কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জয়ের কাছ থেকেই কম্পিউটার শিখেছি

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০

ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকেই কম্পিউটার শেখার তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, জয় আমাকে পরামর্শ দিলো কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স তুলতে হবে, দাম সস্তা করতে হবে। মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে হবে, মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলেই মানুষ এটা শিখবে। সেভাবেই কিন্তু আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। আজকে যেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। এটা জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা। তিনি বলেন, স্কুল থেকেই জয় কম্পিউটার শিক্ষা নেয়। যখন ছুটিতে আসতো, কম্পিউটার নিয়ে আসতো। জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার শিখেছি। ‘৯১ সালে যখন পার্টির জন্য অনেক দামে কম্পিউটার কিনি, তখনই আমরা আলোচনা করি, কীভাবে দেশে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু করা যায়। গতকাল পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন ও জনপ্রশাসন পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গত ২৩শে জুলাই ছিল পাবলিক সার্ভিস দিবস, তবে করোনার কারণে এটির আয়োজন গতকাল করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের দিনটিও আমার বিশেষ দিন। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ, পাকিস্তান দিবস। সেদিন বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করেনি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। তখন আমি কেবল সন্তানসম্ভবা। আমি সাধারণত বাবার হাত-পায়ের নখ কেটে দিতাম, সেটা আমার নিয়মিত কাজ ছিল। সেদিন এক মগ পানি নিয়ে বাবার নখ কাটতে বসলাম। সেদিন বাবা বললেন, হ্যাঁ, ভালোভাবে কেটে দে, কারণ পরে আর সুযোগ পাবি কি-না! তবে তোর ছেলে হবে, সে ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে হবে, তার নাম ‘জয়’ রাখবি।’ ২৫শে মার্চের ভয়াল রাতের ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বন্দি অবস্থায় মেডিকেলে জয়ের জন্ম হয়। পরে বাচ্চা নিয়ে কারাগারে এলে একজন পাকিস্তান সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করে তার নাম কী? আমি বলি জয়। বলে মানে কী? বলি, জয় মানে জয়, ভিক্টরি। তখন এই ছোট্ট শিশুকেও তারা গালি দেয়। তিনি বলেন, ‘আজ তার (জয়ের) জন্মদিন। ৫০ বছর বয়স হলো জয়ের। এই করোনার কারণে আমরা একসাথে হতে পারলাম না, এটা আরেকটা দুঃখ। আপনারা এই দিনটি স্মরণ করছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রশাসনের উন্নয়নের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত উদ্যোগের বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের লেখা দু’টি স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক- ২০২০ এবং ২০২১ সালের জনপ্রশাসন পদক বিজয়ীদের মাঝে স্বর্ণপদক, চেক, ক্রেস্ট এবং সনদ বিতরণ করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম স্বাগত বক্তৃতা করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের শাসক নয়, সেবক হিসেবে কাজ করবে। দেশের বয়স্ক নাগরিকদের কেউ যাতে টিকাদান থেকে বাদ না পড়েন তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ভালো কাজের জন্য যেমন তাদেরকে পুরসৃ্কত করা হবে, তেমনি মন্দকাজের জন্যও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন কেনা এবং দেয়া শুরু হয়েছে। ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন দিতে হবে যাতে দেশের সকলেই সুরক্ষিত থাকে। ইতিমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের পরিবারই শুধু নয়, তাদের বাড়িতে যারা কাজ করে তাদেরকেও যেন ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়া হয়। তাতে, সবাই সুরক্ষিত থাকতে পারবে। তিনি বলেন, এর জন্য যত টাকা লাগবে, যত ভ্যাকসিন দরকার হয়, কিনবো এবং বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আমরা তৈরি করবো যাতে মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়। অনুষ্ঠানে সরকার প্রধান বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছে। বাংলাদেশের বয়স্ক কোনো মানুষ টিকা প্রাপ্তি থেকে বাদ যাবে না। ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলের জন্যই আমরা এই টিকা ক্রয় করতে থাকবো। সবাই যাতে টিকা পায় সেই ব্যবস্থাও আমরা অবশ্যই করবো। তিনি বলেন, আজকে অল্প সময়ের মধ্যে যে উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলো- এটা আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই হয়েছে। আমরা যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছি সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন এবং মানুষ তার সুফলটা পেয়েছে বলেই দেশের উন্নতি সম্ভব হয়েছে। তিনি এজন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭৫ সালের ১০ই জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানুষের সেবা করার আহ্বান জানান। জাতির পিতা বলেন, সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন, যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি তাদের যাতে কষ্ট না হয় তার দিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে তাদের অবশ্যই আপনারা কঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান একটা নিরপরাধ লোকের ওপর যেন অত্যাচার না হয়। তাহলে আল্লাহ্‌র আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে। আপনারা সেইদিকে খেয়াল রাখবেন। আপনারা যদি অত্যাচার করেন শেষ পর্যন্ত আমাকেও আল্লাহ্‌র কাছে তার জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, আমি আপনাদের নেতা আমারও সেখানে দায়িত্ব রয়েছে। আপনাদের প্রত্যেকটি কাজের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত আমার ঘাড়ে চাপে। আমার সহকর্মীদের ঘাড়েও চাপে। এজন্য আপনাদের কাছে আমার আবেদন রইল, অনুরোধ রইলো, আদেশ রইলো- আপনারা মানুষের সেবা করুন। মানুষের সেবার মতো শান্তি দুনিয়ার আর কিছুতে হয় না। একজন গরিব যদি হাত তুলে আপনার জন্য দোয়া করেন আল্লাহ্‌ সেটা কবুল করে নেন। তিনি করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি করোনা আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে গত এক দেড় বছরে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্য এবং তার দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ভালো কাজের যেমন পুরস্কার পাবেন তেমনি কেউ যদি খারাপ কাজে সম্পৃক্ত হন তাহলে তাদের ক্ষমা নেই। তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে। এই নিয়মটা থাকতে হবে এবং সেটাই আমরা করবো। সরকার প্রধান বলেন, আমি সরকারি কর্মচারীদের বলবো জনগণের সেবা করাই সবচেয়ে বড় কাজ। আপনারা অনেকেই চমৎকার উদ্ভাবনী কাজ করেছেন যা দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজে লাগছে এবং আপনাদের কাজগুলোর সুফল আগামী প্রজন্ম ভোগ করবে। এভাবেই বাংলাদেশকে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আজকে ২০২১ এর মাঝে আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই এলো অদৃশ্য শত্রু করোনা। ইনশাআল্লাহ্‌ এর হাত থেকেও আমরা মুক্তি পাবো। সরকারি কর্মচারীরা যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন তাদেরকে এলাকা ভিত্তিক উন্নয়নে অবদান রাখারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একেকটা এলাকার উন্নয়ন কীভাবে করা যায় সেটা আপনারা সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করতে পারেন। মানুষকে কীভাবে সেবা দেয়া যায় কীভাবে উন্নত জীবন দেয়া যায় সেদিকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। যাতে আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। জাতির পিতার ১৯৭২ সালে গণপরিষদে প্রদত্ত ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের অনুশাসন দেন। জাতির পিতা বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। তারা শাসক নন, সেবক।’ সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদে জাতির পিতা তার এই চিন্তা চেতনার প্রতিফলন ঘটান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল সময় জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ তৃণমূল থেকে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাঁর সরকার যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারি কর্মচারীদেরকেও দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই মহামারি আজকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রেই একটি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর থেকে যত দ্রুত বাংলাদেশকে মুক্ত করা যায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষ যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলে সে বিষয়ে তাদেরকে সচেতন করতে হবে। মানুষকে একটু সচেতন করার কাজটা আপনারা নিশ্চই করবেন। প্রশাসন নিয়ে সরকার প্রধান তার ভাষণে আরও বলেন, সরকার মানে জনগণের সেবক। সরকারি কর্মকর্তাদের যদি সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া যায়, কর্মপরিকল্পনা দেয়া যায়, তারা যে অসাধ্য সাধন করতে পারেন- সেটাই আজকে প্রমাণিত। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যদি আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয়া যায়, তাহলেই সব কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব। যাদের মাধ্যমে আমরা কাজ করবো, তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটিও আমরা করেছি।স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন: এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫১তম জন্মদিনে ‘সজীব ওয়াজেদ জয়: তারুণ্যদীপ্ত গর্বিত পথচলা’- স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে গণভবনে এই দ্বিভাষিক গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর বেশকিছু নিবন্ধ, সংবাদচিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্র রয়েছে এই বইয়ে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করা হয়েছে বইটি। ‘সজীব ওয়াজেদ জয়: তারুণ্যদীপ্ত গর্বিত পথচলা’- স্মারকগ্রন্থের প্রচ্ছদ ও গ্রন্থ পরিকল্পনা করেছেন শাহ্রিয়ার খান বর্ণ। বইটির ইংরেজি সংস্করণের নাম ‘সজীব ওয়াজেদ জয়: আ স্পিরিটেড গ্রেসফুল জার্নি’। ১৬০ পৃষ্ঠার বইটির উপদেষ্টা সম্পাদক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বইটি সম্পাদনা করেছেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। জয়ীতা প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশ করেছেন ইয়াসিন কবীর জয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত