কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জামিনে এসে কেডিএসের নির্মম কাহিনী শুনালেন মুনির

মানবজমিন প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

২০০৭ সালে ব্যাংক অব আমেরিকা ফ্লোরিডার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে কেডিএস গ্রুপে যোগ দিয়েছিলাম। প্রায় ১১ বছর রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে কেডিএসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কেওয়াই সিআর কয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং কেওয়াই স্টিল লিমিটেডকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ঢেউটিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছি। বিনিময়ে জুটেছে ৯ মাসে ২৮টি মামলা এবং এক বছরের জেল। সেই সঙ্গে ৬০০ কোটি টাকা মেরে দেওয়ার অপবাদ। সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কেডিএস গ্রুপের করা বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে গতকাল দুপুরে নিজের স্বপক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন কেডিএস গ্রুপের মালিকানাধীন কেওয়াই স্টিল মিলের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মুনির হোসেন খান। বলেছেন,  কেডিএস গ্রুপের নির্মম অত্যাচার, নিজের ও পরিবারের করুণ কাহিনী। মুনির খান বলেন, ২০১৮ সালের ১১ই এপ্রিল কোমপানির ডিএমডি ও কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে বিদেশি নাগরিককে খুন করে যাবজ্জীবন সাজা খাটা ইয়াছিন রহমান টিটুর কর্তৃক মারধরের শিকার হয়ে চাকরি ছাড়ার পর তিনি তাদের রোষানলে পড়েন। চাকরি ছাড়ার ২০ মাস পর ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ৯ মাসে ২৬টি মামলা ক্রিমিনাল ও দুইটি সিভিল মিথ্যা মামলা করেছে। আইনের অপব্যবহার করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে একেক সময় একেক ধরনের কুৎসাও রটাচ্ছে যা বিভ্রান্তিমূলক ও মানহানিকর। এরপর গত ২৮শে নভেম্বর কেডিএস গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কে ওয়াই স্টিলের পক্ষে তাদের চিফ অপারেশন অফিসার জাবির হোসাইন সংবাদ সম্মেলন করে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। যা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ রেখে গেলাম।  মুনির খান বলেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম মামলা ছিল গাড়ি চুরি ও হত্যা চেষ্টা। বায়েজিদ থানায় দায়েরকৃত মামলাটিতে যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে সে সময় তিনি ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ছিলেন। ওই মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর একবছর জেলে ছিলেন। সমপ্রতি মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশ। অর্থাৎ অভিযোগ মিথ্যা। তাদের আরেকটি অভিযোগ হল এইচআর কয়েল আমদানিতে গোপন চুক্তির মাধ্যমে ৬০০ কোটি টাকা কমিশন খাওয়া। যা হাস্যকর। এত টাকা কোনো ব্যক্তির কাছে থাকলে তা কোনো না কোনো সরকারি সংস্থার চোখে পড়বেই। দেশে কিংবা বিদেশে আমার এবং আমার পরিবারের এই ধরনের কোনো সমপত্তি নেই। তাছাড়া অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি করলে কাস্টমস এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কেওয়াই স্টিলকে টাকা পাচারের অভিযোগে অনেক আগেই ব্যবস্থা নিত। মুনির খান দাবি করেছেন, আমার বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্রের মূলে কেওয়াই স্টিলের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) জাবির হোসাইন। তিনি বিভিন্ন জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেই কেডিএস কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করে নিজে ফায়দা লুটছে। কারণ কমিশন খাওয়ার অভিযোগ করলেও ওই কমিশন কোন ব্যাংকের মাধ্যমে খেলাম বা কোথায় রাখলাম তার কোন তথ্য নেই। তিনি যে চুক্তি দেখাচ্ছেন তা জাল এবং অসমপূর্ণ। কে ওয়াই স্টিলের সংবাদ সম্মেলনে জাবির হোসাইন একটি অনলাইন মার্কেটিং কোমপানি থেকে বাজারমূল্যের বেশি দামে পণ্য কেনার অভিযোগ তুলেছেন। বাস্তবে আমার কাছে সে সুযোগ ছিল না। কারণ কেডিএসের ব্যাংক একাউন্ট থেকে সরাসরি রপ্তানিকারককে টাকা দেয়া হয়েছে এলসির মাধ্যমে। অন্যদিকে যে বাজারমূল্য প্রদর্শন করছে তাও সঠিক নয়। অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সারাবিশ্বের স্ট্যান্ডার্ড এইচ আর কয়েলের একটি সম্ভাব্য বাজারমূল্য দিয়ে থাকে। কিন্তু কিনতে গেলে গুণগত মান, থিকনেস এবং দেশের দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় দামের কম-বেশি হয়। এর সাথে ভাড়া ও অন্যান্য খরচও যোগ হয়। তাই যে সংস্থাটি বাজারমূল্য দিয়ে থাকে তাদের ওয়েবসাইটেই বিষয়টি লেখা থাকে যে মূল্য তারা প্রদর্শন করছেন তা শুধু মার্কেট সমপর্কে একটা ধারণা দেওয়া। প্রকৃত মূল্য ভিন্ন হতে পারে। অথচ জাবির হোসাইন ওই ওয়েবসাইটের মূল্য দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে এত বড় একটি মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। মুনির খান অভিযোগ করে বলেন, জাবির হোসাইন কিছু ভুয়া চুক্তিপত্র, আমার স্বাক্ষর এবং বিদেশি স্বনামধন্য কোমপানির স্বাক্ষর জাল করে ফটোকপির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা দিয়ে হয়রানি এবং নাজেহাল করেছে। একটি মামলা থেকে জামিন হওয়ার আগেই আরেকটি মামলা দিয়ে আমাকে আটক রাখছে। মুনির খান বলেন, কেডিএস তার মাসিক বেতন, সন্তানদের লেখাপড়া, বিদেশ ভ্রমণ এবং ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। বেতন কোথাও দুই লাখ টাকা, আবার কোথাও তিন লাখ টাকা উল্লেখ করেছে। এর কোনোটাই সত্য নয়। অন্যদিকে তারা প্রশ্ন তুলেছে, আমার মেয়ে কিভাবে ব্যয়বহুল ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে লেখাপড়া করছে। অথচ আমার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ কেডিএস কর্তৃপক্ষই বহন করেছে। এই সকল কিছুরই তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে। তিনি বলেন, আমদানিকৃত মালামাল বন্দর থেকে ক্লিয়ারিং করে কেডিএসেরই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে একই পণ্য খালাস করছে। দেশের প্রখ্যাত অডিট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠানের অডিট হতো। কোন ধরনের আর্থিক অনিয়ম ঘটে থাকলে অডিট আপত্তি আসত। তাছাড়া মাসিক অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কোমপানির গ্রুপ অডিট এবং সিএফও তৈরি করতেন এবং তা তাদের কাছেও যেত। দীর্ঘ ১১ বছরে আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ কখনও আসেনি। বরং সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ৩০০ কোটি টাকার মূলধনের কোমপানিকে ১৩০০ কোটি টাকার কোমপানিতে পরিণত করেছি আমি। কেডিএস এখন নতুনভাবে হয়রানি করছে এমন অভিযোগ করে মুনির খান বলেন, তার বাবা চট্টগ্রাম বন্দরের একজন অবসরপ্রাপ্ত হারবার মাস্টার। বড়পুল এলাকায় তার বাবা ইসাবেলা টাওয়ার নামে একটি ভবন করেছেন, তাও তিনি কে ওয়াই স্টিলে যোগদানের আগে। তিনি তার দীর্ঘ ১৭ বছর আমেরিকার জীবনে অনেকবার বাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ও করেছেন। তার প্রমাণাদিও কাছে উল্লেখ করে মুনির খান বলেন, কেডিএস সমপ্রতি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে তার পরিবার থেকে কেউ যাতে কোন স্থাবর অস্থাবর সমপত্তি না কেনে যা সমপূর্ণ মানহানিকর এবং বেআইনি। কারণ এ সংক্রান্ত আদালতের কোনো নির্দেশনা নেই। মুনির হোসেন খান বলেন, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আমার স্ত্রী বড় বড় শপিং মল থেকে কেনাকাটা করেছে এমন অভিযোগও তারা করেছেন। বাস্তবতা হল কোমপানি আমাকে একটি ক্রেডিট কার্ড দিয়েছে ব্যবহার করার জন্য। এই কার্ড দিয়ে অফিসের জন্য অনেক সময় খরচ করেছি। মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত কোনো খরচ করলে সেটা অফিস আমার বেতন থেকে কেটে নিত। বেতন বিল যাচাই করলেই তার সত্যতা মিলবে। আমার ব্যাংক একাউন্টের তথ্যপ্রমাণ দিলেই তা বিস্তারিত প্রমাণিত হবে। অফিসের টাকায় বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। যা সমপূর্ণ অবাস্তব একটি অভিযোগ। এভাবে নানা মিথ্যা মামলা দিয়ে আমি এবং আমার পরিবারকে চরম সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে কেডিএস গ্রুপ। আপনাদের মাধ্যমে আমি কেডিএস কর্তৃপক্ষের কাছে এই আকুতি জানাই আমাকে যেন মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেন। আমি আমার পরিবার নিয়ে শান্তিতে বাঁচতে চাই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে