কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ভোটাররা খুশি প্রার্থীরা হতাশ

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০

জালালপুর এলাকার জামাল ও ফেরদৌস আহমদ। ভোটে যাবেন কিনা- চিন্তা ভাবনায় ছিলেন। করোনার সংক্রমণ বেশি। ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত মানুষ। না চাইলেও প্রার্থী ও সমর্থকরা দরোজায় এসে হাজির। পোস্টার দিয়ে দলবেঁধে ছবি তুলেছেন। মানা হচ্ছিলো না কোনো সামাজিক দূরত্বও। মুখে মাস্কও ছিল না অনেকেরই। এই প্রচারণায় নিজেদের কোনোমতে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন জামাল ও ফেরদৌস। ভোটের দিন কেন্দ্রে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। এখন নির্বাচন স্থগিত হওয়ার কারণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। গতকাল দুপুরেই সিলেট-৩ আসনে নির্বাচন স্থগিতের খবর পৌঁছে যায়। আর স্থগিতের খবরে খুশি ভোটাররা। করোনাকালের এই নির্বাচন নিয়ে বিরক্ত ছিলেন ভোটাররাও। ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার আব্দুল বাসিত, সুয়েব আহমদ জানিয়েছেন- নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ ছিল কম। তবে- স্বাস্থ্যবিধি ও করোনার সংক্রমণ নিয়ে ছিলেন চিন্তিত। এখন আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তারা। দুপুরে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার একটি কমিউনিটি সেন্টারে নির্বাচনী সমাবেশ করছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সহ সিনিয়র নেতারা। নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশনা আসার পর তারা সভা সংক্ষিপ্ত করে চলে আসেন সিলেটে। তবে- নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি শুনার পর প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন- ‘আদালতের রায়ের প্রতি আমরা সবাই শ্রদ্ধাশীল। যেহেতু শোকের মাস আগস্ট সামনে, এ কারণে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।’ পরে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আমরা আইনের প্রতি, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ কারণে ফেঞ্চুগঞ্জের নির্বাচনী জনসভা শেষ করে আর কোনো সভা করিনি। কেন্দ্রীয় ও সিলেটের নেতারাও নির্বাচনী এলাকা থেকে ফিরে এসেছেন।’ তিনি বলেন- ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটির প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল।’ জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক শেষদিনে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে সমাবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পর তিনিও তার নির্বাচনী সভা বাতিল করে দেন। তবে- বিকালের দিকে ব্যক্তিগত ভাবে তার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আতিকুর রহমান আতিক তার প্রতিক্রিয়ায় জানান- ‘প্রচার-প্রচারণায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা হচ্ছিল। আদালত যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটির প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমরা। তবে- বার বার নির্বাচন পেছানোর কারণে আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। এতে করে ভোটের পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে।’ তিনি রিটকারী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন- ‘আমরা প্রার্থীরা এক মাসের অধিক সময় ধরে মাঠে আছি। প্রচারণা চালাচ্ছি। আরো আগে যদি তারা আইনি উদ্যোগ নিতেন তাহলে সবার জন্য ভালো হতো। এরপরও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। এখন নির্বাচন কমিশনই বিষয়টি দেখবে বলে জানান তিনি।’ নির্বাচন স্থগিতের খবর শুনে শেষদিনের প্রচারণা সংক্ষিপ্ত করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীও। তিনি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। এদিকে- সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি গতকাল থেকে শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে গতকাল ইভিএম’র ডামি ভোটের মহড়া দেওয়া হয়। এতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আসনের তিনটি উপজেলায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। গতকাল বিকাল পর্যন্ত তারা নিজ নিজ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। মাঠে থাকা একাধিক নির্বাচনী কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ইভিএম-এ ভোট প্রদানের বিষয়ে ভোটারদের অবগত ডামি প্র্যাকটিস করা হয়েছে। এতে ভোটার সহ ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা না আসার কারণে তারা তাদের কাজ চলমান রেখেছেন বলে জানান। এদিকে- রিটার্নিং কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে- গতকাল বিকেল পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন কিংবা আদালতের সূত্র থেকে তাদের কাছে পৌঁছেনি। নির্দেশনা পাওয়ার প্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কার্যক্রম থেকে সরে আসবেন বলে জানিয়েছেন এক সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। এদিকে- শেষ মূহূর্তে এসে উত্তাপ ছড়িয়েছিল সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন। গতকাল দুপুরে দক্ষিণ সুরমার বদিকোনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বদিকোনার আতিকুর রহমান আতিকের নির্বাচনী কার্যালয়ে স্থানীয় বুরহানের নেতৃত্বে ১০-১২ জন যুবক উপস্থিত হয়ে চাঁদা দাবি করে। এ সময় কার্যালয়ে থাকা জাতীয় পার্টির সমর্থক সুমন ও মুন্না প্রতিবাদ করলে বুরহান এবং তার সহযোগীরা হামলা করে কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। এসময় সুমন ও মুন্না আহত হন। হামলাকারীদের সঙ্গে রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন- পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তবে- কেউ থানায় এজাহার দাখিল করেননি বলে জানান তিনি। ভোটের আগে তিনটি উপজেলার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ইতিমধ্যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। জাতীয় পার্টি দক্ষিণ সুরমার সদস্য সচিব তাজ উদ্দিন মো. এপলু জানিয়েছেন- সিলাম ও কুছাই এলাকায় দু’টি ঘটনায় জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনাগুলোর সঙ্গে জাতীয় পার্টির কর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তল্লাশির অভিযোগ বিএনপি’র: সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমদ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তার সঙ্গও ছেড়ে দিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। এই অবস্থায় তিনটি উপজেলার বিএনপি’র কর্মীদের ভোটের আগে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। তিনি গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- দক্ষিণ সুরমায় যুবদল নেতা মকসুদ, কুহিনূর সহ অসংখ্য নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছে। বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে একই ভাবে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন- নির্বাচনের ধারেকাছেও বিএনপি নেই, এরপরও হয়রানি করতে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকার ও অথর্ব নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জনগণের ভোটাধিকার হরণসহ সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জাতীয় সংসদের আসন্ন সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন বয়কট করেছে। এই প্রেক্ষিতে সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না। এরপরও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকার তাদের অনুগত প্রশাসন দিয়ে ঐ নির্বাচনী এলাকায় অর্থাৎ দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশে বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে তাদের পরিবার-পরিজনকে হুমকি-ধমকি এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।’ বিবৃতিতে তিনি বলেন- ‘গত ১২ বছর ধরে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের যে নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে সিলেটের ঘটনা সেটিরই ধারাবাহিকতা। সরকার ও তাদের আজ্ঞাবাহী প্রশাসনের ন্যক্কারজনক ভূমিকায় করোনাকালীন বর্তমান ভয়াবহ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীন মানুষকে সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যে নির্বাচনে জনগণের কোনো আস্থা নেই, যে নির্বাচন বিএনপি বয়কট করেছে, নেতাকর্মীরা পাতানো-সাজানো যে নির্বাচন বর্জন করে আর্তমানবতার সেবায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তখন বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা ও হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত