কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

লালফিতার প্যাঁচে লাখ লাখ মানুষকে রাষ্ট্রহীন বানানোর পাঁয়তারা

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অভিবাসী-বিরোধী উন্মাদনার জোয়ার এখন বিশ্বজুড়ে। এর ওপর ভর করেই ক্ষমতায় এসেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। হয়েছে ব্রেক্সিট ভোট। এমনকি এ কারণেই পুরো ইউরোপ মহাদেশের রাজনীতিতে ঝড় বইছে। এই অভিবাসী-বিরোধী রাজনীতির কারণে কী ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে পশ্চিমে। কিন্তু এই একই বিষয়ে একেবারেই আলোচনা হয় না যেই দেশটিতে, সেটি হলো ভারত। অথচ, দেশটিতে এখন লাখ লাখ মানুষ রাষ্ট্রহীন ঘোষিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এই যুক্তি দেখিয়ে তাদের ভিনদেশি বানানোর চেষ্টা চলছে যে তারা অথবা তাদের পূর্বসূরিরা অ-নথিভুক্ত অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে সেখানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।বর্তমানে ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসামে জাতীয় নাগরিকপুঞ্জি হালনাগাদ চলছে। প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের তালিকা করার কথা বলে এই কাজ চলছে। অর্থাৎ এই নাগরিকপুঞ্জিতে কারও নাম না থাকলে তাকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ২০১৮ সালে একটি খসড়া তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে বিদেশি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। চূড়ান্ত তালিকা ৩১শে আগস্ট প্রকাশিত হওয়ার কথা।সারা বিশ্বের মতোই আসামেও অভিবাসনের ধুয়ো তুলে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। আসামের বাংলাভাষীদের হয়রানির উদ্দেশ্যেই নাগরিকপুঞ্জি এসেছে, এমনটা অনেকেই মনে করেন। এই বাংলাভাষীদের সঙ্গে জাতিগত সাদৃশ্য রয়েছে বাংলাদেশিদের। যদিও ৮ কোটি ৩০ লাখ বাঙালি ভারতীয় নাগরিক এবং অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠী যতদিন ধরে আসামে বসবাস করছে ততদিন ধরে বাঙালিরাও সেখানে আছে।আসামে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদের এজেন্ডা মিলে যায়। মোদি ও তার দল বিজেপি এমন এক চিত্র দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যে, বাংলাদেশ থেকে মুসলিমরা গিয়ে ভারত শেষ করে ফেলছে। কথাগুলো বেশ চেনা শোনায় না?মে মাসের সাধারণ নির্বাচনে অবৈধ অভিবাসন ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক ইস্যু। ওই নির্বাচনে বড় জয় পায় বিজেপি। প্রচারাভিযানের সময় দলের প্রেসিডেন্ট অভিবাসীদের উইপোকা বলেও সম্বোধন করেন। ভারতের আদালত পর্যন্ত এই বিষয়ে খুব অনুদার অবস্থান নিয়েছে। নির্বাহী বিভাগের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি রুখে দেয়ার বদলে, বিচার বিভাগ পর্যন্ত নাগরিকপুঞ্জি নিয়ে কঠোর আচরণ করেছে। এ অবস্থা দেখে স্তম্ভিত হয়ে একজন আইন পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনের শাসনের রক্ষক থেকে আইনের শাসনের প্রাত্যাহিক লঙ্ঘনের উৎসাহী সহযোগী হয়ে উঠেছে।’আসামের ৩ কোটি নাগরিকের প্রত্যেকের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের উদ্দেশ্যই এমনিতেই ভয়ঙ্কর একটা বিষয়। কিন্তু তার চেয়েও ভয়ানক কিছু লুকিয়ে আছে বিস্তারিত আয়োজনে। নাগরিকপুঞ্জিতে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের ভার এতটাই কড়া, পক্ষপাতদুষ্ট ও বাছবিচারহীন যে, এটি যতটা না নাগরিকদের তালিকা বানানোর প্রচেষ্টা, তার চেয়েও মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার আয়োজনই যেন এতে ফুটে উঠছে বেশি। নাগরিকপুঞ্জিতে নাম উঠানোর জন্য আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগ থেকেই আবেদনকারী বা তার পূর্বসূরিরা আসামে বসবাস করেছেন। এই সময়সীমা এমনিতেই মানুষকে বাদ দেয়ার একটি অপচেষ্টা। কেননা, ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় লাখ লাখ শরণার্থী ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। এরপর আছে লালফিতার দৌরাত্ম্য। রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে নথিপত্রের খোঁজ। মানুষজন হন্য হয়ে পারিবারিক ভূমির দলিলপত্র বের করার চেষ্টা করছে। ঐতিহাসিক কোনো নির্বাচনী নথিতে দাদা-দাদির নাম বের করার চেষ্টা করছে। এমনকি ১৯৫১ সালের নাগরিকপুঞ্জিতে পরিবারের তালিকাও খুঁজছেন তারা। ৭ দশক আগের পারিবারিক নথিপত্র খুঁজে বের করলেই যে দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি মিলছে তা নয়। আসামে দারিদ্র্য এখন জেঁকে বসে আছে। রাজ্যে প্রতি ৪ জনের একজন একেবারেই স্বাক্ষরজ্ঞানহীন। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি যদি দলিল বা নথি পড়তেও না জানেন, তাকেও এখন নথি বা দলিল জোগাড় করে জমা দিতে হবে। নয়তো চলে যাবে নাগরিকত্ব।সবচেয়ে বড় কথা হলো, জাতিগত গোঁড়ামি থেকেই এই পুরো প্রক্রিয়ার শুরু। এমনকি নাগরিকপুঞ্জিতে ‘আদি বাসিন্দা’ নাম দিয়ে একেবারে বর্ণবাদী এক ধরনের শ্রেণিকরণ করা হয়েছে। এর মানে হলো, আসামের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব যাচাইবাছাই হবে অনেক কম জটিল ও সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।নাগরিকপুঞ্জির কারণে কিছু অবিশ্বাস্য ফলাফলও এসেছে। একটি ঘটনায় দেখা গেছে, একজন পিতাকে খসড়া নাগরিকপুঞ্জিতে বিদেশি আখ্যা দেয়া হয়েছে, কিন্তু তার পুত্রকে ভারতীয় বলা হচ্ছে! ৬ বছর বয়সী এক কন্যাশিশু উতরে গেছে, কিন্তু তার যমজ ভাই বিদেশি হয়ে গেছে!এছাড়া অনেকে নথি খুঁজে বের করতে পারলেও বানান ভুল ও অসামঞ্জস্য দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে, কেননা স্বাক্ষরজ্ঞানহীনতার হার সেখানে অনেক বেশি। কিন্তু এসব কারণেও অনেকের নাম নাগরিকপুঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অর্থাৎ, আপনার দাদার নথিতে একটি বানান ভুলের কারণে আপনার নাগরিকত্ব আর থাকছে না!ভারতের নাগরিকপুঞ্জির সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের তুলনা করেছেন অনেকে। কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে পুরো এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নাগরিকত্বহীন করে ফেলা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আসামের মতো মিয়ানমারও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে! এমনকি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা না বলে বাঙালি বলার ওপর জোরাজুরি করে মিয়ানমার সরকার। কিন্তু দুই সংকটের মধ্যে পার্থক্য হলো মাত্রা ও ব্যাপকতায়। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা মাত্র ৭-৮ লাখ। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রণীত খসড়া নাগরিকপুঞ্জিতে এই সংখ্যার ৫ গুণ মানুষকে বিদেশি বানিয়ে দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট যখন দশকের পর দশক ধরে চলছিল, তখন সারা বিশ্ব অত নজর দেয়নি। যখন তাদেরকে জাতিগতভাবে নির্মূল করা শুরু হয়, তখনই ঘুম ভাঙে বিশ্বের। ঠিক সেটাই হচ্ছে ভারতের নাগরিকপুঞ্জির ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে পার্থক্য হলো, ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষের সংখ্যা এখানে অনেক বেশি।আসামের পর সারা ভারতে অর্থাৎ প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের নাগরিকত্ব সমীক্ষা পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর যেই পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির, তারই অংশ এই নাগরিক সমীক্ষা। ভারতীয় মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ব্রাজিলের গোটা জনসংখ্যার সমান, যেটি কিনা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। দেশজুড়ে এই নাগরিক সমীক্ষা চালানোর ফল হবে এক অকল্পনীয় ট্র্যাজেডি। আর এতে বিশৃঙ্খলা নেমে আসবে পুরো ভারতজুড়ে।(শোয়েব দানিয়েল ভারতের স্ক্রল.ইন নামে সংবাদ বিষয়ক বিশেষায়িত ওয়েবসাইটের সাংবাদিক। তার এই নিবন্ধ বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় ‘রেড টেপ ইজ বিইং ওয়েপনাইজড ইন ইন্ডিয়া টু ডিক্লেয়ার মিলিয়ন্স স্টেটলেস’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।)

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত