কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আজ থেকে ১২টি বছর

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যখনই লিখতে যাই তখনই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ভাবি, আর কি লিখবো আমি? এই ১২ বছরে কিছুই বাকি নেই বলার। হ্যাঁ তোমাদের কাছে ১২ বছর, আমাদের কাছে একেকটা দিন যেন সেই ১২ বছর। কেটে যাচ্ছে না তা বলা ভুল হবে, কেননা সময় চলে যাচ্ছে তার নিজস্ব গতিতে এবং প্রতিদিনের রুটিন বাঁধা কাজ, সেও চলছে তার নিজস্ব নিয়মে। তবে সময়ের ব্যবধানে নিয়মগুলো পাল্টে যাচ্ছে অনেকাংশে। স্মৃতিগুলো ধূসর হয়ে ভাসে চোখ নামক ক্যামেরার সামনে। আর মনের ক্যামেরা তো প্রতিনিয়ত স্মৃতির পাতাগুলো মনে করিয়ে দেয় স্পষ্টভাবে যা দেখার জন্য মনটাই যথেষ্ট। মাঝে মাঝে মনে হয় এ মনটাও যদি শহীদ হয়ে যেত, সেই ২৫শে ফেব্রুয়ারির সাথে। তাহলে বোধহয় শান্তি হতো আমাদের। আবার কখনো বা মনে হয় স্মৃতি শক্তিটা যদি হারিয়ে যেত, কি-ই বা ক্ষতি হতো তাতে, স্মৃতিও মনে পড়তো না, কষ্টও হতো না। সুন্দর সময়গুলো, আনন্দের সময়গুলো খুব দ্রুত চলে যায় আর কষ্টের সময়গুলো শেষ হতে চায় না। এই তো কিছুদিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলাম। অনেক কাজের শেষে অক্সিজেন নেয়ার জন্য, বান্দরবান। যখন বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, কি যেন কি কষ্টগুলো সেই সৌন্দর্যের ভিতরে ভাসছিল। আরে এ তো আমার পুরনো জায়গা যা সম্পর্কে আমি হয়তো অন্যদের চাইতেও বেশি জানি এবং উপভোগ করেছি। ২১ জনের গ্রুপে বাকিরা নিজেদের মতো নিজেরা উপভোগ করছিল। সেই নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক। আর আমি কেন জানি বেশির ভাগ সময় ওদের সঙ্গে তাল মিলাতে চাইলেও পারছিলাম না। নিজের কাছে খুব বেমানান লাগছিল তখন কেননা ওই স্মৃতি নামক জিনিসগুলো আমার ভিতরটা শুকনো পাতার মতো পায়ের নিচে মুড়িয়ে দিচ্ছিল আর সেই খচ্খচ্ শব্দ ভিতরটাকে যেন ঝাঁঝরা করে দিচ্ছিল সেইগুলির মতো যা আমার, আমাদের স্বামীদের ইউনিফর্ম ভেদ করে ছিদ্র হয়ে চলে গিয়েছিল ...সেই বীর সৈন্যদের বুকের ভিতর। সেই নীলগিরি আর আজকের নীলগিরির মাঝে কতই না  তফাৎ যেমনি সৌন্দর্যের দিক থেকে তেমনি বাহ্যিক দিক থেকে। মনের অজান্তে এক বন্ধু হঠাৎ বলেই ফেললো, রেস্টরুমে যাওয়া প্রয়োজন, তুই তো সেনাবাহিনীরই মানুষ, বল না আমরা রেস্টরুমে যেতে চাই। তখন সেই সামনে দাঁড়ানো সৈনিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। হয়তো ভাবছে উনি কে, কিন্ত বলতে পারলাম না আমি কে, বা এই জায়গায় আমার পূর্ব-অভিজ্ঞতা। সাহস করে বলতে পারিনি নিজের মনের কথাগুলো। এখন তো আমার পাবলিক রেস্টরুমে যাওয়ার কথা, নিজের মনকে বুঝালাম, জীবন যেখানে যেমন। তা নিয়ে আমার কখনো কোনো অভিযোগ ছিল না, কেননা আমি সাহসী নারী। স্বামী চাকরিতে থাকা অবস্থায় যখন যতটুকু বরাদ্দ তা নিতেই সন্তুষ্ট ছিলাম আমি। অতি চাওয়া পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই সেখানে। মোটা চাল আর আর্মির রেশন ছিল খুবই প্রিয় জিনিস। মাস শেষ হওয়ার আগেই অর্থ শেষ এটাই স্বাভাবিক ছিল। ভালোই তো ছিলাম এসব নিয়ে, কোনো অভিযোগ বা দুঃখ তো ছিল না আমাদের। কোনো প্রতিবাদই করিনি আমরা। তাহলে এটাই কি আমাদের দোষ!! সুখে ছিলাম অল্পতে, তাই। কি দোষ করেছিলাম আমরা? কেন এই নৃশংস হত্যাকা-? আমি জানি এ রকম আরো ১২ বছর পার হয়ে গেলেও জানতে পারবোনা, তার উত্তর। এটাই সত্য। বাকিটা জীবন এভাবেই কাটিয়ে দেবো, ফেলে আসা বিভিন্ন স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা নিয়ে। কিছুক্ষণের জন্য কোথায় যেন হারিয়ে গিয়ে ছিলাম, হঠাৎ এক বন্ধু এসে বললো, চল যাবার সময় হয়ে গেছে, লাঞ্চ করবো। এখানেই শেষ নয়, আসার পথে দেখছিলাম, ওহ্ আমি তো সেই আকাক্সিক্ষত চান্দের গাড়িতে বসা। যা ছিল এক সময়ের স্বপ্ন, চান্দের গাড়িতে বসা... সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল। দেখলাম আমি তো এক সময় এখানেই ছিলাম। ভাবলাম হ্যাঁ, ১৯৯৬ সালে স্বামী ছিল এখানকার ব্রিগেড মেজর। সারাটা পথ যে কীভাবে পার করেছি, জানি না। যারা আমার খুব কাছের  বন্ধু, তারা ব্যাপারটা উপলব্ধি করে আমার ভালো লাগার বিষয়গুলো নিয়ে গল্প শুরু করলো। কিন্ত  এই যে মন, তুমি এত কঠিন যে  তুমি মানতে চাওনা এই কঠিন সত্য। সাইরো, নীলগিরি, নীলাচল আর চিম্বুককে বিদায় জানিয়ে, আরো কিছু স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম আমার গন্তব্যে। অক্সিজেন নিয়ে এসে, আবার পুরোদমে কাজ শুরু করার প্রত্যাশার মনোবৃত্তি নিয়ে। হ্যাঁ, আমিই সেই লবী রহমান যাকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখে সবাই বলে, সদা হাস্যোজ্জ্বল লবী রহমান একজন সফল মানুষের অধিকারী। কতটা সফল আমি জানিনা,  সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবো যেইদিন খুঁজে পাবো আমার স্বামীর হত্যাকারীদের আর সেদিনই হবো আমি সফল মানুষ। লেখক: শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের সহধর্মিণী

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে