কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তাৎপর্যপূর্ণ ঢাকা সফর

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই ঢাকায় তাৎপর্যপূর্ণ সফর করে গেলেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি। গত বছরের নভেম্বরের শেষে তার ঢাকা সফরের কথা থাকলে তখন ওই সফরটি বাতিল হয়ে যায়। গতকাল সকালে একদিনের সফরে এসে তিনি প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাতেই তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। তার সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। সফরকালে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বঙ্গবভন এবং আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল সকালে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকায় আসার পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। এ সময় তিনি স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং সেখানে রাখা শোক বইয়ে সই করেন। পরে বিকালে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সাক্ষাতে করোনার ভ্যাকসিন সম্পর্কে গবেষণা ও উৎপাদনে চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গভবন প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ সাক্ষাতের কথা জানায়। করোনা মহামারি মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের উপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। করোনার ভ্যাকসিন সম্পর্কে গবেষণা ও উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ নিতেও আগ্রহী বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সার্বিক সহযোগিতা করতে আগ্রহী চীন।চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কৌশলগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে চীন। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও চীন কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতার প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার চীন। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে সমপ্রসারিত হচ্ছে। অবকাঠামো ও যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রেসিডেন্ট বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খুবই ভালো। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন চীন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে আগামী দিনে এ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভিডিও বার্তার জন্য প্রেসিডেন্ট তার নিজ ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট চায়না কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছর পূর্তিতে চীনের প্রেসিডেন্ট ও জনগণকে অভিনন্দন জানান। এ সময় অন্যদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও লে. জে. ওয়াকার উজ জামান, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।পরে বিকালে জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তারা পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক বজায় ও ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন, সামরিক প্রশিক্ষণ বিনিময়, সশস্ত্র বাহিনী পর্যায়ে নিয়মিত মতবিনিময় অব্যাহত রাখা প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা চীনের সহযোগিতার বিষয়ে ধন্যবাদ প্রদান করেন। আলোচনাকালে সেনাপ্রধান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির আলোকে ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সদা বদ্ধ পরিকর বলে উল্লেখ করেন। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পূর্বক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকীতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ-চীনের সুসম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এ সম্পর্ককে আরো উচ্চতর স্তরে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের ভিশন-২০৪১ অর্জনে চীনের সহযোগিতার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এছাড়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্ব আরোপ করেন। চলমান কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে চীনের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহায়তার প্রস্তাব করেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেন। তিনি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবর্তন কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি এর নেতৃত্বে চীনা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি দলটি সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ঢাকা সেনানিবাসস্থ শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদত বরণকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেনাসদরে সাক্ষাৎকালে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি), চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও-এএফডি), সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অফ অর্ডন্যান্স (এমজিও) সহ অন্যান্য জেনারেলগণ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত