কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জাবিতে নির্বাচনী জটিল সমীকরণ

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

চলমান অবিশ্বাসের রাজনীতির মাঝেই জাবির ভিসিবিরোধী জোটের অর্ধেকের বেশি শিক্ষক ভিড়েছেন ভিসিপন্থি দলে। ফলে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর এবার স্বস্তিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের রাজনীতিতে ফের নির্বাচনের সমীকরণ ঠিক করছে শিক্ষক নেতারা। বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে বৃহত্তর জোট গড়ে উঠলেও সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে জোটের আওয়ামী অংশ ভিসির সঙ্গে যোগ দেয়। সূত্র বলছে, সামনে ১৪৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প সঠিক বাস্তবায়নকল্পে সবার ঐক্যকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। তাছাড়া ঐক্যের আগে নতুন যোগ দেয়া শিক্ষকদের সঙ্গে সামনের ডিন নির্বাচন, সিন্ডিকেট নির্বাচন নিয়ে একটা সমঝোতা হয়েছে। জানুয়ারিতে ভিসিপন্থি শিক্ষকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ভিসিপন্থিদের ভরাডুবি ঘটে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। অন্যদিকে গত এক বছরে ভিসির বিরুদ্ধে বিষোদগার করে হঠাৎ ভিসির সঙ্গে যোগ দেয়া শিক্ষকরা বিভিন্ন পদ-পদবির দাবি তুলছে। ফলে চাওয়া পাওয়ার হিসেবে ফের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পড়তে পারে ভিসি জোট। অন্যদিকে ভিসি বিরোধী জোটে থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় অধ্যাপক আমির হোসেনকে প্রো-ভিসি পদ থেকে সরাতে চায় না প্রশাসন।প্রশাসনের সূত্র বলছে, জুন মাসের শেষের দিকে ডিন নির্বাচন ও পরবর্তী মাসে সিন্ডিকেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে সামনের নির্বাচনে আওয়ামী শিক্ষকদের অন্তত চারটি উপ-গ্রুপ চাওয়া পাওয়ার হিসেবে মেলাচ্ছে। নতুন সমীকরণে সমাজবিজ্ঞানের ডিন পদে ভিসি প্যানেল থেকে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক রাশেদা আখতার ভালো অবস্থানে আছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বিএনপিপন্থি অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিমের। শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচন না করলে রাশেদা আখতার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাবেন।আইন অনুষদে সহযোগী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম ও কে এম সাজ্জাদ মুহসীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সাজ্জাদ মুহসীন ভিসি সমর্থিত হয়ে লড়বেন।কলা ও মানবিক অনুষদে বর্তমান ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক পদ ধরে রাখতে মরিয়া। তিনি কখনো বিএনপি কখনো আওয়ামী লীগে ভিড়ে ডিন পদ টিকিয়ে রেখেছেন। আওয়ামী লীগের সময়ে প্রক্টরের দায়িত্ব থেকেও তিনি বহুদিন বিএনপির রাজনীতি করেছেন। শেষ ডিন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত না মানলে তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। তবে এবার ভিসি প্যানেল বা বিএনপির সমর্থন তিনি পাচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান খান ভিসির সমর্থন চাইবেন। আলোচনায় আছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফীও। তবে এবার অধ্যাপক মোজাম্মেলকে ঠেকাতে মরিয়া বিএনপি ও ভিসিপন্থি জোট। ব্যবসা অনুষদে নীলাঞ্জন সাহা মাত্র ভিসির সঙ্গে যোগ দিয়েই ভিসির সমর্থন চাইছেন। তবে সংকটকালীন মুহূর্তে ভিসির সঙ্গে থাকা শিক্ষকরা এই পদে নীলাঞ্জন সাহাকে সমর্থন দিতে নারাজ। পূর্বের রাজনৈতিক সমীকরণে এই গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদে ভিসির পক্ষে অধ্যাপক এমএ মামুন ও বিরোধী শিবির থেকে বর্তমান ডিন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ ছিলেন শক্ত প্রতিপক্ষ। কিন্তু তারা ভিসির সঙ্গে যোগ দেয়ায় অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ভিসির সমর্থন পাচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য বহাল থাকতে পারেন। জীববিজ্ঞান অনুষদে ভিসিবিরোধী শিবির থেকে বর্তমান ডিন আবদুল জব্বার হাওলাদার, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রানা, অধ্যাপক নাজমুল আলম, অধ্যাপক তালিম হোসেন পছন্দের প্রার্থী। এই অনুষদে ভিসি প্যানেলে নির্বাচন করতে পারেন অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ। প্রশাসনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, ২৪শে জুন একাডেমিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ২৮শে জুন বসতে যাচ্ছে সিনেট অধিবেশন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিনেটে ভিসি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। ৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সিনেটে জাকসু প্রতিনিধিসহ বর্তমানে ১৫টি পদ খালি রয়েছে। ভিসির ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলছে, ২৪শে জুনের একাডেমিক কাউন্সিলে ১৯৭৩-এর অ্যাক্ট ১৯,১ (জি) ধারায় সিনেটের শূন্য পদে তিনজন কলেজ অধ্যক্ষকে মনোনীত করা হবে। অন্যদিকে ১৯,১ (ই) ধারায় ফেব্রুয়ারিতে পাঁচজন শিক্ষাবিদ পরিবর্তন করা হয়েছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হতে যাওয়া সিন্ডিকেটেই সিনেটের জন্য নতুন ‘গবেষক দল’ মনোনীত করা হবে। এ ছাড়া ১৯,১ (ডি) ধারায় সংসদ সদস্য মনোনীত করার জন্য ইতিমধ্যে স্পিকার বরাবর চিঠি দিয়েছেন ভিসি ফারজানা ইসলাম। সে সমীকরণে সিনেটে ভিসির পক্ষে ৫৫ ভোট এবং ভিসিবিরোধী ২৩ ভোট এবং বিএনপির ১০ ভোট রয়েছে। ফলে ২২,১ (এফ) ধারায় সিনেট থেকে সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ার আলোচনায় আছেন ভিসিপন্থি অধ্যাপক মান্নান চৌধুরী, মো. মোতাহের হোসেন মোল্লা, অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা, কৃষ্ণ গায়েন ও আশীষ কুমার মজুমদার। তবে সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ সামনের আগস্ট মাসে শেষ হতে যাওয়ায় এই ক্যাটাগরিতে তাদের সিন্ডিকেটে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।অন্যদিকে ডিন ক্যাটাগরিতে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও প্রভোস্ট ক্যাটাগরিতে অধ্যাপক বশির আহমেদ সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই সঙ্গে ২২,১(ডি) ধারা মতে শূন্য পদে দু’জন কলেজ অধ্যক্ষকে সিন্ডিকেট সদস্য মনোনয়ন করবে একাডেমিক কাউন্সিল। ২২,১ (আই) ধারা মতে, একজন বিশিষ্ট নাগরিককেও সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দিবে সিনেট। এই পদে অধ্যাপক এমএ মতিন সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী। তবে আলোচনায় আছেন সরকারের একজন উপমন্ত্রী। অন্যদিকে সহযোগী অধ্যাপক পদে সিন্ডিকেট সদস্য হতে নির্বাচন করতে পারেন রসায়ন বিভাগের আওলাদ হোসেন, লোক প্রশাসন বিভাগের জেবউননেছা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নীলাঞ্জন কুমার সাহা। সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, ভদ্র প্রার্থী খুঁজছে উভয়পক্ষ। আবার অ্যাক্টের ৩০,১ এর (ডি),(ই),(এফ) ধারায় অর্থ কমিটির মনোনয়ন ও নির্বাচনও জুন মাসে হতে যাচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬৯৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জন অধ্যাপক শিক্ষাছুটিতে এবং ২৬০ জন কর্মস্থলে আছেন। সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে ২৮ জন ছুটিতে ১৩৬ জন কর্মস্থলে, সহকারী অধ্যাপকের মধ্যে ৭৩ জন ছুটিতে ১২৮ জন কর্মস্থলে এবং প্রভাষকদের মধ্যে ৭ জন ছুটিতে ৭৪ জন কর্মস্থলে আছেন। কর্মস্থলে থাকা ৫৭১ জন শিক্ষকই আগামীদিনের ভোটের রাজনীতির মেরুকরণ তৈরি করবেন।তবে এত জটিল সমীকরণে বিভিন্ন উপগ্রুপ নিয়ে ফের অন্তকোন্দলে আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বড় দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। এটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত নই।’ ভিসি জোটের কোন্দলের আশঙ্কা ও নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে ভিসিবিরোধী শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খবির উদ্দীন বলেন, ‘আসলে রাজনীতি একটা গেম? এটা কখন কোনদিকে যায় বলা মুশকিল? তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও নিয়মনীতির অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে আমরা একটা সম্মিলিত যৌথ প্যানেল দিতে পারলে জয় আমাদের সুনিশ্চিত। কারণ প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রমের স্থবিরতা বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ। ফলে ভিসি প্যানেল সামনের নির্বাচনে একচ্ছত্র আধিপত্য পাবে না। পদে বড় ধরনের একটা ভাগাভাগি হবে। এই ভাগাভাগি প্রশাসনকে ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও