কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রকাশ্যে যাকাত বিতরণ বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক পুলিশ

মানবজমিন প্রকাশিত: ২০ মে ২০১৯, ০০:০০

রমজান মাসে যাকাত বিতরণ করেন অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি। এক সঙ্গে অনেক মানুষের মাঝে যাকাতের অর্থ, কাপড় বা সামগ্রী বিতরণ করায় বিশৃঙ্খলা এমন কি হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। অতীতের মতো এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যারা নিয়মিত যাকাত দেন তাদের যাকাত বিতরণ কার্যক্রম যাতে সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে পারেন এজন্য সহযোগিতা দেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে যাকাত প্রদানকারীদের আগে থেকেই অবহিত করে রেখেছে। গত তিন দশকে সারা দেশে যাকাতের কাপড় ও সামগ্রী নিতে গিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মানুষ পদপিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন। এসব মৃত্যুর ঘটনায় নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পরবর্তীতে আর আলোর মুখ দেখে না। এছাড়া তাদের করা সুপারিশও বাস্তবায়ন হয় না। এমনকি যারা যাকাত দেন তারা নিয়ম অনুসরণ করছেন না। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যাকাত আনতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। দরিদ্র মানুষই এমন নির্মম মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। তাই যারা যাকাত দেয় তাদেরকে আরও বেশি সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। একটা শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে যাকাত দেয়াটাই উত্তম। তিনি বলেন, যাকাত দিতে হলে স্থানীয় পুলিশ অথবা সংশ্লিষ্ট এলাকার এসপিকে বিষয়টি আগে থেকে জানাতে হয়। তাহলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু যাকাত যারা দেন তারা ঈদের আগ মুহূর্তে যাকাত দেন। এছাড়া যে পরিমান মানুষের সমাগম হয় সেটা থানার অল্প কয়েকজন পুলিশ দিয়ে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আর ওই সময়টা পর্যাপ্ত পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দেয়াও সম্ভব হয় না। মনিরুজ্জামান আরও বলেন,  যাকাত দাতারা যদি পুলিশকে আগে থেকে অবগত করে তবে পুলিশ নিরাপত্তা দেবে। এছাড়া যাতে কোন অঘটন না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি থাকবে। ১৯৮০ সালে ঢাকার জুরাইনে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। ১৯৮৩ সালের ৯ই জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যাকাতের টাকা নিতে গিয়ে মানুষের ঠেলাঠেলিতে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়।  ১৯৮৭ সালের ২৩শে মে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সরকারিভাবে যাকাত দেয়ার সময় ব্যাপক লোকসমাগম হয়।  ওই সময় যাকাত নিতে আসা মানুষ উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে চার জনের মৃত্যু হয়। ১৯৮৯ সালের ৫ই মে চাঁদপুরে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১৪ জর মারা যান। ১৯৯০ সালের ২৬শে এপ্রিল পাহাড়তলীর আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরিতে যাকাত নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে ৩৫ জন নিহত হন। এসময় আহত হন আরও দুই শতাধিক। ১৯৯১ সালের ১৩ই এপ্রিল ঢাকার নবাবপুর রোডে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে দুজন মারা যান। ২০০৫ সালে গাইবান্ধা জেলায় নাহিদ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে যাকাতের কাপড় নিতে এসে মৃত্যু হয় ৩৭ জনের।  একই বছর  চট্টগ্রামে কেএসআরএম মালিকের বাড়িতে যাকাত নিতে গিয়ে মৃত্যৃ হয়  ৮ জনের।  ২০১৪ সালের ২৫শে জুলাই মানিকগঞ্জে সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ হাসান রুনুর বাসায় তিন জনের মৃত্যু হয়। পরের দিন বরিশালের খান অ্যান্ড সন্স গ্রুপের মালিকের বাস ভবনে যাকাত বিতরণের সময় ২২ জনের মৃত্যু হয়। একই দিন বরিশালের কাঠপট্টি এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে যাকাত দেয়ার সময় পদপিষ্ট হয়ে মারা যায় দুই নারী। ২০১৫ সালের ১০শে জুলাই ময়মনসিংহের অতুল চক্রবর্তী রোডে নূরানি জর্দা ফ্যাক্টরিতে যাকাতের কাপড় বিতরণকালে পদপিষ্ট হয়ে  ২৭ জনের মৃত্যু হয়। যাকাতের কাপড় বিতরণকালে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছিল গাইবান্ধা জেলায়। মর্মান্তিক ওই ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে ৩৭ জন লোকের প্রাণহানি হয়েছিল। আহত হয়েছিলো আরও অর্ধশতাধিক মানুষ। গাইবান্ধার নাহিদ কটন মিলসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান নাহিদ ফাউন্ডেশন আগে থেকেই যাকাতের কাপড় বিতরণের ঘোষণা দেয়। খবর পেয়ে সেখানে কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয়। ঘটনার দিন ভোরবেলা খুলে দেয়া হয় যাকাত বিতরণের নির্ধারিত স্থানের গেট। আর তখনই তাড়াহুড়ো শুরু হয়। ধাক্কাধাক্কি আর ঠেলাঠেলিতে প্রাণ হারান ৩৭ জন নীরিহ মানুষ। মর্মান্তিক এই ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি বলে জানা যায়। নাহিদ ফাউন্ডেশনের মালিক তখনকার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান ও তাদের কর্মযোগ্য স্বজনের ফ্যাক্টরিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা জেলার পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, গাইবান্ধায় যাকাত নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে অনেক মানুষ মারা যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু এধরনের ঘটনা আগে ঘটেছে তাই এই এলাকায় কেউ যাকাত দিতে গেলে অবশ্যই তাদেরকে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। এ বিষয়ে ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা সাখায়াত হোসাইন রাজী বলেন, ইসলামে দান সদকার বিষয়ে দুটি পথই খোলা আছে। আর সেটা হচ্ছে প্রকাশ্যে বা গোপনে দান করা। তবে প্রকাশ্যে দেয়ার ক্ষেত্রে যদি দাতা অন্য মানুষকে দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার মন মানসিকতা থাকে সেটা ভাল। এটার জন্য সে সওয়াব পাবে। প্রকাশ্যে দেয়ার জন্য দাতার নিয়ত পরিষ্কার লাগবে আর বড়ত্ব বা লোভ দেখানোর মানসিকতা থাকা যাবে না। অন্যের উপকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে যাকাত দিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে অনেক মানুষ মারা যায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যাকাত দেয়ার সময় পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে বণ্টন করতে হবে। এমন কোন পথ অবলম্বন করতে হবে যাতে কোন ধরনের গন্ডগোল বা পদ পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা না ঘটে। সেজন্য অগ্রিম টোকনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যাকাত না দেয়াই উত্তম। যাকাত দাতার জন্য যদি কোন দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তবে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধের শামিল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, যাকাত দিতে গিয়ে যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যাকাত দাতাকে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করতে হবে। জায়গার স্বল্পতা আছে কিনা সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশকে জানাতে হবে বিষয়টি এমন না। পুলিশকে অবগত করলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হবে। মুল দায়িত্ব যিনি যাকাত দিবেন তার। কারণ ছোট জায়গায় অধিক মানুষের সমাগম হলে বা পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক না থাকলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, যাকাত দেয়া ফরজ কাজ। যারা যাকাত দিচ্ছে তারা ভাল কাজই করছে। কিন্তু যাকাতের নামে প্রদর্শন করাটা ঠিক না। একটা সময় যাকাত মসজিদে গিয়ে দেয়া হত কাউকে দেখিয়ে দেয়া হত না। আর এখন প্রদর্শন করে দেয়া হয়, এটা খুবই খারাপ। তিনি বলেন, যাকাত দেয়ার জন্য মানুষকে খবর দেয়া হয়। আর এ খবর শুনে হাজার হাজার মানুষ চলে আসে। ফলে,  ঠেলাঠেলি করে পদপিষ্ট হয়ে প্রতি বছর মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে করি, যাকাত এমনভাবে দিতে হবে যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। গোপনে মানুষের বাড়ি বাড়ি বা ফুটপাতে ঘুমন্ত মানুষকে গিয়ে দেয়া যেতে পারে। রিয়াজুল হক আরও বলেন, যারা যাকাত দিচ্ছে তাদেরকে সমস্ত শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। যত লোককে যাকাত দিবে তাদেরকে আগে থেকে কুপন দিতে হবে। পরে ভাগ ভাগ করে কয়েকদিন যাকাত বিতরণ করা যেতে পারে। এছাড়া এসব বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত