কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

শতাব্দী পেরিয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল এক বিদ্যাপীঠ

মানবজমিন প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২১, ০০:০০

অঙ্কের হিসাবে শতক পার। দীর্ঘ এ সময়ে এসে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিতে ঢের ফারাক। তবুও নিজস্ব আলোয় আলোকিত। নির্ভর করতে হয়নি কারও ওপর। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বময় উদ্ভাসিত। নিজস্ব গৌরব ও ঐতিহ্যে এখনো গৌরবান্বিত। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি রয়েছে বিশ্ব দরবারে। দীর্ঘ পথচলায় সমালোচনার সঙ্গে অর্জনও রয়েছে অনেক। দেশ মাতৃকাকে দায়ী করে রেখেছে জন্মলগ্ন থেকেই। পৃথিবীর মানচিত্রে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সবুজ শ্যামল ভূখণ্ডটির জন্মের  পেছনেও একক নেতৃত্ব তার। বিশাল এ বসুন্ধরায় এমন প্রতিষ্ঠান আর খুঁজে পাওয়া যায় না, যেটি একটি জাতির ভাষার অধিকার থেকে শুরু করে স্বাধীনতা এনে দেয়া পর্যন্ত সব জায়গায় ছিল নেতৃত্বের অগ্রভাগে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পরেও যখনই হুমকিতে পড়েছে লাল সবুজের পতাকা তখনই ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রাচ্যের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত দেশের ষোলো কোটি মানুষের স্বপ্নের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এখন। আজ ১লা জুলাই। শততম প্রতিষ্ঠাার্ষিকী দেশসেরা বিদ্যাপীঠটির। বঙ্গভঙ্গ রদের পর পূর্ব বাংলার পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন ঢাকার নবাব পরিবার। বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন তৎকালীন পূর্ব বাংলার জমিদার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নির্দেশে ১৯১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে নাথান কমিটি গঠন করা হয়। সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৯২১ সালের ১লা জুলাই ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ৬০০ একর জমি নিয়ে মনোরম পরিবেশে বিশাল তরুছায়া সুনিবিড় পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। যদিও এখন কমতে কমতে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৬০ একরে। বৃটিশরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে এর পঠন-পাঠন ও শিক্ষাদান কার্যক্রম পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন বলেই এটিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। এরপর থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার খ্যাতিতে এই উপমহাদেশের একটি শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাদান, বিদ্যাচর্চা, শিক্ষকদের গবেষণা ও পাণ্ডিত্যের খ্যাতি শুধু এ উপমহাদেশে নয়, অর্জনের প্রভাব পড়ে পূর্ব বাংলা পেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকাসহ নানা দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। অন্যদিকে এর আবাসিক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল উপমহাদেশের প্রাচীনতম এবং তৎকালীন শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে। উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন, পাঠ নেবেন ও জ্ঞানার্জনের নানা প্রয়োজনে লাইব্রেরিসহ শিক্ষকের সাহচর্য লাভ করবেন। এদিকে জাতীয় জীবনে এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের অর্জন অনেক হলেও বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ায় এর একাডেমিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বেশ কয়েক বছর ধরে। দেশীয় অঙ্গনে শ্রেষ্ঠত্বের আসন ধরে রাখতে পারলেও বিশ্বমঞ্চে বছরকে বছর পিছিয়ে পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তার জন্য সমালোচনাও কম হচ্ছে না। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবারই বলে থাকেন সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে গবেষণায় পিছিয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ শতবর্ষে এসেও গবেষণায় বরাদ্দ বাজেটের মাত্র ১.৩৭ শতাংশ।প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মাত্র ৩টি অনুষদ আর ১২টি বিভাগ, ৬০ শিক্ষক আর ৮৭৭ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১১টি ইনস্টিটিউট, ১৯টি আবাসিক হল ও ৪টি হোস্টেল, ৫১টি গবেষণা কেন্দ্র ও ব্যুরো, শতাধিক অধিভুক্ত কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী ও ১ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষক রয়েছেন। এদিকে বর্ণিলভাবে শতবর্ষ উদ্‌যাপনের লক্ষ্য থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে তা এখনই হচ্ছে না। শিক্ষার্থী ছাড়া এক মলিন শতবর্ষ উদ্‌যাপন করতে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। বন্ধ ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা করা হলেও যেন কাঁদছে আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনগুলো। সরজমিন ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সব ভবন বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে। তবুও শিক্ষার্থী ছাড়া প্রাণহীন এক ক্যাম্পাস, যেন মহামারির দ্রুত বিদায়ে হাত তুলেছে স্রষ্টার কাছে। দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সশরীরে কোনো অনুষ্ঠান না হলেও অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হবে। ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আজ বিকাল ৪টায় ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল বক্তা হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন ভাষাসৈনিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শীর্ষক মূল বক্তব্য প্রদান করবেন। ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা ফেসবুকে (যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ওঈঞঈবষষউট) সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শতবর্ষপূর্তির মূল অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আগামী ১লা নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ।ভিসির শুভেচ্ছা জ্ঞাপনদিবসটি উপলক্ষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীসহ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে এক বাণী প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের গৌরবগাঁথা নিয়ে শতবর্ষ পাড়ি দিয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোভিড-১৯ আক্রান্ত পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আমরা এগিয়ে চলছি। শিক্ষার গুণগত মান ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্র জোরদার করার জন্য ‘ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া’ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সকলের সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। মহান এ বিদ্যাপীঠের স্বনামধন্য সাবেক শিক্ষার্থী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ (মুজিব বর্ষ), মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্‌্‌যাপনের বিরল সৌভাগ্য-প্রাপ্তির ক্ষণে আমরা দেশের শিক্ষা ও গবেষণার মানকে আরও উন্নত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। বিশ্ববিধ্বংসী কোভিড-১৯ ভাইরাসের তীব্রতর সংক্রমণের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা এগিয়ে যাবো এবং কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করবো, ইনশাআল্লাহ। ভিসি আরও বলেন, জীবন বাস্তবতার অভিঘাত অগ্রাহ্য করার শক্তি কারোই নেই। চলমান করোনাভাইরাসের এই মহামারি পরিস্থিতি থেকে শিগগিরই উত্তরণ সম্ভব হবে এবং শিক্ষার্থীদের পদচারণায় শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, সর্বোপরি ক্যাম্পাস আগের ন্যায় প্রাণবন্ত ও মুখরিত হবে- মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট সে প্রার্থনা করি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা খুবই জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে প্রিয় মাতৃভূমি ও গণমানুষের প্রতি আমাদের অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, চির গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধসহ গণমানুষের সকল লড়াইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা নেতৃত্ব দিয়েছে। জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং দেশসেবায় রেখেছে অনন্য অবদান। দেশের প্রতি আমাদের মমত্ববোধ ও চিরকৃতজ্ঞ চিত্তই এগিয়ে চলার পাথেয়। ইনশাআল্লাহ, আমরা এগিয়ে যাবোই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত