কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রযুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নয়া বিতর্ক

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

দেশে এখন প্রযুক্তি যুদ্ধের দামামা চলছে। আর এ যুদ্ধটা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেন্দ্রিক। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে এই যুদ্ধের ময়দানে। প্রতিদিনই নতুন নতুন যুদ্ধ ইস্যু যোগ হচ্ছে প্রযুক্তি দুনিয়ায়। এসব মোকাবিলা করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি- প্রযুক্তি যুদ্ধ কঠিন একটি যুদ্ধ। এর মাঠ অবাধ ও বিস্তৃত। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি নিয়ে লড়াই করাটা সত্যিই দুরূহ। তবে অসম্ভব নয়। এ জন্য নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে প্রযুক্তির যুদ্ধ ময়দানের যোগ্য হিসেবে। তবে বর্তমানে প্রযুক্তি যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা নাজুক বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা। তাদের দাবি, ফেসবুক, ইউটিউবসহ আরও কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ কারণে দেশের জন্য ক্ষতিকারক নানা কনটেন্ট সরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অথচ এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশি গ্রাহকদের নিয়ে ব্যবসা করছেন হাজার হাজার কোটি টাকার। এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে দেশে ফ্রি-ফায়ার ও পাবজির মতো ক্ষতিকর খেলা বন্ধের উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি। কিন্তু তাতে সফল হওয়া সম্ভব হয়নি। বিকল্প উপায়ে এখনো সংশ্লিষ্টরা খেলছেন এ নিষিদ্ধ খেলা। এ অবস্থায় সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের এক মন্তব্যে প্রযুক্তি যুদ্ধ নিয়ে নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ৬ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, কেবল টেলিফোন বা আইএসপি দিয়ে অপরাধ হয় না। ডার্ক ওয়েভে অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। এখন সবচেয়ে বেশি অপরাধের মাধ্যম ইন্টারনেট। এক্ষেত্রে অসহায় প্রকাশ করা ছাড়া বিকল্প কিছু থাকে না। ভিপিএন অপরাধের বড় হাতিয়ার। দিনে দিনে অপরাধ করার হাতিয়ার বাড়ছে। মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিটিআরসি কেবল টেলকো অপারেটর ও আইএসপিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এখন আপত্তিকর ওয়েবসাইটগুলো বাংলাদেশের সীমানায় বন্ধ করতে পারে। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এক রকমের অসহায়ত্ব বোধ করি, আর তা হলো সোশ্যাল মিডিয়া। তারা তাদের মতো করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বানায়, আমরা তাদের কৃপার ওপর নির্ভরশীল। সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। মন্ত্রীর এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়। ফেসবুক ইউটিউব-এর কাছে সরকার অসহায় এ বক্তব্য হাস্যকর বলে মন্তব্য করা হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতিও দেয়। বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্যের ফলে দেশের ১৭ কোটি গ্রাহককে অনিরাপদ করে তুলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যখন এক যুগপূর্তি হচ্ছে, বর্তমান সরকার মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে, আজ প্রযুক্তিতে আমরা সারা বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছি তখন সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আমাদেরকে হতাশাগ্রস্ত করেছে। পশ্চিমা দেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ এখন ভিপিএনসহ উন্নত প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে গুগল এবং ফেসবুকের ক্যাশ সার্ভারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তাছাড়া মহাকাশের প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের স্যাটেলাইটের পাশাপাশি অন্য দেশের স্যাটেলাইট থেকে সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বা বিটিআরসি সেদিকে যেতে সক্ষম হয়নি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত গুগল এবং ফেসবুকের সঙ্গে সরকারিভাবে চুক্তিও করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রযুক্তি আগ্রাসন রুখতে প্রযুক্তি উদ্ভাবক দেশের সাথে কূটনৈতিকভাবে চুক্তি সম্পাদন করা যেতে পারে। আমরা যখন স্বপ্ন দেখছি বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তির নেতৃত্ব দিবো সে সময় সরকারের একজন মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য দেশে বিশৃঙ্খলা উস্কে দেবে। আমরা মনে করি প্রযুক্তি আগ্রাসন রুখতে সরকারের প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে সাইবার ইন্টেলিজেন্স গঠন করা জরুরি। আমরা আশা রাখবো সরকারের মন্ত্রী মহোদয় ও নিয়ন্ত্রণ কমিশন দ্রুত হতাশাজনক বক্তব্য পরিহার করে জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং প্রযুক্তির আগ্রাসন রুখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। প্রযুক্তি যুদ্ধ প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, সাইবার ওয়ার্ল্ড উন্মুক্ত বিষয়। মহাশূন্যে যে কেউ ঘুড়ি উড়াতে চায়। নিয়ন্ত্রণের জন্য নাটাই নিজের হাতে বা সুতা কেটে দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ বিটিআরসি’র হাতে নেই। আমরা বেশ কয়েকবার ফেসবুকের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশে একটা অফিস স্থাপন এবং তারা আমাদের কথামতো কাজ করে। আমরা অফিস স্থাপনের কাজ করতে পারিনি। তিনি বলেন, সাইবার মনিটরিংয়ের মূল কার্যক্রমটি করছে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি। তারা ক্ষতিকর কনটেন্ট চিহ্নিত করে বিটিআরসি’র কাছে পাঠায়। সে অনুযায়ী বিটিআরসি কনটেন্ট সরানোর জন্য ফেসবুক, ইউটিউব বা এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানায়। আবার অনেক মানুষ বিটিআরসি’র হটলাইন, অনলাইন এবং ই-মেইলে ক্ষতিকর কনটেন্ট সরানোর জন্য অনুরোধ জানায়। এখানে একটা সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, কনটেন্ট সরানোর অনুরোধের সঙ্গে ফেসবুক-ইউটিউব কর্তৃপক্ষ আদালতের রায়, নির্দেশনা কিংবা আদেশের কপি চায়। সরকারি সংস্থার তালিকার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ অনুসরণ করা হয়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিকর কনটেন্ট সরানোর যেসব অনুরোধ আসে, সেখানে আদালতের নির্দেশনা কিংবা আইনগত পদক্ষেপের বিষয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে না। এ কারণে তখন কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ জানালেও ফেসবুক বা ইউটিউব সাড়া দেয় না। এদিকে প্রযুক্তি যুদ্ধের অংশ হিসেবে বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাইবার জগতের কনটেন্ট মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনায় নতুন করে ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠন করেছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, সরকারের অনুমোদনক্রমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম (ডট)-এ স্থাপিত সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স (সিটিডিআর) নামক কারিগরি সিস্টেমের মাধ্যমে আপত্তিকর ওয়েবসাইট, ডোমেইন এবং ব্লগ বন্ধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। ইতিমধ্যে সিটিডিআরের মাধ্যমে ২২,০০০ পর্নোগ্রাফি ও জুয়ারি সাইটে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। গত এক বছরে বিটিআরসি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ১৮,৮৩৬টি লিংক অপসারণের অনুরোধ করে যার মধ্যে ৪,৮৮৮ লিংক অপসারণ করা হয় এবং ইউটিউবে ৪৩১টি লিংক বন্ধ করার অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৬২টি লিংক বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া, সিটিডিআর-এর মাধ্যমে ১,০৬০টি ওয়েবসাইট এবং লিংক বন্ধ করা হয়। বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার জগতে অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়ছে, এতে অনেকের সামাজিক এবং পারিবারিক ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকেই অপব্যবহার করছে, আপত্তিকর কনটেন্ট, ভিডিওর ফলে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে, দেশি-বিদেশি অপশক্তিকে প্রতিহত করতে অনলাইনের ক্ষতিকর উপদান অপসারণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি কাজ করছে। এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির গণমাধ্যমকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তা ভেঙে ফেলা খুব সহজ নয় বা এক অর্থে দুঃসাধ্য। বিশেষ করে কোনো ব্যবহারকারী যখন একটা কনটেন্ট আপলোড করে, তা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষ এবং যিনি ব্যবহারকারী, তিনিই কেবল সরিয়ে নিতে পারেন। দূর থেকে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের তা মোটেও সম্ভব নয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অন্য কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের পক্ষেও সম্ভব নয়। অনেক থার্ড পার্টি কোম্পানি আছে, তারা তাদের প্রযুক্তিপণ্য বেচার জন্য অনেক ধরনের টোপ দেয়, এনক্রিপশন ভাঙার নানা কেরামতি দেখায়। কিন্তু বাস্তবে এগুলো খুব বেশি কাজ করে না। আবার বিশ্বজুড়ে আলোচিত পেগাসাস সফটওয়্যার দিয়ে ডিভাইসের মাইক্রোফোন, স্পিকার হ্যাক করে কথোপকথন, চ্যাট হয়তো কেউ পড়তে পারে; কিন্তু তারও বড় বিপদ আছে। এটা এমন প্রযুক্তি, আপনি কাউকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করছেন, কিন্তু দেখা যাচ্ছে আপনি নিজেও ঘায়েল হয়ে বসে আছেন। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এ ধরনের প্রযুক্তি দিয়েও কিন্তু ফেসবুক বা ইউটিউবে ব্যবহারকারীর আপলোড করা কনটেন্ট সরানো সম্ভব নয়। অতএব, যদি আপলোড করা কনটেন্ট অপসারণের বিষয় আসে, সেটা আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত