ছাত্র। বোন মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর আতঙ্কিত ছোট ভাইবোন বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।গত শনিবার বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা মাইঠা এলাকায় মিন্নির বাবার বাড়িতে গিয়ে ছোট বোন সামিরা মেঘলার সঙ্গে কথা হয়। সে বলে, আমরা ভয়ে আছি। আমার দুলাভাইকে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এখন বোনকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে যেতে ভয় লাগে। মনে হয় কেউ আমার ওপর হামলা করতে পারে।মিন্নির ছোট ভাই আবদুল মুহিত কাফি বলে, আমার বিদ্যালয়ের সামনেই রিফাত ভাইয়াকে কুপিয়ে মারা হয়েছে। এখন আমার স্কুলে যেতে ভয় লাগে।মিন্নির বাবার বিরুদ্ধে মামলা করবেন রিফাতের বাবা: রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন রিফাতের বাবা দুুলাল শরীফ। রিফাত হত্যায় জড়িত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত ফাঁসির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি। রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির দ্বিতীয় বিয়ের সময় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগে এ মামলা করবেন বলে তিনি জানান।রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরগুনা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বরগুনার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিল।এ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ, মা ডেইজি বেগম, একমাত্র বোন ইসরাত জাহান মৌ, চাচা আবদুল লতিফ শরীফ, আবদুল আজীজ শরীফ ও চাচাতো বোনরা।মানববন্ধন শেষে বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হওয়ার পরও মিন্নির পরিবার সেই তথ্য গোপন করে আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়। মূলত এ কারণেই আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। এ হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নিও জড়িত। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজেও তার প্রমাণ রয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে