কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ঢাকায় জয়শঙ্করের ১০ ঘণ্টা

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০২১, ০০:০০

ঢাকায় প্রায় ১০ ঘণ্টার ব্যস্ত সফর শেষে ফিরে গেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। গতকাল সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশে আসা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। রাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভোজ বৈঠক এবং তারও আগে ঢাকায় ভারতের নতুন কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন করেন তিনি। তার এই ঝটিকা সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে সমন্বিত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার বিষয়ে আলোচনা। একই সঙ্গে আগামী ২৬ ও ২৭শে মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবিত ঢাকা সফরের আলোচ্যসূচি চূড়ান্তকরণ। তবে আলোচনায় এসেছে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোও। বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর সীমান্তহত্যা নিয়েও কথা বলে গেছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে প্রায় দেড় বছর পর ঢাকায় আসা ড. এস জয়শঙ্কর গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সীমান্তহত্যার জন্য ওই এলাকায় সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে দায়ী করেন। তবে সীমান্তে একটি হত্যার ঘটনা ঘটলেও সেটিকে দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, সীমান্তে যাতে অপরাধ না ঘটে, হত্যার ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটাই দুই দেশের অভিষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত। দুই দেশের নিবিড় সম্পর্ক থাকার পরও কেন সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ভারতের অভ্যন্তরে ঘটে থাকে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা একমত হয়েছি যে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই দুঃখজনক। কিন্তু আমরা নিজেদের প্রশ্ন করেছি, সমস্যার মূল কারণ কী এবং এটি হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সুতরাং আমাদের উভয়ের অভিন্ন চাওয়া হওয়া উচিত নো ক্রাইম, নো ডেথ অর্থাৎ অপরাধ নয়, মৃত্যুও নয়। অপরাধহীন এবং মৃত্যুহীন সীমান্তের ক্ষেত্রে এ নীতি মেনে চলার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত আমরা যদি এটা করতে পারি, অপরাধহীন ও মৃত্যুহীন সীমান্ত, তাহলে একসঙ্গে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন আসে ৬ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কাজ করছে ভারত ও বাংলাদেশ। কিন্তু তিস্তা’র পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা গেছে কি? তিস্তা চুক্তির সময়সীমা বিষয়ক ওই প্রশ্নে অত্যন্ত কৌশলী জবাব দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। খুব শিগগির আমাদের সচিবরা বৈঠকে বসবেন। আমি নিশ্চিত, তারা এ নিয়ে পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে নেবেন। আমি মনে করি, আপনারা এক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থান জানেন, যাতে কোনো পরিবর্তন এখনও আসেনি। প্রসঙ্গত, তিস্তার পানি নিয়ে ভারতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মতি না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে পারছে না। প্রায় ১১ বছর ধরে প্রস্তাবিত চুক্তিটি ঝুলে আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর চূড়ান্ত করতে গতকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছেন জয়শঙ্কর। বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উষ্ণ অভ্যর্থনা থেকে তারা রমনাস্থ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন তারা। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেই। এটি সম্পর্ককে নতুন মাত্রা ও গতি দেয়। কিন্তু সার্বিক সম্পর্কের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা নিয়ে আমরা বর্তমানে কাজ করছি না। আমাদের সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে ৩৬০ ডিগ্রি। মানুষের সম্পর্কের সব ক্ষেত্রে আমরা কিছু না কিছু করছি। যতোই কাজ করছি, ততোই নতুন নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হচ্ছে। পঞ্চাশ বছরের সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় যোগাযোগকে ‘বড় পরিসরে গুরুত্ব দেয়া দরকার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, কানেক্টিভিটির এই জায়গাকে আমরা বড় লক্ষ্য হিসাবে ধরে এগোতে পারি। তার মতে, ভারত ও বাংলাদেশ যদি কানেক্টিভিটির জায়গায় ঠিকমতো কাজ করতে পারে তাহলে পুরো অঞ্চলই বদলে যাবে; বঙ্গোপসাগরীয় এলাকাকে তখন অন্যরকম মনে হবে। তার ভাষ্যটি ছিল এমন- আমরা উভয় দেশ মনে করি এটা সম্ভব। আজকের দিনে আমাদের আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল এটা। আমরা চাইলে এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশকেও একীভূত করতে পারি। যেমন জাপান, যাদের সঙ্গে আমাদের উভয় দেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় জাপান অনেক কানেক্টিভিটি প্রকল্পে যুক্ত। এর আগে লিখিত বক্তব্যে জয়শঙ্কর বলেন, আমাদের সম্পর্ক গৎবাঁধা অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের বন্ধন শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দু। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উভয় পক্ষই এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, বিশেষত ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই সম্পর্ক ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির প্রাসঙ্গিকতার মধ্যেই নিহীত বলে মন্তব্য করেন তিনি। জয়শঙ্কর বলেন, আমরা বাংলাদেশকে কেবল দক্ষিণ এশিয়াই নয়, বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও একটি মূল প্রতিবেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। আমাদের সম্পর্কের প্রতিটি অর্জন সমগ্র অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। সবাই জানেন যে, আমরা অন্যদের কাছে এই সম্পর্ককে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে উদ্ধৃত করি। এ কারণেই নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহন ও সংযোগ, সংস্কৃতি, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক থেকে শুরু করে জ্বালানি ও অভিন্ন সম্পদ এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কের যৌথ বিকাশসহ সব ধরনের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণে কাজ চলছে বলে জানান তিনি। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক কার্যক্রমগুলো ‘সাধারণ পরামর্শ এবং প্রস্তাবের ঊর্ধ্বে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এসব কাজে মাঠ পর্যায়েও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি উদাহরণ হলো- চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আগরতলায় পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা, ত্রিপুরাকে আপনাদের জাতীয় নৌপথে সংযুক্ত করার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথে দু’টি নতুন প্রোটোকল রুট যুক্ত করা, ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর, কন্টেইনার ও পার্সেল ট্রেন চলাচল শুরু এবং জ্বালানি খাতে একটি যৌথ উদ্যোগ গঠন। প্রত্যেকের অগ্রাধিকারকে পরস্পরের জন্য কীভাবে লাভজনক করা যায়, তার ওপর ভিত্তি করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। বলেন, এই মাসের শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর আমাদের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। আমরা আনন্দিত, তিনি মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তির আয়োজনে অংশ নেবেন। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সফরটি খুবই স্মরণীয় হবে, কারণ এটি করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পরে ভারতের বাইরে তার প্রথম এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সফর। জয়শঙ্কর বলেন, চলতি বছরটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ উভয় দেশ মুজিববর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালন করছে। ৩টি বার্ষিকীর প্রতি দিল্লি যথাযথ গুরুত্বারোপ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের প্রতি আমাদের যে অপরিসীম সম্মান তা এতে প্রতিফলিত হয়। স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত উত্তরণের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, বন্ধু হিসেবে আমরা এজন্য গর্বিত বোধ করি। আমরা আপনাদের অভাবনীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জয়শঙ্কর বলেন, আপনাদের এই গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকীগুলো উপলক্ষে আমি বাংলাদেশের সমস্ত বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আপনাদের সকল স্বপ্ন সত্যি হোক এবং আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, ভারত সর্বদা নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে আপনাদের পাশে থাকবে। এ বছরের ২৬শে জানুয়ারি আমাদের গণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে আপনাদের অংশগ্রহণ আমাদের অভিন্ন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে। এটি আমাদের গভীর সংহতিরও একটি অভিব্যক্তি যা আমাদের সম্পর্ককে সর্বদা দিক নির্দেশনা দেবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত