কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

গণমাধ্যমের মালিকানা ও সংগঠনগুলো ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে: ফখরুল

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

সাংবাদিকদের বিভক্ত করে সরকার গণমাধ্যমের মালিকানা ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, ফ্যাসিবাদি এই সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সব ব্যবস্থা করছে। বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসন দখল করে নিয়েছে। গণমাধ্যমের মালিকানায় পুরোপুরিভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। সাংবাদিক সংগঠনগুলোরও বিভক্তি করে দিয়ে তারা সেখানেও পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ‘বিএফইউজে’ বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। বলেন, গণতন্ত্র কখনো সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না, যদি একটি শক্তিশালী, মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম না থাকে। দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র স্বাধীন করতে পারিনি এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও আমরা অর্জন করতে পারিনি। এটা কোন বিছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ দেশে গণতন্ত্র না থাকলে সংবাদ মাধ্যমেও স্বাধীনতা থাকবে না। বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ, রাজনীতিবিদরা সব সময় খারাপ নন। রাজনীতিবিদরা সব সময় শুধু মাত্র স্বার্থের জন্য কাজ করেন না। রাজনীতিবিদরা ত্যাগ স্বীকার করেন। আর ত্যাগ স্বীকার করেন বলেই বড় জিনিস অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই  সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আমরা যেমন আপনাদের সমস্যা বুঝি। ঠিক একইভাবে আমাদের সমস্যাগুলো আপনারা অনুধাবন করার চেষ্টা করেন। গণমাধ্যমের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা পত্রিকায় এক কলম লিখে দিলেই আমার সারাজীবনের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে ‘রাজনীতির যে ক্যারিয়ার আছে’। তার আগে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু অনেকে কষ্ট করে সেটুকুও করেন না। বোঝার চেষ্টা করেন না। নিজের একটা ধারনা থেকে সেটা বলে দেন। এটা দল, রাজনীতি এবং দেশের যে অবস্থা- সেই অবস্থার ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিকে দেখে কখনো সামগ্রিক রাজনীতির বিচার করা উচিত নয়। সাংবাদিকরা মহান পেশায়, তাদের এসব সবচেয়ে বেশি ভাবতে হবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করছি, আমরা অনেক আরাম-আয়েশে রাজনীতি করছি- এই কথা যদি ভেবে থাকেন তাহলে ভুল করছেন। এই গণতন্ত্রের জন্য ১৯৫২ সাল থেকে এদেশের রাজনীতিবিদরা অনেক অনেক কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কারাগারে গেছেন এবং নিহতও হয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই নির্যাতন আরো বেড়েছে। আজকে রাজনীতিটা হচ্ছে না। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়িঘর শেষ হয়েছে এবং অনেককে প্রাণও দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গভীর এক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে যা অবস্থা, ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ থেকে অনেক নেতাকর্মী বের হয়ে জাসদ তৈরি করেছিলেন। সেই জাসদের অনেক নেতাকর্মীকে ৭২-৭৫ এর সরকার হত্যা করেছিল। স্বাধীনতা পরপরই প্রায় সবাই কোলাবরেটর বানিয়ে দেয়া হচ্ছিল। তখন হলিডের প্রখ্যাত সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খান নিজের পত্রিকায় লেখেছিলেন, তাহলে কী সাড়ে ৬ কোটি মানুষই কোলাবরেটর? আমরা আওয়ামী লীগকে ভালোভাবে চিনি, সমস্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে চিনেছি, জীবন দিয়ে চিনেছি- আমরা জানি আওয়ামী লীগ কি? কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিকে অতীতের অন্যকোন পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি খুব ব্যক্তিগতভাবে জানি, আপনাদের অনেক সংবাদ কর্মীর কাজ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি যে, অনেক সংবাদ কর্মী অত্যন্ত আর্থিক কষ্টে আছেন। এটাই হচ্ছে, এখনকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাজনীতির পরিণতি। আমাদের বহু ছেলে আছেন, যারা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা বিএনপি করেন। তারা এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছে, হকারের কাজ করছে এবং অনেকে কাজ না পেয়ে আত্মহত্যা করছে। এটাই বাস্তবতা। তিনি বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া  আজকে ১৪ মাস ধরে কারাগারে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। আমরা তার মুক্তির কথা বলছি, চেষ্টা করছি। আন্দোলনও করছি। কিন্তু, সবসময় সব আন্দোলন সফল নাও হতে পারে। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে লড়াই করছি। এ লড়াই সহজ নয়। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, ন্যায়ের জয় অবশ্যই হবে। অন্যায় পরাজিত হবে। সত্যের জয় হবেই। আর বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক ইতিহাস এবং জনগণের সংগ্রামের যে ইতিহাস-সেটা কখনো ব্যর্থ হয়নি। সুতরাং জয়ী আমরা হবোই। বক্তব্যের শুরুতেই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মজিবুর রহমান বলেন, আজকে মানুষের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই, হত্যা-গুম-খুন হচ্ছে। যারা গুম হয়ে যাচ্ছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে গুম-খুনের দেশ বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কলম অত্যন্ত শক্তিশালী। আপনাদের অনেক লেখা পড়ে আমাদের চোখে পানি আসে, লেখাগুলো পড়ে আমরা শক্তি ফিরে পাই। আজকে সাংবাদিকদের সাহস করে এগুতে হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের সত্য কথা তুলে ধরতে হবে। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, এমন একটি সরকার ক্ষমতায় বসে আছে, যে দিনের ভোটে বিশ্বাস করে না, রাতের ভোটে বিশ্বাস করে। আজ মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই, রাজনীতিবিদদেরও স্বাধীনতা নেই। এই অবস্থার পরিবর্তনে অবশ্যই আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে কাউন্সিলে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ, ডিইউজের কাদের গনি চৌধুরী, চট্টগ্রামের শাহ নেওয়াজ, কুমিল্লার রমিজ খান, কক্সবাজারের মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম, দিনাজপুরের জিএম মঈনুদ্দিন হিরু, ময়মনসিংহের এম আইয়ুব আলী, গাজীপুরের এইচএম দেলওয়ার, বগুড়ার মির্জা সেলিম রেজা, নির্যাতিত সাংবাদিকদের মধ্যে ঢাকার কাফি কামাল, খুলনার রাশেদুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার আবুল বাশার বাচ্চু ও তরিকুল ইসলাম তারেক প্রমুখ বক্তব্য দেন। কাউন্সিল সঞ্চালনা করেন শফিউল আলম দোলন, আহমেদ মতিউর রহমান ও জিএম আশেকুল্লাহ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও