কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ফেঁসে যাচ্ছেন ওসি শাহজাহান ও তার স্ত্রী

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ক্ষমতার অপব্যবহার, মামলা ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে কোটি টাকার সমপদ অর্জনের অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি টাকা জ্ঞাতবহির্ভূত সমপদ অর্জনের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া নামে-বেনামে তাদের আরো স্থাবর ও অস্থাবর সমপদ থাকার খোঁজ পাওয়া যায়। এর আগে ওসি শাহজাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে তাদের আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সমপদ অর্জন এবং ভোগদখলে রাখার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় পৃথকভাবে দুজনকে সমপদ বিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর তাদের জ্ঞাত আয়ের সমপদের পরিমাণ দাখিল করা হয়।অভিযুক্ত ওসি মো. শাহজাহান বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত। কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার হাজাতখোলা বাজার কাতালিয়া গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে তিনি। পরিবারসহ বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের খুলশী থানার দামপাড়া ১৪ হাইলেভেল রোড লালখানবাজার এলাকায় বসবাস করছেন।তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বদলি হওয়া ওসি মো. শাহজাহান নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, গত মাসে আমি ও আমার স্ত্রীর সমপদ বিবরণী দাখিল করেছি দুদকের কাছে। তদন্ত প্রমাণিত হবে আমি নির্দোষ। এ মুহূর্তে আর বেশি কিছু বলতে পারব না।দুদক সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে চাকরি শুরুর পর থেকে ওসি মো. শাহজাহানের নামে সর্বমোট ২ কোটি ৬৪ লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সমপদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৭ টাকা ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। চাকরি নেয়ার পর থেকে তার বৈধভাবে আয় ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৬ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে তিনি ব্যয় করেছেন ২৬ লাখ টাকা ১২ হাজার ৪৭৩ টাকা। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সমপদের পরিমাণ মিলেছে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৩ হাজার ৮১০ টাকা।এছাড়া তার স্ত্রীর নামে সর্বমোট স্থাবর ও অস্থাবর সমপদের পরিমাণ ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৭ টাকা। এর মধ্যে বৈধ আয় ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৫ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে তিনি ব্যয় করেছেন ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৩০ টাকা। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৩ লাখ ২ হাজার ৬৯২ টাকা জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সমপদের খোঁজ পাওয়া গেছে প্রাথমিকভাবে।২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লোহাগাড়া থানায় কর্মরত থাকাকালে ওসি শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার অবৈধ সমপদ অর্জনের অভিযোগ এনে দুদকের প্রধান কার্যালয় বরাবরে অভিযোগ পাঠান মো. হারুন নামে এক ব্যক্তি। এ অভিযোগের পর দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ তদন্ত শুরু করে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ই জুন লোহাগাড়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন মো. শাহাজাহান। এরপর থেকে নানা অনিয়ম, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, মামলা ও হুমকির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগে সমালোচিত হতে থাকেন এই কর্মকর্তা। সর্বশেষ লোহাগাড়া থানা হেফাজতে থাকা এক ফৌজদারি মামলার আসামিকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন এই ওসি। এই ঘটনার পর ওসি শাহজাহানকে থানা থেকে প্রত্যাহার করতে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ওসি শাহজাহান সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে গিয়ে বদলির আদেশ খারিজের আবেদন করেন। ৫ই ফেব্রুয়ারি শাহজাহানের আবেদনটির শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়। সর্বশেষ ১৫ই ফেব্রুয়ারি ওসি শাহজাহানের আবেদন খারিজ করে লোহাগাড়া থানা থেকে প্রত্যাহারের আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট।এর আগে ১৩ই ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আইন শাখার-১ এর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা স্বাক্ষরিত এক আদেশে মো. শাহজাহানকে লোহাগাড়া থানা থেকে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের লাইনে সংযুক্ত থাকার এক মাসের মাথায় ওসি মো. শাহজাহান আবারো ওসি হিসেবে নিয়োগ নিয়ে সন্দ্বীপ থানায় যোগ দেন। যোগদানের একদিন পর ২০১৮ সালের ১৮ই মার্চ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক মো. খসরুকে হয়রানিসহ তার বাড়িঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো করে পুলিশের ১৮-২০ জনের একটি দল। এ ঘটনার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। ওসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশও হয়। এরপর গত জুন মাসে ওসি শাহজাহানকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্যুরিস্ট পুলিশে বদলি করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, চাকরিতে যোগদানের পর থেকে ওসি মো. শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬ হাজার ৫০২ টাকা জ্ঞাতবর্হিভূত সমপদের খোঁজ পাওয়া গেছে। নামে-বেনামে আরো অস্থাবর-অস্থাবর সমপদ থাকারও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।হুমায়ুন কবীর বলেন, ইতিমধ্যে সমপদ বিবরণী দাখিল করেছেন শাহজাহান ও তার স্ত্রী। যাচাইবাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত