কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

খরায় স্বপ্নভঙ্গ তরমুজ চাষিদের

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

অনাবৃষ্টির সাথে আকাশ থেকে ঝরছে খরতার তাপ। খরতায় পুড়ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার শ্যামনগর। দুর্যোগ প্রবণ এ অঞ্চলের মানুষের বৃষ্টিহীন খরতা প্রভাব ফেলেছে তরমুজের উপর। সুন্দরবন ও সীমান্ত ঘেষাঁ শ্যামনগর উপজেলায় উৎপাদিত রসালো ফল তরমুজের সুনাম উপজেলা ও জেলার বাইরেও রয়েছে। উপজেলার ধুমঘাট গ্রাম ও কৈখালীতে উৎপাদিত তরমুজের স্বাদ সকলের অজানা নয়। বাজারে ক্রেতাদের মুখে শোনা যায়, ধুমঘাট ও কৈখালীর তরমুজের গুণকীর্তনের কথা। সুস্বাদু রসালো ফল তরমুজ এবার খরায় স্বাদ ও সাইজে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। খরার কারণে তরমুজ চাষিদের এবার উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা এ নিয়ে চিন্তায় আছেন।উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: আলী হাসান জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নে। এছাড়া ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধূমঘাট, কাশিমাড়ী, মুন্সিগঞ্জ তরমুজ চাষ হয়ে থাকে। কৈখালী ইউনিয়নের বোশখালী, পশ্চিম কৈখালী বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে এবার। তরমুজ চাষি কৈখালী ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন বলেন, তিনি নিজে ১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর প্রচন্ড খরার কারণে তরমুজের সাইজ ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং তরমুজ নিচের দিকে বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তরমুজ চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, খরার কারণে তরমুজে ভাইরাস লেগেছে। এরফলে তরমুজের ভিতরে গাড় লাল রং হচ্ছে না এবং মিষ্টি কমে যাচ্ছে।উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোদাচ্ছের বিল্যাহ বলেন, উপজেলায় গতবার তরমুজ চাষ হয়ে ছিল মাত্র ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন ছিল ৩০ টন। গতবার চাষিরা ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার তিনগুণ জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। বর্তমানে তরমুজ প্রতি কেজি বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে।উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জিয়াউল হক জিয়া বলেন, অন্যান্য বছর শ্যামনগরে বৃষ্টির কারণে তরমুজের ওজন ছিল ১০ থেকে ১২ কেজি। এবার বৃষ্টির অভাবে তরমুজের ওজন হয়েছে ৪ থেকে ৫ কেজি। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার তরমুজ বড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই, শুকিয়ে যাচ্ছে তরমুজ ক্ষেত। উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, প্রকৃতি নির্ভর বৃষ্টির উপর ভরসা করে উপজেলার সদর, কৈখালী, কাশিমাড়ী, মুন্সিগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকায় চাষিরা শতশত বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। কিন্তু শ্যামনগরে ভূগর্ভস্থ পানি না পাওয়ায় চাষিরা নিজস্ব পুকুর বা জলাশয়ের পানির উপর নির্ভর করে তরমুজ সহ অন্যান্য ফসল চাষ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে সেটিও শেষ হওয়ায় এখন চাষিদের অপেক্ষা এক পশলা বৃষ্টি। তিনি বিভিন্ন এলাকায় ফসল চাষের সুবিধার্তে মিষ্টি পানি সংরক্ষণার্তে যথাযথ কতৃপক্ষের নিকট পুকুর খননের দাবী জানান।উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম এনামুল ইসলাম বলেন, পানি সংকটের কারণে শ্যামনগরে তরমুজের সাইজ ছোট হচ্ছে, বাঁকা হচ্ছে। আবার কোথাও পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন সরজমিনে কয়েকটি তরমুজ চাষির ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তরমুজ ফসলের ক্ষেতে পানি সংকটের অভাব মেটাতে সন্ধ্যার পর পানি স্প্রে করতে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান। এছাড়া পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন চাষিদের।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বৃষ্টির পানিতে ভিটামিন বিশেষ করে নাইট্রোজেন থাকে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার তরমুজ ফসল কাক্সিক্ষত উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা যায়, উপজেলায় উচ্চ ফলন জাত ভারতের ভিফটপ, ড্রাগন, পাকিজা, বাংলালিংকসহ অন্যান্য জাতের তরমুজ চাষ হয়ে থাকে।শ্যামনগরে তরমুজ চাষিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনকারীরা জানান, ফসলের ক্ষেতে একটু বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে উৎপাদিত ফসলের মাত্রা বেড়ে যেতো। সাথে সাথে তরমুজের স্বাদও বেড়ে যেতো। সব মিলিয়ে সকল প্রকার চাষিদের অপেক্ষা বৃষ্টির।উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম এনামুল ইসলাম ও চাষিরা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউপির খালগুলিতে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা হলে কৃষি ফসল উৎপাদনে এক অনন্য ভূমিকা রাখবে। সাথে সাথে উৎপাদিত খাদ্যে উপজেলার মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে মন্তব্য করেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত