কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

অনলাইনে মিলবে মণিরামপুরের কোরবানির গরু

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

কোরবানির পশু বেচাকেনায় জমে উঠেছে ডিজিটাল মার্কেটিং সিস্টেম। অনলাইনে ছাড়া কোরবানির গরু বিক্রি করেন না ব্যবসায়ী ওমর ফারুক। চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতার বাড়িতে গরু পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব তার। শুধু অর্ডার দিলেই হলো- যশোরের মণিরামপুরের শ্রীপুর গ্রাম থেকে গরু পৌঁছে যাবে দেশের যেকোনো স্থানে। গত কোরবানির ঈদের তিনদিন আগে অনলাইনে ৭৮ হাজার ক্রেতা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এবার এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ওমর ফারুকের। মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে দেশি গরুর খামার ওমর ফারুকের। যেখানে বর্তমানে গরু আছে শতাধিক। বেশি মুনাফার আশায় কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণের বিপক্ষে তিনি। ‘নিজের জমির সবুজ ঘাস, খৈল আর ভুসি খাইয়ে স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ গরু কোরবানির নিয়ত করা মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়াই আমার লক্ষ্য’- জানালেন ওমর ফারুক। এজন্য তিনি তৈরি করছেন ভার্মি কম্পোস্ট সারখানা। মাঠে ঘাসের চাষ করা-যা খাওয়ান গরুকে। কোনো বিদেশি জাতের গরু তিনি বিক্রি করেন না। শ্রীপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আবদুল করিমের ছয় সন্তানের মধ্যে ওমর ফারুক সকলের বড়। তিনি ছাড়া সব ভাইবোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। অন্য দুই ভাইয়ের একজন উচ্চ পদে চাকরি করেন, অন্যজন বড় ব্যবসায়ী। দু’জনই ঢাকাতে থাকেন। তিন বোনের দুইজন শিক্ষক, একজন সচিবালয়ের কর্মকর্তা। শুধু ওমর ফারুকই এসএসসি পাস। প্রথমে মাছের ব্যবসায় শুরু করলেও এখন পুরোদস্তুর গরুর খামারি। বর্তমানে চারটি গোয়ালে শতাধিক গরু রয়েছে-যা আসন্ন কোরবানির জন্য লালন করা হচ্ছে বলে জানালেন ওমর ফারুক। এই জন্য সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওমর ফারুকের গরুর খামারে। ওমর ফারুক বলেন, ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে খামারটি তৈরি করা। প্রথমে ঋণের জন্য উপজেলার প্রতিটি ব্যাংকে ধর্ণা দিয়েছি। কেউ টাকা দেয়নি। সবাই বলে জমির দলিল বন্ধক রাখতে হবে। আমাদের সব জমি আব্বার নামে। তিনি এখনো বেঁচে আছেন, দলিল দেবো কীভাবে। শেষ পর্যন্ত কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জয়নুল আবেদীনের দেয়া চার লাখ টাকার সঙ্গে নিজের আরো চার লাখ টাকা মিশিয়ে ২০০৩ সালে ব্যবসাটি শুরু করি। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় হয় ভার্মি কম্পোস্ট সারখানা ও চারটি গোয়াল তৈরিতে। তিন লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনে সেগুলো লালন-পালন করতে থাকি। প্রথম বারেই লাভ পাওয়া যায় ভালো। তবে, ব্যবসায় প্রসার লাভ করে ২০০৭ সাল থেকে।’ ফার্ম তৈরির আগে খামারি হিসেবে উচ্চতর দুটি প্রশিক্ষণও তিনি গ্রহণ করেন বলে জানান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ওমর ফারুককে। ভাইদের সহায়তায় তিনি গত ৪ বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং সিস্টেমে তার খামারের গরু কোরবানির ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে বাজারে গরু তোলার কোনো ঝামেলা তাকে পোহাতে হচ্ছে না। দালালদের কোনো বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে না। খামারের নিজস্ব ওয়েব সাইটে গরুর ছবির পাশাপাশি মূল্য তালিকা উল্লেখ করা থাকে। ক্রেতারা তাদের পছন্দসই গরুর অর্ডার দিলেই সেই ক্রেতার ঠিকানাই পৌঁছে দেয়া হয় কাঙ্ক্ষিত কোরবানির গরু। তবে এই বেচা-কেনা মূলত জমে কোরবানির শেষ সপ্তাহে। এদিকে, ওমর ফারুকের অনলাইন মার্কেটিং সিস্টেম জনপ্রিয় হয়ে উঠলে তার খামারে অর্থলগ্নির প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। বর্তমানে ওমর ফারুক ওই ব্যাংকের সহায়তায় তার কোরবানির গরু বিক্রির অনলাইন মার্কেটিং সিস্টেমে ব্যবসা করছেন। লাভ বেশি হওয়ায় তিনি দিন দিন ব্যবসার প্রসার বাড়াচ্ছেন বলে দাবি করেন ওমর ফারুক। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের প্রক্রিয়াকে অনৈতিক দাবি করে তিনি বলেন, ‘ধর্মে আছে সুস্থ ও সবল পশু কোরবানি দিতে হবে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় গরু মোটাতাজা করা হয় তাতে গরু আর সুস্থ থাকে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের খামারে গরুকে সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাওয়ানো হয়। কোনো কৃত্রিম পন্থা অবলম্বন করা হয় না। তাছাড়া গরু যাতে সুস্থ থাকে তার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসাও করানো হয়।’ গরুর সেবায় প্রতিদিন তিন শিফটে দুই ঘণ্টা করে মোট ৬ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন ওমর ফারুক। গরুর গোসল করানো, গোয়াল পরিষ্কার করা, খাবার দেয়া- সবই নিজে করেন। যদিও এ কাজের জন্য তিনি সহযোগী নিয়োগ দিয়েছেন। ওমর ফারুক জানান, শুধু কোরবানির জন্যই অনলাইনে গরু বিক্রি করি। এর বাইরে সারা বছরই বাড়ি থেকে সরাসরি যে কেউই নির্ধারিত মূল্যে গরু কিনতে পারেন। অনলাইনে বিক্রির জন্য তারা জাজ করপোরেশন নামে বিক্রয় ডটকমের তালিকাভুক্ত হয়েছেন বলে জানান। তাদের মূল কোম্পানির নাম জাম এগ্রো। গরুর পাশাপাশি তারা ভার্মি কম্পোস্ট সার এবং ঘাসও বিক্রি করছেন। মণিরামপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ড. আবুজার সিদ্দিকী বলেন, ‘ওমর ফারুকের খামারে গরু যেভাবে পালন করা হয় তা নিরাপদ খাদ্য স্লোগানের সহায়ক। প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন ঘাস, খৈল, ভুসি, কুড়া, ভুট্টো ভাঙা ইত্যাদি খাওয়ানো হয় গরুকে। এই খাবারকে দানাদার খাবার বলে। এগুলো গরুর মাংস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে’। ড. আবুজার বলেন, মণিরামপুর উপজেলায় যত খামার আছে সবগুলোতেই নিরাপদ খাদ্য ও নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। তিনি জানান, তার উপজেলায় এক হাজার পাঁচশ’ ৭০টি পারিবারিক খামার আছে। ১ থেকে তিনটি গরু থাকলেই সেগুলোকে পারিবারিক খামার বলে। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনভুক্ত খামার আছে ৪০টি। প্রতিটিতে ১০টির বেশি সংখ্যায় গরু না থাকলে ওই খামারকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয় না। ফলে এবছর এসব খামারে যে পরিমাণ গরু আছে তা কোরবানি বাজারের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক হাজার গরু সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত