কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ডেঙ্গুর থাবা

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০

দেশে করোনা সংক্রমণে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই নতুন সংকট তৈরি করেছে ডেঙ্গু জ্বর। চলতি মাসের শুরু থেকে রাজধানীতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু শনাক্তের হার। হাসপাতালে বাড়ছে ভিড়। এতে আতঙ্কিত নগরবাসী। দিন যতই যাচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ ততই প্রকট হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা ও ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ অনেকটা একই রকম। ফলে একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু চোখ রাঙ্গালেও, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনের তৎপরতা এখনো আগের মতোই। যদিও ঢাকা সিটির দুই মেয়র ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুতির কথা বলে আসছেন। মশক নিধন অভিযানও চলমান। আধুনিক ভবন থেকে নির্মাণাধীন সরকারি-বেসরকারি ভবনের সবখানেই মিলছে এডিসের লার্ভা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চলমান আছে জেল- জরিমানাও। তাতেও সুফল মিলছে না। নগরবাসীর অভিযোগ, দুই সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে এমনটি হতো না। সম্প্রতি ডেঙ্গু বাড়লেও পাড়া-মহল্লায় মশককর্মীদের তেমন একটা দেখা মেলে না। বিভিন্ন সময় ওষুধ ছিটালেও তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কর্মকর্তারা কোনো ওষুধ না ছিটিয়েই চিরুনি অভিযানের নামে জরিমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ২০১৯ সালের চেয়ে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। গত বছর এডিস মশা নিয়ে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা দেখালেও, এ বছর এখনো তেমনটা দেখা যায়নি। ফলে ক্রমেই মশার বিস্তার বাড়ছে। ২০১৯ সালের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এখনই ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। হঠাৎ রোদ, হঠাৎ বৃষ্টি- এমন আবহাওয়ায় নগরীর আনাচে কানাচে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন বাড়ছে মশার লার্ভা। এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে করোনার মতো ডেঙ্গুও প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে। পাশাপাশি এই কাজের সঙ্গে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৫ জন। যা গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক। এর আগের দিন শনিবারও ১০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি মাসের প্রথম ২৫ দিনে ১৩০৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ রাজধানীর বাসিন্দা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় তুলনামূলক ডেঙ্গু রোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছে। চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত ১৬৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। যা গত বছরে এই সময়ের চাইতে প্রায় ৪ গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল প্রায় এক হাজার। অথচ এবছরের প্রথম সাত মাসে সেই সংখ্যা দুই হাজারের কাছাকাছি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১০২ জন ঢাকার ৪১টি সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৩ জন। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৬০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা নিশ্চিত করেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গু সন্দেহে ৩টি মৃত্যুর ঘটনা যাচাই-বাছায়ের জন্য আইইডিসিআরে নমুনা পাঠানো হয়েছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, জুন মাস থেকেই এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে। গত মাসে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পরীক্ষায় এডিস মশার লার্ভা ও পূর্ণবয়স্ক মশার ঘনত্ব পাওয়া যায় ২০-এর উপরে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, জুন মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আমরা এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষা করেছি। জরিপে প্রতি ১০০ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে এডিস মশার লার্ভা ও পূর্ণবয়স্ক মশা পাওয়া গেছে। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় এডিসের লার্ভার বিস্তার ঘটছে। সাধারণত ডেঙ্গুর পিক টাইম হচ্ছে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর। অথচ চলতি বছরের গত ২ মাসে বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সিটি করপোরেশনকে আরও বেশি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি নাগরিকদেরকেও সচেতন থাকতে হবে।এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তৎপর রয়েছে উল্লেখ করে করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে পাওয়া এ পর্যন্ত ১৬৫ জন ডেঙ্গু রোগীর বাসস্থানসহ আশেপাশের এলাকায় মশক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে ডিএসসিসি। এডিস মশার লার্ভার উৎসস্থল অপসারণের লক্ষ্যে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ৯ই জুলাই থেকে অঞ্চলভিত্তিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত এডিস মশার লার্ভা শনাক্তে ১,৯১৪টি ভবন/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৮৫টিতে লার্ভা শনাক্ত করা হয়েছে। ১৮৫টি মামলায় ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পানি জমে এমন পরিত্যক্ত বর্জ্য অপসারণসহ বিভিন্ন নর্দমা, খাল, জলাশয় নিয়মিতভাবে সংস্কার ও পরিষ্কারকরণ করা হচ্ছে। রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রতি ওয়ার্ডে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইডিং এবং দুপুর ২টা ৩০মি. থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রম আরও নিবিড়করণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এডিস মশার লার্ভার সম্ভাব্য উৎসস্থল অপসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন আবাসন সমিতি, সরকারি/ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে উৎসস্থল নির্মূলের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে নিয়মিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগী শনাক্তে অত্র করপোরেশনের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অ্যাডাল্টিসাইড হিসেবে বর্তমানে ম্যালাথিয়ন ব্যবহার শুরু করা হয়েছে।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান আছে। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় আমরা চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। যেসব স্থানে এডিসের লার্ভা মিলছে, সেসব আমরা ধ্বংস করেছি। যাদের অবহেলায় লার্ভার উৎপত্তি হচ্ছে তাদেরও জরিমানা করা হয়েছে। গত বছর যেসব বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে এপ্রিল থেকে তাদের মোবাইল ফোনে বার্তা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি, আধা সরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এদিকে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় করণীয় ঠিক করতে ঢাকা দুই সিটি করেপোরেশনের মেয়র এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ডাকা জরুরি এক সভায় গতকাল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, এডিসসহ অন্যান্য মশার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে যে এলাকায় অর্থাৎ যে বাসাবাড়িতে রোগী পাওয়া যাবে হাসপাতাল থেকে সেই ব্যক্তির নাম-ঠিকানা নিয়ে তার বাসাসহ ঐ অঞ্চল চিহ্নিত করে বিশেষ চিরুনি অভিযান চালানো হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে সব অঞ্চলকে এডিস মশার হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অর্থাৎ যে অঞ্চল থেকে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে সেসব এলাকায় আজ থেকে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চ্যুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে গতকাল অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম করোনা মহামারিকালে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে জনগণকে অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার অ্যান্টিজেন কিটের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষাটি বিনামূল্যে করার সুযোগ রয়েছে। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে বিলম্ব না করে সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার অনুরোধ জানান তিনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত