কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কুঁড়েঘরের মোজাফফরকে শেষ বিদায়

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। গতকাল সকালে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্মানও জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জানানো হয় শ্রদ্ধা। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার দীর্ঘজীবনের রাজনৈতিক কর্মস্থল ন্যাপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এরপর দুপুরে কফিন নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে রাজনৈতিক সহকর্মী ও অনুসারীরা ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান বরেণ্য এ রাজনীতিবিদকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সংসদ প্লাজায় জানাজার পর মোজাফফর আহমদের মরদেহ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ছিলেন একজন জাতীয় নেতা। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিলেন। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের আন্দোলন এবং প্রগতিশীল রাজনীতিতে তার অবদান অনেক। তিনি অসামপ্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপসহীন ছিলেন। এজন্যই তিনি জাতীয় নেতা। সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর সমাজতন্ত্রের জন্য আত্মনিয়োজিত একজন নেতা ছিলেন। তিনি ন্যাপ নেতা ছিলেন বটে, কিন্তু রাজনীতির শুরুতে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, রাজনীতিতে কীভাবে আত্মোৎসর্গ করতে হয়, কীভাবে সততার দৃষ্টান্ত রাখতে হয়, লোভ-লালসা পরিহার করতে হয়, অনন্তকাল তার অনুপ্রেরণা জোগাবেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ জীবনে কোনো সম্মাননার পেছনে ছোটেননি। তিনি প্রমাণ করে গেছেন, শুধু পদ-পদবির পেছনে ছোটাই রাজনীতি না। আদর্শের রাজনীতিই হল প্রকৃত রাজনীতি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা হয় অধ্যাপক মোজাফফরের। রোববার কুমিল্লার দেবিদ্বারে পারিবারিক কবরস্থানে বরেণ্য এ রাজনীতিককে দাফন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে একাত্তরে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দেন মোজাফফর আহমদ। প্রশিক্ষণ শেষে ওই বাহিনী ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনেও ভূমিকা পালন করেন মোজাফফর আহমদ। মোজাফফর আহমদের জন্ম ১৯২২ সালের ১৪ই এপ্রিল, কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ এমএ পাস করার পর ইউনেসকো ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যোগ দেন অধ্যাপনায়। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোজাফফর আহমদ এই আন্দোলন সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে চাকরি ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। ওই বছর সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে জয়ী হন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদই প্রথম ১৯৫৭ সালের ৩রা এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব তোলেন। এরপর ছয় দফাসহ প্রতিটি আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকার কাকরাইলে মোজাফফর আহমদের বাবার বাড়ি লক্ষ্য করে গোলাগুলি শুরু হলে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান ভারতের আগরতলায়। তাজউদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামন্ডলী গঠন করা হলে তাতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকেও সদস্য করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব নিতে অস্বীকার করা মোজাফফর আহমদ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারও সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত