কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জোট রাজনীতিতে টানাপড়েন ভাঙনের খেলা

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৮ মে ২০১৯, ০০:০০

টানাপড়েন আর ভাঙনে ঘুরপাক খাচ্ছে জোটের রাজনীতি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সক্রিয়া হওয়া প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটেই এখন বইছে ছন্দপতনের হাওয়া। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই এ সংকটের শুরু। এটি তীব্র হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নির্বাচিতদের সংসদে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে। চলমান পরিস্থিতিতে ২০ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিজেপি প্রধান আন্দালিভ রহমান পার্থ জোট ছাড়ার পেছনে জোট রাজনীতিতে নিজেদের গুরুত্ব না দেয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন। তার বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জু ছিলেন ২০ দলের প্রথম ভিত চার দলীয় জোটের উদ্যোক্তাদের একজন। পার্থের জোট ছাড়ার ঘোষণার পর ২০ দলের আরেক শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপিকে ঐক্যফ্রণ্ট ছাড়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ে ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে দলটি নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানিয়েছে। জোট সূত্র বলছে, শুধু বিজেপি বা লেবার পার্টি নয় ২০ দল থেকে সরে যেতে চায় আরও কয়েকটি দল। কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপিও ২০ দল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্নেল অলি নিজের অসন্তোষের কথা ঘনিষ্টজনদের জানিয়েছেন। এদিকে বিরোধী জোটে টানাপড়েন আর ভাঙনের সুরের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে বিরাজ করছে অসন্তোষ। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের একক নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন। সরকারী নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অংশগ্রহণ না থাকা এবং যেসব প্রয়োজনে জোট গঠন করা হয়েছিল তার প্রেক্ষাপট বর্তমান না থাকায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে ১৪ দলীয় জোট। মূলত পাওয়া না পাওয়ার হিসাব থেকেই আওয়ামী লীগ ছাড়া জোটের প্রধান শরিক দলের নেতারা অসন্তুষ্ট। যদিও তারা বলছেন, আদর্শিক জায়গা থেকে জোট গঠন করা হয়েছিল। প্রয়োজন অনুযায়ি কর্মসূচি পালন করা হয়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকার পরিচালনা ও নীতি নির্ধারণে শরিকদের অংশগ্রহণ নেই বলে মনে করেন নেতারা। তারা বলছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকার আওয়ামী লীগ এককভাবে পরিচালনা করছে। এতে জোট শরিকদের না থাকা তাদের অবমূল্যায়নের মতো। এছাড়া সরকার পরিচালনায় জোট শরিকদের কোন ধরণের সম্পৃক্ততাও নেই। ৩০ শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে জোটের কোন কোন শরিক দলের ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তারা বলছেন, যেভাবে নির্বাচনটি হয়েছে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে ভুমিকা রেখেছে তা না হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটই বিজয়ী হতো। কিন্তু এসব করে জোটের গ্রহণযোগ্য ও জনসম্পৃক্ত কমেছে। জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন ঘিরেও জোট শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থী দিয়ে সুবিধা করতে পারেননি জোট শরিকরা। কোনো কোনো উপজেলায় জোটের শরিক দলের প্রার্থীদের বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। মামলা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা পাননি শরিক দলের নেতারা। ১৪ দলের শরিকরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতা ও ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ‘রীতিমতো অবমূল্যায়নের’ শিকার হয়েছেন তারা। আগের দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার আসনও কম দেয়া হয়েছে অন্য দলগুলোকে। আগের দুই নির্বাচনে ১৪ দল শরিকদের ১৫ থেকে ১৬টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এবার নির্বাচনে জোটের শরিক সংখ্যা বাড়লেও প্রথম দফায় ১৩টি আসনে ছাড় দেয়া হলেও পরে সেটি ১০ এ নেমে আসে। এর মধ্যে মাত্র সাতজন বিজয়ী হয়ে সংসদে আসতে পেরেছেন। এছাড়া জোটে নতুন যুক্ত হওয়া বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে বড় ছাড় দেয়া হয় আসনের ক্ষেত্রে। এছাড়া নির্বাচনের পর গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় মর্মাহত শরিক দলের নেতারা। এ বিষয়ে ওই সময় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন যেহেতু জোটগতভাবে নির্বাচন করেছি, তাই আমরাও এই বিজয়ের অংশীদার। তাই বিজয় সমাবেশে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য রাখতে দেয়া হলে এটি আরও পরিপূর্ণ হতো। জোটের কার্যক্রমের বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ১৪ দল গঠন হয়েছিল একটি আদর্শিক প্রেক্ষাপটে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই প্রেক্ষাপট আর নেই। এখন যা হচ্ছে এটা অনেকটা জাবরকাটার মতো। এছাড়া সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ না থাকায় আমাদের মতো শরিক দলগুলোও এখন গুরুত্বহীন। জোটের আরেক শরিক জাসদ (আম্বিয়া) এর সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, জোটের কার্যক্রম খুব একটা নেই। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী  জোট বিএনপি-জামায়াত এখন নিজেরাই অস্থিত্ব সংকটে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল স্বস্থিতেই আছে। এছাড়া জঙ্গি-সন্ত্রাস এর বিরুদ্ধে আমরা যে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম এখন এরও  তেমন প্রয়োজন নেই। তাই জোটের রাজনীতির গুরুত্ব আগের মতো নেই। তিনি বলেন, বিগত নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভিন্ন মূল্যায়ণ রয়েছে। এটিও আওয়ামী লীগের কাছে অস্বস্থির কারণ হতে পারে। কারণ আমরা যে মতামত আগে দিয়েছি এখনও সেই অবস্থানেই আছি।  ঐক্যফ্রন্ট-২০ দলের টানাপড়েন: একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোটেই টানাপড়েন শুরু হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের নেতাদের অবহেলা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বেশি গুরুত্ব দেয়ার অভিযোগ পুরাতন হলেও সম্প্রতি জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ একই অভিযোগ তুলে জোট ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, আগামী ২৩শে মে’র মধ্যে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে ২৪শে মে তার দলের সিদ্ধান্ত জানাবেন। তিনি জোট ছেড়ে চলে গেলে তার সঙ্গে আরো ৩ থেকে ৪ টি দল জোট ছেড়ে যাওয়ারও তথ্য দিয়েছেন ইরান। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল গণফোরামের দুই নির্বাচিত এমপি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় একজনকে বহিষ্কার এবং অন্যজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু শপথ গ্রহণের শেষ সময় হঠাৎ করে বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা শপথ নেয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ফোরামে এসব বিষয়ে কোনো ধরনের আলোচনা পরামর্শ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে নির্বাচনের পর থেকে এই জোটের তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নেই। নেই তেমন কোনো কর্মসূচিও। নামকাওয়াস্তে যে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে গত ৫ মাসে তার অধিকাংশ বৈঠকেই ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা অুনপস্থিত থেকেছেন। অন্যদিকে গুঞ্জন রয়েছে- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এর ফলাফল বর্জনের পর সেই সংসদের এমপি হিসেবে দলের দুই প্রার্থীর শপথ নেয়ার বিরোধীতাকে কেন্দ্র করে পদ হারাতে হয়েছে গণফোরামের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুর। এছাড়া, গণফোরামের এমপিরা শপথ নেয়ায় তাদের বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছে দল। কিন্তু বিএনপির এমপিরা শপথ নিলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দলটি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তেই তারা শপথ নিয়েছেন। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেরও কিছুটা টানাপোড়ের লক্ষণীয়। এদিকে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ২০ দলীয় জোটে। ২০ দলীয় জোট অকেজো হয়ে গেছে, কোনো ধরণের কর্মকাণ্ড নেই এবং বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছেসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ২০ দলীয় জোটের নিষ্ক্রিয়তা, অকেজো হয়ে যাওয়া এবং অবজ্ঞা অবহেলা থেকেই জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান মানবজমিনকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করছি। এক সঙ্গে থেকে জোটের সব দলের বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। জামায়াতের বহু নেতা জেল খেটেছেন গুম হয়েছেন। বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী কারাবরণ ও গুমের শিকার হয়েছেন। কিন্তু গত নির্বাচনের আগে হঠাৎ বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলাদা জোট করে আমাদের গুরুত্বহীন করে ফেলে। আমরা কোনোদিন বেঈমানি করিনি। এছাড়া বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি। তাই আগামী ২৩শে মে’র মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপিকে আল্টিমেটাম দিয়েছি। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মানবজমিনকে বলেন, আমরা জোট ছাড়ার পক্ষে নই। ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং আগামীতেও থাকব। কিন্তু আন্দালিভ রহমান পার্থ এবং মোস্তাফিজুর রহমান ইরান যা করেছেন একেবারে খারাপ কিছু করেননি। বিএনপির বিষয়টি বোঝা উচিৎ। দীর্ঘদিন ধরে এক সঙ্গে আমরা রজানীতি করছি। কিন্তু হঠাৎ আমাদের গুরুত্বহীন করে অন্যজোটকে আপন করা ঠিক হয়নি। ঐক্যফ্রন্টের উদ্দেশ্যই ছিল বিএনপির সঙ্গে এসে কয়েকটি এমপি বানানো। সেটা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতিক মানবজমিনকে বলেন, আমরা ২০ দলের সঙ্গে ছিলাম। আগামীতেও থাকব। নিজেদের মধ্যে যেসব ভুল ত্রুটি ও ভুল বোঝাবুঝি আছে সেগুলো শুধরে নিয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে পথ চলতে চাই। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, আমরা জোটের সঙ্গে ছিলাম। আগামীতেও থাকব। এসব সাধারণ বিষয় নিয়ে মন খারাপ না করে বর্তমান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। আমি বলব- যারা জোট ছেড়েছেন বা ছাড়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন তাদের যেন শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বলেন, আমরা জোট ছাড়ার মধ্যে নেই। দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রাজনীতি করছি। আগামীতেও করতে চাই। এখন যারা জোট ছাড়ার বিষয়ে বলছেন তারা সরকারের দালাল। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের দুই এমপির শপথ নিয়ে শুরুতে টানপড়েনের শুরু হয় জাতীয় ঐকফ্রন্টে। একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় বিজয়ীদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপি ও ঐকফ্রন্টের। যদিও এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে ৭ই মার্চ প্রথম এমপি হিসেবে শপথ নেন গণফোরামের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। তার পথ ধরে পরে শপথ নেন গণফোরামের মোকাব্বির খান। তাদের শপথের বিষয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিক দলের নেতারা বিরূপ মন্তব্য করেন। সর্বশেষ বিএনপির পাঁচ এমপি শপথ নেয়ায় আগে বিরূপ মন্তব্য করা নেতারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। নিজ নিজ মহলে তারা প্রশ্নের মুখে পড়লেও কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না। এমন অবস্থায় জোট নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্থি তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন মানবজমিনকে বলেন, ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিএনপি আর জামায়াত ছাড়া আর কে আছে না আছে তাদের আমি চিনিনা। সুতরাং তারা কাকে কি হুমকি দিল আর না দিল তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা বেশি কিছু বলতেও চাই না। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের কারণে নাকি অন্য কারণে ২০ দলের কেউ জোট ছাড়তে চেয়েছে সেটা আমাদের বিষয় না। এসব বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। ওটা বিএনপির ব্যাপার।  উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে প্রক্রিয়া শুরু করার পর জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম ও ইসলামী ঐক্যজোটের তখনকার চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশকে নিয়ে চার দলীয় জোট গঠিত হয়। অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির নেতৃত্বধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবরে বেড়ে ১৮ দলীয় জোট হয়। বিএনপি ছাড়া সে সময় জোটের শরিক দলগুলো ছিল জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ। পরে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দলের একাংশ এই জোটে যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। তবে দুই বছরের মাথায় ভাঙনের মুখে পড়ে ২০ দল। শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন এনপিপি জোট ছাড়ে। তবে এনপিপির সে সময়ের মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নিজেকে দলটির চেয়ারম্যান ঘোষণা করে জোটের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দেন। একই অবস্থা তৈরি হয় এনডিপিকে নিয়ে। দলটির সেক্রেটারি আলমগীর মজুমদারের নেতৃত্বে একটি অংশ জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও থেকে যায় চেয়ারম্যান গোলাম মুর্ত্তজার নেতৃত্বাধীন অংশ। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও আজহারুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে দলটির আরেক অংশ জোটের সঙ্গে থেকে যায়। ২০১৬ সালে জটিলতা তৈরি হয় ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে। জোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী জোট ছেড়ে যান। তবে ঐক্যজোটেই ভাঙন ধরে। ঐক্যজোটের সিনিয়র সহসভাপতি ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি আবদুর রকিব নিজেকে ইসলামী ঐক্যজোটের নতুন চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দলীয় জোটের সঙ্গেই আছে। জোটের ভেতরে থাকা ছোট ছোট নামসর্বস্ব দলগুলোর ভেতর নানা দ্বন্দ্বে জোট ভাঙার চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত ওই দলগুলোই ভেঙে গেছে। একটি অংশ শেষ পর্যন্ত জোটের সঙ্গে থেকে গেছে। জোটে অবমূল্যায়নের অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ১৬ই অক্টোবর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও