কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

‘ঋণ শোধ করার মতো সাধ্য নেই কারো’

আমাদের সময় প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৩০

থেমে গেলো হৃদ ক্রিয়ার স্পন্ধন। পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। রেখে গেলেন কালজয়ী গান আর নিয়ে গেলেন কোটি মানুষের ভালোবাসা। বলছি সদ্য প্রয়াত খ্যাত সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা। মঙ্গলবার ভোরে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই গুনী সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব।তার এই অকাল চলে যাওয়া যেন কিছুতেই মেনে নিতে পাড়ছেন না তার দীর্ঘদিনের সহ কর্মীরা। চোখের জলে শেষ বিদায় দিচ্ছেন তাকে।জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কনক চাঁপা সদ্য প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন তার সঙ্গে স্মৃতি কথা। তা আমাদের সময় ডট কমের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো।আমাদের আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আসলে বাংলার বুলবুল। একাধারে তিনি ছিলেন শক্তিমান লেখক, সুরস্রষ্টা, এবং মিউজিক কম্পোজার। গানের জগতে তিনি ছিলেন সব্যসাচী। সারাজীবন তিনি গান নিয়ে গবেষণা করেছেন। আঞ্চলিক সুর থেকে শুরু করে আরব্য পারস্য ভারতীয় স্পেনীয় সুর নিয়ে নাড়াচাড়া করে তার সাথে নিজের ভালবাসা মিশিয়ে সুরের আবহ তৈরি করেছেন। তাঁর গানে প্রেম, বিরহ,কটাক্ষ, অনুরাগ, দেশপ্রেম, শিশুর সারল্য, সামাজিক নাটকীয়তা,বিদ্রোহ, চাওয়া মাত্রই পাওয়া যেতো। তাই ছবির গানের ফরমায়েশি জগতে তাঁর কদর ছিল অন্যতম। তাঁর সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল নিজেই গান লিখতেন তাই সুর আরও সুন্দর করে বসে যেতো। তিনি কখনো কখনো বলতেন, 'আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো যে কখনো পিছনে তাকাতে হবে না' হত এই গানের সুর ও কথা একসাথেই জমজ হয়ে জন্ম নিয়েছে! তিনি আসলে একজন স্বভাবকবি ছিলেন। মুখে মুখে গান বানানোর অসম্ভব দক্ষতা তার ছিল। একই সাথে নিজের সৃষ্টি কে অবহেলা করার দারুণ স্পর্ধা ও ছিল। গান রেকর্ড হয়ে গেলে সে লেখা তিনি ছিঁড়ে ফেলতেন। আমরা আপত্তি জানালে বলতেন আমার গান আমি কেনো সংগ্রহ করবো। গান ভালো হলে কালের প্রবাহেই তা জমা থাকবে।ব্যক্তিগত জীবনে বোহেমিয়ান টাইপ মানুষটা নিজের জন্য কিছুই করেন নাই। গান গান গান করেই জীবন পার করলেন। জীবনের প্রথম দিকে বেহালা গিটার বাজাতেন, মাঝ বয়সে এসে সেগুলোকেই আবার নতুন করে শেখার জন্য কি প্রচেষ্টাই না ছিলো তার! কিন্তু নিজেকে আরও জ্ঞানের গভীরে নিতে নিজেই নিজের শিক্ষক ছিলেন।অসম্ভব সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সারাজীবন তার গানেও অপার দেশপ্রেম, দ্রোহ, প্রতিবাদ তুলে ধরেছেন। ছবির গানেও তিনি নিজে বায়না করে দেশের গান ঢোকাতেন। ভালো কন্ঠের জন্য তিনি শিল্পী খুঁজে বেড়াতেন আজীবন। আমাকে তিনিই নিজে খুঁজে বের করেছিলেন। ৯২ সালের কথা, একটা অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী শাকিলা আপা বললেন কনক, বুলবুল ভাই তোকে খুঁজছেন, তাড়াতাড়ি যোগাযোগ কর। এর পর উনিই আবার ফোন দিলেন। পয়লা গান ছিলো "সাদা কাগজ এই মনটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম " মিলু ভাইয়ের সাথে ডুয়েট। সেদিনই বুলবুল ভাই বললেন ভাবী, ইনশাআল্লাহ অনেক গান হবে, আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো যে কখনো পিছনে তাকাতে হবে না! সত্যিই সেদিন থেকেই আমার আর অবসর ছিলো না। বুলবুল ভাই মাসে গড়ে প্রায় দশটা ছবি হাতে নিতেন এবং তাঁর বেশির ভাগ গান আমাকে দিয়েই গাওয়াতেন। নিজে অনেক গবেষণা করতেন কিন্তু গানের কন্ঠের ব্যাপারে নির্ভরশীল হতে চাইতেন। এর পর আসলেই আমাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রায় প্রতিটি গানই মাইল ফলক হয়ে যাচ্ছিল। তাঁর গানেই প্রায় সব পুরস্কার পাওয়া আমার! তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।কদিন আগে তিনি যখন অসুস্থ হলেন খোঁজ নিতে ফোন দিলাম তখন গানপাগল মানুষটা সব কথা বাদ দিয়ে বললেন ভাবী অনেক সাধনার পরে গানটি ধরেন তো! আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই আমার হাজবেন্ড বললেন গাও,আমি আরও বিপদে পড়তেই বুলবুল ভাই গানটি নিজেই শুরু করলেন। আমি তার সাথে গলা মিলিয়ে পুরো মুখটি গাইলাম। হঠাৎ উনি আমাকে অনেক দোয়া করলেন। আমি হচকচিয়ে গেলাম। আমার ওনার সাথে শেষ কথা। পরিচয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওনার দোয়া পেয়ে গেলাম,সাথে পেলাম অসংখ্য অনবদ্য গান,যা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কি দিয়ে আমি তার ঋন শোধ করি আমি আসলেই জানিনা। আমার গান প্রেমের তাজমহল ওনাকে প্রথম বারের মত জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্তির সম্মান এনে দিয়েছিলো, এটা আমার একটি গর্বের অনুভব বটে।আমি বিশ্বাস করি আমরা পুরো জাতীই ধন্য যে আমাদের একজন " আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল " আছে। আর একটি কথা আমি উচ্চ কন্ঠে বলতে চাই " সব কটা জানালা খুলে দাওনা " এই গানটি ছাড়া আর যদি কোন গানই সুর না করতেন তাহলেও বাংলাদেশ তার কাছে সমান কৃতজ্ঞ থাকতো। আমি এই সব্যসাচী সংগীতজ্ঞের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি।আল্লাহ ওনাকে ওপারে শান্তি দিন। আমীন।আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭৮ সালে মেঘ বিজলি বাদল ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনক চাঁপা-সহ বাংলাদেশি প্রায় সব জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল নিয়মিত গান করেন ১৯৭৬ সাল থেকে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও