কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

উপহারের টিকা এলো, এবার প্রয়োগের অপেক্ষা

মানবজমিন প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

উপহার হিসেবে পাঠানো ভারতের ২০ লাখ ডোজ টিকা গতকাল বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি মাসেই ভারত থেকে কেনা আরো ৫০ লাখ ডোজ টিকা ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে। বেক্সিমকোর মাধ্যমে পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ওই টিকা কিনেছে সরকার। ভারত ছাড়াও রাশিয়া, চীনসহ একাধিক রাষ্ট্রের টিকা পাওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন, টিকা বিষয়ক বৈশ্বিক অ্যালায়েন্স কোভ্যাক্সের মাধ্যমেও টিকা আসছে। উপহারের টিকা দেশে আসায় এখন অপেক্ষা তা প্রয়োগের। গতকাল সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ বিমানে সিরামের  তৈরি কোভিশিল্ড-এর ২০ লাখ ডোজ টিকা ঢাকায় আসে। বিমানবন্দর থেকে তা নিয়ে রাখা হয় কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের হিমাগারে। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় উপহারের ভ্যাকসিন ভারতের তরফে হস্তান্তর করেন হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। উপহার গ্রহণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। উপহার গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, টিকা পাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তাই এ নিয়ে যাতে দেশবাসী কোনো ধরনের গুজবে কান না দেয় সেই অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। গতকাল একাধিক অনুষ্ঠানে টিকা নিয়ে গুজব আর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা ছাড়াও টিকাপ্রাপ্তিতে স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন আমরা খুব ভালোভাবে দেবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক আমাদের এ বিষয়ে গাইড করছেন। আপনারা কোনো ধরনের গুজব ও ষড়যন্ত্রে কান দেবেন না। টিকা পাওয়া দরকার এমন একজন লোকও ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম থেকে বাদ পড়বে না। তবে টিকা নিয়ে কি ধরনের গুজব ছড়িয়েছে বা ছড়াচ্ছে, সরকার গুজব ঠেকাতে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে? তা মন্ত্রী খোলাসা করেননি। উপহার হিসেবে পাওয়া ভারতীয় টিকা ঢাকাগামী বিমানে ওঠা থেকে শুরু করে পৌঁছানো, হস্তান্তর এবং ফ্রিজিং বা স্টোরেজ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে ব্যাপক আগ্রহ ছিল মানুষের। ভারতের টিকা উপহার হাসিনা-মোদি দৃঢ় সম্পর্কের নিদর্শন: এদিকে ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পাঠানোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার দৃঢ় সম্পর্ক ও শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা গ্রহণ করে মন্ত্রী দিনটিকে ‘এক ঐতিহাসিক দিন’ বলে উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, তারা (হাসিনা ও মোদি) যে দৃঢ় সম্পর্ক অর্জন করেছেন, এটি সেই বন্ধনের নিদর্শন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে ভারত সরকারের পাঠানো উপহার তুলে দেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। এ সময় হস্তান্তর মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, এমপি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমদিন থেকেই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন। ভারত থেকে প্রাপ্ত উপহারকে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার নিদর্শন উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব বিশ্বের প্রতিটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক উন্নত দেশ এখনো টিকা নিতে পারেনি এবং বিশ্বে প্রথম টিকা নেয়া দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম বলে দাবি করেন মন্ত্রী। সে সময় উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আজকে প্রমাণ হলো বন্ধু রাষ্ট্র একে অপরকে সাহায্য করবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেভাবে তারা সাহায্য করেছিল আজকে মহামারির সময়েও ওনারা আমাদের টিকা দিয়ে সাহায্য করলেন। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত বাণিজ্যিক চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি, সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে টিকা নিয়ে যে চুক্তি তা যেভাবে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা সেভাবে বাস্তবায়ন হবে। আমি ভারত সরকারকে অনুরোধ করবো, এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটাও যেন উনারা দেখেন। যাতে আমরা ভ্যাকসিন পাই, সময়মতো। সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আগামী ৬ মাসে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন আসার কথা। এই মাসে আরো ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। যদি আমরা পেয়ে যাই, তাহলে ৭০ লাখ ভ্যাকসিন আমাদের হাতে থাকবে। ৩৫ লাখ লোককে এই ভ্যাকসিন আমরা দিতে পারবো।প্রতিবেশী প্রথম নীতির আওতায় ভারতের বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছরের ১৭ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ বৈঠকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারতে টিকা উৎপাদন করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে দেয়া হবে। সেই অঙ্গীকার রক্ষা এবং বাড়তি হিসেবে উপহার পাঠানোর জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রত্যেকে ভারতের জনগণ এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানান।বাংলাদেশ অগ্রাধিকার: জয়শঙ্করএদিকে বাংলাদেশে টিকা পাঠানোর আগ মুহূর্তে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর হ্যাসট্যাগে ‘ভ্যাকসিনমৈত্রী’ উল্লেখ করে এক টুইট বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের অনুমোদিত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পুনরায় নিশ্চিত হলো। আর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেয়া প্রতিশ্রুতির অংশ এবং ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতির অংশ। পারস্পরিক বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং ভারত এক সঙ্গে কোভিড-১৯ এর মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়বে বলেও উল্লেখ করেন ভারতীয় দূত। ২৭শে জানুয়ারি প্রয়োগ শুরু, যেভাবে দেয়া হবে ভ্যাকসিনটিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হতে পারে ২৭শে জানুয়ারি। এর সপ্তাহখানেক পর্যবেক্ষণের পর ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে গণটিকাদান প্রয়োগ শুরু হবে। তাই সারা দেশের সিভিল সার্জনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, কেনা টিকার প্রথম চালান ও উপহারের টিকা মিলিয়ে প্রথম মাসে আসবে ৭০ লাখ ডোজ। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ হিসেবে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চলতি মাসের ২৭ অথবা ২৮শে জানুয়ারি ঢাকায় প্রথমে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে এই টিকা দেয়া হবে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে। এরপর টিকা দেয়া হবে সারা দেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন (টিকাদান) কর্মসূচির উদ্বোধন হবে। প্রথমদিনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অর্থাৎ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ২০ থেকে ২৫ জন নাগরিককে টিকা দেয়া হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনের পরবর্তী দিনে ড্রাই রান অর্থাৎ পরীক্ষামূলক হিসেবে চারটি হাসপাতাল ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব আরো জানান, আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে উপজেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। এখন শুধু সরকারি হাসপাতালে এই টিকা দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে এখনই টিকা দেয়া হবে না।  সূত্র মতে,  এ পর্যায়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া হচ্ছে না। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ৫ হাজার ৩০৮টি  কেন্দ্রে দেয়া হবে। সবচেয়ে বেশি কেন্দ্র ঢাকায় ৩০০টি। ৭ হাজার ৩৪৪টি দল টিকা প্রদান করবে। প্রতিটি দলে থাকছেন ৬ জন সদস্য। এদের ২ জন (নার্স, স্যাকমো)। বাকিরা স্বেচ্ছা সেবকের দায়িত্ব পালন করবেন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে নিবন্ধন, ভ্যাকসিন কার্ড, সম্মতিপত্র, ভ্যাকসিন সনদ প্রদানে আইসিটি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মাধ্যমে ‘সুরক্ষা ওয়েবসাইট’ তৈরি করা হয়েছে। ভ্যাকসিন নিতে হলে নাগরিকদের অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর যথাযথ নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা যাবে। একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে ভ্যাকসিন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম  জানান,  করোনার টিকাদানের জন্য সুরক্ষা অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ২৩শে জানুয়ারি শেষ হবে। এরপর অ্যাপসটি ২৫শে জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এসএমএস-এর মাধ্যমে মানুুষকে কেন্দ্র ও সময় জানানো হবে। এদিকে, প্রথমে আগ্রহী ব্যক্তিকে স্মার্ট মোবাইল ফোনে, কম্পিউটার, ল্যাপটপ যেকোনো একটি ডিভাইস থেকে করোনা ভ্যাকসিনের অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। এরপর নাম, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পেশাসহ বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। অ্যাপে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ডিজিটাল কার্ড পাওয়া যাবে। করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণকারীকে এই কার্ডটি নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে ভ্যাকসিন কেন্দ্রে আসতে হবে। নিবন্ধন করতে একজন ব্যক্তির ৫ থেকে ৬ মিনিট সময় লাগবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত