কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

চট্টগ্রামে মুসল্লিদের বিক্ষোভ ইসকনের দুঃখ প্রকাশ

মানবজমিন প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

‘ফুড ফর লাইফ’ শিরোনামে চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন কর্তৃক মুসলিম শিশুদের প্রসাদ খাইয়ে মন্ত্র পাঠ করানোর প্রতিবাদে ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মুসল্লিরা। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে কোতোয়ালি গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন (ইশা) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি রিদওয়ানুল হক শামসী ও সাধারণ সমপাদক মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান। মিছিলের আগে আন্দরকিল্লা মোড়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রিদওয়ানুল হক শামসী। তিনি বলেন, হাজার বছর ধরে এদেশে হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। কিন্তু ইসকন নামের এই উগ্রবাদী সংগঠন শান্তি প্রিয় বাংলাদেশে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা মুসলিম শিশুদের মুখে দেবদেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রসাদ খাইয়ে হরে রাম, হরে কৃষ্ণ পাঠ করিয়ে চরম অন্যায় করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ইতিপূর্বে এ সংগঠন বিভিন্ন অপকর্মের জন্য বারবার সমালোচিত হয়েছে। আমরা আজ বিশাল সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি। এর আগে বৃহস্পতিবার বাদ আছর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ইসকন কর্তৃক মুসলিম ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত, ভারতে ‘জয় শ্রীরাম জয় হনুমান’ স্লোগান দিয়ে মুসলিম নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা। হাটহাজারী উপজেলার ডাকবাংলো চত্বরে মুসলিম ছাত্র জনতা ঐক্য পরিষদের ব্যবস্থাপনায় এ বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা। বিক্ষোভ মিছিল চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কস্থ হাটহাজারী বাজার, বাসস্ট্যান্ড, কলেজ গেট, কাচারি সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাদ্রাসা চত্বর প্রদক্ষিণ করেন। সেখানে এক সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৯২ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন কর্তৃক মুসলিম শিক্ষার্থীদের হরে কৃষ্ণ হরে রাম বলে যে প্রসাদ খাওয়ানো হয়েছে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই কাজে জড়িতদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা উপলক্ষে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইসকন সপ্তাহব্যাপী ফুড ফর লাইফ কর্মসূচির আড়ালে গত ১১ই জুলাই থেকে নগরীর প্রায় ১০টি স্কুলের শিক্ষার্থীর মাঝে প্রসাদ বিতরণ করে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত কৃষ্ণ কুমারী স্কুলে প্রসাদ বিতরণ করে ইসকন কর্মীরা। ওই স্কুলে তখন ৮০০ ছাত্রী উপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীরা জানান, ইসকনের কর্মীরা তাদের প্রসাদ গ্রহণ করার আগে মন্ত্র পাঠ করতে বলে। হিন্দু শিক্ষার্থীদের অনেকে মন্ত্র পাঠে খাবার গ্রহণ করলেও মুসলিম এবং বৌদ্ধ মেয়েদের অনেকে তাতে বিরক্তি প্রকাশ করে। অনেকে খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের মাঝেও ইসকন কর্মীরা প্রসাদ বিতরণ করেছে। তাদের অনেকে খেয়েছেও। অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী বলেন, প্রসাদ বিতরণ করা হবে বলে ইসকনের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়। এ অবস্থায় কৃষ্ণ কুমারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীও ওই খাবার গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম সরকারি হাই স্কুলেও এ ধরনের প্রসাদ বিতরণ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই স্কুলে আমার ছেলে পড়ে। সে এ খাবার গ্রহণ করেনি। এছাড়া কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুসুম কুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জে এম সেন স্কুল, কৃষ্ণ কুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা মেনকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বান্ডেল সাবিত্রী সুধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রসাদ বিতরণ হয়। হেফাজতের প্রতিবাদ: ওদিকে হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে ইসকনের প্রসাদ বিতরণ করাকে চরম ধৃষ্টতা হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হিন্দু সমপ্রদায়ের রথযাত্রা উপলক্ষে মুসলিম শিশুদের মাঝে কৃষ্ণ প্রসাদ বিতরণ করে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন। হরে কৃষ্ণ হরে রাম স্লোগান দিয়ে এ প্রসাদ বিতরণ করে মুসলিম ধর্মীয় চেতনাবোধেও মারাত্মক আঘাত করেছে। মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদার জায়গা থেকে এসব কুফরি শব্দ মুখে আনতে পারে না। তিনি বলেন, হিন্দু সমপ্রদায়ের মানুষ পুণ্যের ভাবনা থেকে তাদের দেবতার নামে উৎসর্গকৃত খাবারের অবশেষ এসব প্রসাদ আহার করে থাকে। এ প্রসাদ আহার করা মুসলমানদের জন্য হারাম। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন। তবে নিজেদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অন্য ধর্মের কারও উপর চাপিয়ে দেয়া ধর্মীয় অধিকার ও অনুভূতিতে হস্তক্ষেপের শামিল, এটা সংবিধান পরিপন্থী। এ উগ্র সংগঠনটি ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় উস্কানিসহ নানাভাবে উত্তেজনা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এ সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি তৈরি করছে। তাই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইসকনকে নিষিদ্ধ করে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।ইসকনের দুঃখ প্রকাশ: শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণের একটি ভিডিও নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে হিন্দু বৈষ্ণব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ প্রকাশ করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এর আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতেও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সমপাদক দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও সতর্কতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করারও অঙ্গীকার করেছে ইসকন। দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, সমপ্রতি চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে ইসকন ফুড ফর লাইফের খাবার বিতরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বসাধারণের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সমপ্রতি অনুষ্ঠিত রথযাত্রা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মহানগরীর ১০টি স্কুলে ইসকনের পক্ষ থেকে হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। রথযাত্রার শুভেচ্ছা হিসেবে প্রতি বছর এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, এই সেবামূলক মহৎ কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মানসে এ কার্যক্রম সমপর্কে নেতিবাচক সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে মঠ, মন্দিরে হুমকি প্রদান ও সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু কিছু নেতিবাচক সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। এখানে একটি স্কুলের খাবার গ্রহণের ভিডিও ধারণ করে অন্য একটি স্কুলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ধর্মপরায়ণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিতরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার শুধুমাত্র একটি স্কুলে হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা হরে কৃষ্ণ মন্ত্র বলেছে।নিজেদের কার্যক্রম সমপর্কে তিনি বলেন, সংগঠনটি বাংলাদেশে শুধুমাত্র হিন্দুদের মাঝে ধর্মীয় প্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। পাশাপাশি সব ধর্মমতের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বা তাদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করা ইসকনের ভাবদর্শের পরিপন্থী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রচলিত সাংবিধানিক রীতিনীতি, আইনকানুন এবং সকল ধর্মের প্রতি বাংলাদেশ ইসকন সর্বদা শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিক। আবহমান বাংলার চিরায়ত সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির ঐতিহ্য আমরা ধারণ করি এবং দলমত নির্বিশেষে সকলের সহাবস্থানের মাধ্যমে সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে আমরা বদ্ধপরিকর। সকলকে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান তিনি।হাইকোর্টের মন্তব্য: এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) ইসকন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে প্রসাদ খাইয়ে শিক্ষার্থীদের হরে কৃষ্ণ হরে রাম মন্ত্র পাঠ করার ঘটনাকে অন্যায় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নজরে আনা হলে বৃহসপতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। মূলত হাইকোর্টের এই মন্তব্যের পরই ইসকন দুঃখ প্রকাশ করলো।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে