কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

অনলাইনে কড়াকড়ি, বাংলাদেশের পদাঙ্ক অনুসরণ ভারতের

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ মার্চ ২০২১, ০০:০০

বাংলাদেশি লেখক মুশতাক আহমেদ জানতেন তিনি ঝুঁঁকি নিচ্ছেন। তার সরকারের কোভিড-১৯ মোকাবিলার কৌশলকে আক্রমণ করে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তেলাপোকার সঙ্গে তুলনা করে যেমনটা মুশতাক নিজের ফেসবুক পোস্টে করেছেন তিনি যেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকার ২০১৮ সালে এই আইন পাস করে। “বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা” ও “দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা”র মতো অস্পষ্ট সব অপরাধকে সাজার আওতায় এনেছে এই আইন। গত এক বছরেই এই আইনের অধীনে প্রায় ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুশতাক ছিলেন এদেরই একজন। কিন্তু তারপরও ৫৪ বছর বয়সী এই লেখক নিশ্চয়ই ভাবেননি যে তাকে বিচার ছাড়াই নয় মাস জেলে কাটাতে হবে; ছয় বার জামিনের আবেদন নাকচ হবে; আর শেষ পর্যন্ত কারা হাসপাতালেই মারা যেতে হবে। “ওয়েব অব রেগুলেশন” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এমনটাই লিখেছে বৃটেনের প্রখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিস্ট। এতে বলা হয়, ২৫শে ফেব্রুয়ারি মারা যান মুশতাক। ঠিকই ওইদিন প্রতিবেশী ভারতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও স্ট্রিমিং ও ডিজিটাল প্রকাশনার জন্য নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করেছে সরকার। ভারতীয় সাংবাদিকতা নিয়ে গর্বের কথা উল্লেখ করে “হালকা তদারকি”র কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। দৃশ্যত, সরকারি গেজেটে বলা হয়েছে, সরকার ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট, ২০০০-এর কিছু ধারা অনুসরণ করে এই গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ, অত্যধিক সাজাসমেত কোনো মধ্যযুগীয় আইন হবে না এই গাইডলাইন। কিন্তু ভারতের এই গাইডলাইনে কঠোর সাজার বিধান ও অতিবিস্তৃত আওতার বিষয়টি আড়াল রাখা হয়েছে। এতে টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের মতো সামাজিক মিডিয়া বা মেসেজিং সার্ভিসকে তাদের ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা কনটেন্টের অধিকতর দায় দেয়া হয়েছে। সংবাদ ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে নেটফ্লিক্সের মতো অনলাইন কনটেন্ট প্রকাশকরা এতদিন ধরে তুলনামূলক যেই স্বাধীনতা ভোগ করতেন, তা-ও ব্যাপকভাবে হ্রাস করা হয়েছে। জানুয়ারিতে টুইটার এই নিয়ম অনুসরণ করে সবার প্রথমে। তবে এরপরই টুইটার সরকারের দাবি অনুযায়ী প্রায় ১ হাজার অ্যাকাউন্ট স্থগিত করতে অস্বীকৃতি জানায়। এই সহস্রাধিক টুইটার অ্যাকাউন্টের বেশির ভাগই ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সরকারবিরোধী কৃষক গণআন্দোলনের সমর্থক।নতুন নিয়ম অনুসারে সরকারের অনুরোধ পাওয়া মাত্রই সকল সামাজিক মিডিয়া ও অনলাইন প্রকাশকরা কনটেন্ট সরিয়ে নিতে বাধ্য হবে; কোনো পোস্টের উৎস প্রকাশ করতে বাধ্য হবে। আর তা করতে গেলে কিছু মেসেজিং বা চ্যাট সেবাদাতা অ্যাপকে গ্রাহকের এনক্রিপশন সুবিধাও প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি অত্যন্ত জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করে জন অসন্তোষের অভিযোগ সুরাহার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের আইনের সঙ্গে মিল রেখে, এখন ভারত সরকারও তাদের দৃষ্টিতে ভারতীয় আইন লঙ্ঘনকারী, কিংবা জাতীয় স্বার্থবিরোধী বা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টিকারী বিষয়বস্তু সরানোর অনুরোধ জানাতে পারবে।এই নির্দেশনায় স্বেচ্ছা-নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। তবে এই উদ্দেশ্যে গঠিত সংস্থার সদস্য কারা হবেন, তার অনুমোদনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আমলাদের। আর কোনো সংস্থার নেয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত সরকারি প্যানেল বাতিল করতে পারবে। এই প্যানেলই রায় দেবে যে জনগণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো সংবাদ মাধ্যমের নেয়া পদক্ষেপ পর্যাপ্ত হয়েছে কিনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সমর্থকরা অনলাইনে প্রায়ই তার সমালোচকদের নিয়ে ভয়াবহ ট্রল করেন। এ কারণে অনেক সংবাদ মাধ্যম আশঙ্কা করছে যে, তারা হয়তো কোনো ইস্যুতে অসংখ্য অভিযোগ পাবেন; আর সেগুলোর প্রত্যুত্তর দিতে দেরি হওয়ার দায়ে সাজার মুখোমুখি হবেন। এ ছাড়া ইন্টারনেট নজরদারিতে পুলিশকে সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেয়ার যেই উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তার কারণে এই ধরনের অভিযোগের সংখ্যা আরো বাড়বে।অনেকেই যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, এই নতুন গাইডলাইন মানুষের বাকস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকে লঙ্ঘন করে। এগুলোর আওতাও অনেক বিস্তৃত ও অস্পষ্ট। যেমন, ছাপা পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের মতো প্রিন্ট প্রকাশনাগুলোর মধ্যে যাদের অনলাইন সংস্করণ রয়েছে, তারাও এই নিয়মের আওতায় পড়বে কিনা তা স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া বিদেশি মিডিয়া বা সংবাদ সংস্থার ক্ষেত্রে এই নিয়ম কীভাবে প্রযোজ্য হবে। এ নিয়ে যে আইনি চ্যালেঞ্জ আসবে, তা অনিবার্য।সামাজিক মিডিয়াগুলো চিন্তিত যে, এনক্রিপশন ভঙ্গের মাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হলে অনেক গ্রাহক তাদের সেবা আর নেবেন না। ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের ৫৩ কোটি গ্রাহক রয়েছে। জানুয়ারিতে হোয়াটসঅ্যাপ জানায় যে, গ্রাহকদের কিছু তথ্য এখন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মূল কোম্পানি ফেসবুককে সরবরাহ করা হবে। আর এরপরই এত মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করেন যে মেসেজিং কোম্পানি ওই পরিবর্তন স্থগিত করে দেয়। মোদির সবচেয়ে কঠোর সমালোচকদের কয়েকটি হলো ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যমগুলো। তারাও চিন্তিত যে, এই সরকার এমনিতেই বেশির ভাগ মিডিয়াকে দমিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে; আর এখন প্রায় অসম্ভব এক নিয়ম অনুসরণের বাধ্যবাধকতা দিয়ে তাদেরও ভারাক্রান্ত করে ফেলা হবে।অপরদিকে, সরকারের যুক্তি ইন্টারনেটের কিছুটা স্বেচ্ছা-নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী থাকতে হবে; কোডস অব কনডাক্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রীয় তদারকিও থাকতে হবে, যা অন্যান্য টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া বা চলচ্চিত্র শিল্পে ইতিমধ্যেই আছে। ডিজিটাল অধিকার নিয়ে সোচ্চার নিখিল পাহওয়া মনে করেন, বড় বড় বিদেশি প্রতিষ্ঠান যদি ভারত থেকে চলেও যায়, তারপরও এই গাইডলাইন নিয়ে সরকারের পিছু হটার সম্ভাবনা কম, যদি না আদালত হস্তক্ষেপ করে। তিনি আরো বলেন, গত বছর সরকার যখন কয়েক ডজন চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে, ভারতীয় উদ্যোক্তারা সেই সিদ্ধান্ত সাদরে মেনে নিয়েছিলেন। টুইটারের সঙ্গে বিরোধের সময় মোদির অনেক সমর্থক টুইটার বাদ দিয়ে স্বল্প-পরিচিত ভারতীয় একটি ওয়েবসাইটে যোগ দেন।শেষ পর্যন্ত সরকার এ নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হলেও, অনলাইনের ওপর সরকারের জোরজবরদস্তি কমবে না। ফেব্রুয়ারিতে প্রবীর পুরকায়স্থের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তিনি নিউজক্লিক নামে একটি অনলাইন মিডিয়ার মালিক ও সম্পাদক। এই ওয়েবসাইটটি প্রায়ই মোদির তীব্র সমালোচনা করে। প্রায় সাড়ে ৪ দিন পুরকায়স্থ অনেকটা গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন। আর তখন তার বাড়িঘর তন্নতন্ন করে তল্লাশি করা হয়। ৩রা মার্চ আয়কর কর্তৃপক্ষ কয়েকজন বলিউড ব্যক্তিত্বের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। বলিউডে সাধারণত ক্ষমতাধরকে তোয়াজ করে চলে। কিন্তু ওই বলিউড ব্যক্তিত্বরা মোদির সমালোচনা করেছিলেন অনলাইনে। এদের একজন ছিলেন তাপসি পান্নু। এই অভিনেত্রীর অপরাধ সম্ভবত এই যে, তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, “একটি টুইটের কারণে যদি আপনার ঐক্য তছনছ হয়ে যায়, একটি কৌতুকের কারণে যদি আপনার বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে ওঠে, একটি অনুষ্ঠানের কারণে যদি আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস আহত হয়, তাহলে সমস্যাটা বরং আপনারই; আপনাকেই নিজের মূল্যবোধ সংহত করার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।”

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত