কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রধানমন্ত্রীকে সাতকড়ার তরকারির দাওয়াত বীরাঙ্গনা শিলা গুহের

মানবজমিন প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২১, ০০:০০

মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে ঘর প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেয়ার সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এ উপহার দিলেন। এর আগে গত জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে গতকাল আরও ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী। রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের ৪৫৯টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষকে ঘর দেয়ার এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জমির দলিল ও ঘরের চাবি উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেন। দলিলে জমির মালিকানা স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেয়া হয়েছে। তাদের নামে স্থায়ী দলিলের পাশাপাশি নামজারি করে খাজনা দাখিলাও দেয়া হয়েছে।  সেমিপাকা ঘরে আছে দুটি রুম, একটি বড় বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। পাশাপাশি সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও আছে। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যালয়, খেলার মাঠ এবং মসজিদসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ও রয়েছে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘর পাবার অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ পেয়ে বীরাঙ্গনা শিলা গুহ প্রধানমন্ত্রীকে সাতকড়া রান্না করে খাওয়াতে চান। প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত গ্রহণ করে বলেন, সুযোগ পেলে যাবো। মুজিববর্ষে দেশের সকল গৃহহীনকে ঘর করে দেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ ঘর পাবে। একটি মানুষও আর ঠিকানাবিহীন থাকবে না। জাতির পিতা এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ একটা ঘর যখন পায়, তার মধ্যে যে আনন্দ, তার মুখে যে হাসি, এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু নয়। আমি মনে করি, আমার জন্য এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না। ক্ষমতা মানে ভোগ বিলাস নয়। ক্ষমতা হলো মানুষের সেবা করা। মানুষের জন্য কাজ করা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের জন্যই মানুষ। মানুষের জন্য, তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারাটাই সব থেকে বড় কথা। বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ’-সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে ঘর-বাড়ি করে দেয়া এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়ার মাধ্যমে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়েই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘর-বাড়ি নির্মাণে আমরা প্রশাসনের ওপর সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী-যাদেরকেই দায়িত্ব দিয়েছি তারা অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে সেই কাজগুলো করেছেন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ছিন্নমূল মানুষকে একটা ঠিকানা করে দেয়ার মাধ্যমে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে দেয়ার এই প্রকল্পকে কেবল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমেই নয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়েই সচিব এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা সহ বেসরকারি খাতেও অনেকে এগিয়ে এসে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সবার ভেতরে এই চেতনা জেগেছে যে, ছিন্নমূল মানুষ যারা বস্তিতে, ফুটপাথে, রেললাইনের ধারে ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছে সে যখন একটা আশ্রয় পায় তখন তার জীবনটাই বদলে যায়। তিনি এ সময় কোভিড-১৯ সহসাই যাচ্ছে না, উল্লেখ করে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। যাতে এই ভাইরাস একজনের কাছ থেকে অপরজনকে সংক্রমিত করতে না পারে। পাশাপাশি তিনি সরকারের টিকা দান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার এবং আরও জোরেশোরে শুরু করার কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথাও কেউ গৃহহীন থাকলে আমাদের জানাবেন। আমরা তাদের বাড়ি করে দেব। আমি মনে করি- এতটুকু করতে পারলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মা শান্তি পাবে। মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে আশ্রয়ণের মধ্য দিয়ে গত ছয় মাসে মোট এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি পরিবারকে ভূমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ৪টি উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪৩৬টি ঘর রংপুর বিভাগে প্রদান করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১০ হাজার ৫৪৭টি ঘর, রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ৬৩০টি ঘর, রাজশাহীতে ৭ হাজার ১৭২টি, ৩৭ হাজার ১৫৩টি বরিশালে, ৯১১টি খুলনায়, ২ হাজার ৫১২টি ময়মনসিংহে এবং ১ হাজার ৯৭৯টি ঘর সিলেট বিভাগে প্রদান করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকানুযায়ী দেশে ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি (ক-শ্রেণি)। আর শুধুমাত্র গৃহহীন পরিবার হচ্ছে ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি (খ-শ্রেণি)। গতকাল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রামের সদর, শেরপুরের ঝিনাইগাতী, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও সুবিধাভোগীরা সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া দেশের আরও ৪৫৫টি উপজেলা প্রশাসন ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। তিনি অনুষ্ঠানে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ শীর্ষক একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।সুযোগ পেলে শ্রীমঙ্গল যাবেন প্রধানমন্ত্রীএম ইদ্রিস আলী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে জানান, খোলা আকাশের নিচে যার দিন কাটতো সেই বৃদ্ধা শ্রীমঙ্গলের বীরাঙ্গনা শিলা গুহ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর পেয়ে আনন্দ অশ্রুতে ভাসছেন। নিজের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীকে সাতকড়া রান্না করে খাওয়াতে চাইলেন তিনি। ঘর পাওয়া বীরাঙ্গনা এই বৃদ্ধার আনন্দ অশ্রুতে আবেগ আপ্লুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ ঘর দেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ?‘করোনার কারণে আমি যেহেতু যেতে পারিনি। আমার পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ডিসি এবং ইউএনও জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেবেন।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় প্রান্ত থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে সরাসরি যুক্ত হন তিনি। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী উপকারভোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সঞ্চালক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম এ সময় উপকারভোগীদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা শীলা গুহকে কথা বলার আহ্বান জানান। এরপর বীরাঙ্গনা শীলা গুহ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তার জীবনের করুণ কাহিনী তুলে ধরে বলেন, ঘর পাওয়ার আগে পথের ভিখারি ছিলাম। রেল স্টেশনে ঘুমাতে হতো। পথের ভিখারি থেকে এখন আমি লাখপতি হয়েছি। এ সময় আবেগপ্রবণ হওয়া প্রধানমন্ত্রীকে চোখ মুছতে দেখা যায়। শীলা গুহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে পাওয়া বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীকে সিলেটের ঐতিহ্য ‘সাতকড়া’ তরকারির খাবার গ্রহণের নিমন্ত্রণ জানালে প্রধানমন্ত্রী সময় ও সুযোগ পেলে নিমন্ত্রণ রক্ষার প্রতিশ্রুতির কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বীরাঙ্গনা শীলা গুহ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার একটা দাবি, আমায় যে ঘর দিয়েছেন সেই ঘরে একবার আসবেন। আমি আপনাকে সাতকড়া দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়াবো। এই বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি, ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা মার্জনা করবেন। শিলা গুহের কান্নায় আবেগ আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। কথা বলা শেষে চশমা খুলে চোখ মুছতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আপনি খুব ভালো বক্তব্য রাখছিলেন, আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন। আমি যদি সুযোগ পাই নিশ্চয়ই আসার চেষ্টা করবো। আপনাদের যে অবদান, আপনাদের যে আত্মত্যাগ- এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। আত্মত্যাগ কিন্তু বৃথা যায় না। আপনারা যারা ঘর পেয়েছেন সবাই ভালো থাকেন এই কামনা করি।অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের এমপি সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজবাহুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান কালাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজুলসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত